এক্সপ্রেসওয়ের যুগে বাংলাদেশ
প্রকাশের সময় : 2020-09-17 16:43:51 | প্রকাশক : Administration
রাজন ভট্টাচার্যঃ কোথাও থামবে না গাড়ি। নেই ট্রাফিক সিগন্যাল বা ইন্টার-ক্রসিংয়ের ঝামেলা। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া যানবাহন একই গতিতে পদ্মা সেতু হয়ে পৌঁছাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। এতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ছোট-বড় যানের জন্য আছে আলাদা আলাদা লেন। লেন ধরে একদিকেই সব গাড়ির চলাচল। ক্রসিং এড়াতে রয়েছে ওভারপাস। আন্ডারপাস সহ আধুনিক ট্রাফিক সুবিধার সবকিছুই। রয়েছে ইন্টারচেঞ্জের সুবিধাও। এমন পরিকল্পনায় নির্মাণ এবং উদ্বোধন করা হয়েছে ঢাকা-ভাঙ্গা ছয় লেনের মহাসড়ক। এর মধ্য দিয়ে আধুনিক সড়ক যোগাযোগে আরেকধাপ অগ্রগতি হলো। তেমনি এক্সপ্রেসওয়ে যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।
তখন ঢাকা থেকে মাওয়া যেতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টার কম। যেখানে লাগত দুই ঘণ্টার বেশি। আর ভাঙ্গা যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। সব মিলিয়ে চার ঘণ্টার রাস্তা মাত্র ৪৫ মিনিটে সহজেই অতিক্রম করা সম্ভব হবে। তবে এই মুহূর্তে মাওয়া পর্যন্ত যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে বাকি সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।
সব মিলিয়ে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে এই সড়কের পুরোপুরি সুফল পেতে শুরু করবে অন্তত ২২ জেলার মানুষ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে শুরু হচ্ছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাই সড়কটি উদ্বোধনের খবরে দক্ষিণাঞ্চলে বইছে আনন্দের বন্যা। সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গোটা দক্ষিণের মানুষ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু হলে তার সর্বোচ্চ সুবিধা যাতে দেশের মানুষ পান, সেজন্য আধুনিক মহাসড়কের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে তৈরি করা হয়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এটি সত্যিকার অর্থে অসাধারণ। নিরাপদ সড়ক বলতে যাকে বোঝায় এটি তাই। কোন যানজট ছাড়াই আমরা গন্তব্যে যেতে পারবো। গুলিস্তান থেকে একটানে এখন মাওয়া যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
এই সড়ক নির্মাণে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এখানে রয়েছে ৪৪ কালভার্ট, ১৯ আন্ডারপাস, চারটি বড় সেতু, ২৫ ছোট সেতু, পাঁচটি ফ্লাইওভার, তিনটি ইন্টার চেইঞ্জসহ চারটি রেলওয়ে ওভারপাস রয়েছে। সব মিলিয়ে ছোট বড় ৩১ সেতু আছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সব মিলিয়ে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। আমার মনে হয়, ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককেও হার মানাবে। এই সড়ক বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেন নয়, দুদিকে পাঁচ মিটার করে সার্ভিস লেনসহ এই এক্সপ্রেসওয়ে ছয় লেনের। এত চমৎকারভাবে এটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল। মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরের অন্তর্ভুক্ত।
৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার, আর পদ্মা সেতুর ওই পাড়ে পানছার থেকে ভাঙ্গা-পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সব মিলিয়ে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বাসিন্দাদের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত সুগম হবে। পদ্মার ওপার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার অংশের কাজ।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষ সরাসরি এই এক্সপ্রেসওয়েতে উপকৃত হবেন। - জনকন্ঠ