চোখ ধাঁধানো বিমানবন্দর সিলেটে
প্রকাশের সময় : 2020-10-28 11:37:39 | প্রকাশক : Administration
সিমেক ডেস্কঃ অনেক আশা ছিল আমাদের বিমানবন্দরটি হবে দেশের সেরা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই আমরা ছিলাম অবহেলিত। সরকার আসে যায় কিন্তু কেউ এখানে উন্নয়ন করে না। অথচ লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সিলেটে আসে লোকজন। অনেকে আমাদের লজ্জা দেন। নামেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অবশেষে বিমানবন্দরটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এতেই আমরা অনেক খুশি।
কথাগুলো বলছিলেন মাইক্রোবাস চালক আবিদুর রহিম। এই সময় তার সঙ্গে যোগ দেন আরও তিনজন চালক। তারাও একই কথা বললেন। নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হওয়ায় সিলেটের লোকজন অনেক খুশি। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টেলিকনফারেন্সে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘিরে বিমানবন্দরসহ পুরো এলাকায় সাজানো হয় বর্ণিল কলেবরে। সবার মধ্যেই ছিল আনন্দের ঝিলিক। এতে সিলেটবাসী খুশিতে আত্মহারা। উন্নতমানের বিমানবন্দর করার উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
ওসমানী বিমানবন্দরটি বিদেশের আদলে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের নতুন টার্মিনাল ভবন হবে। কার্গো ভবন, ফায়ার স্টেশন, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ আরও বেশ কিছু উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রথমপর্যায়ে বিমানবন্দরের উন্নয়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০৯ কোটি ৭৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। তার মধ্যে সরকার অর্থায়ন করছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি ৬৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। আর সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ অর্থায়ন করছে ৬২ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজটি আরও আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বিমানবন্দরটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে সিলেটবাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এটি হবে বিশ্বের অন্যতম একটি বিমানবন্দর। যে কোন বিমান এখানে ওঠানামা করতে পারবে।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মিত হলে নতুন টার্মিনাল ভবন দিয়ে বছরে ২০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী সংবলিত কাঠামোগত ডিজাইন, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা ও স্থাপনাদি এবং দৃষ্টিন্দন উপকরণাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্মিতব্য এই টার্মিনাল দেশী-বিদেশী যাত্রীদের মুগ্ধ করবে।
এ টার্মিনালে ৮টি বিমান একসঙ্গে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে। টার্মিনাল ভবনে থাকবে ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (ডাবলডকিং ২টি, সিঙ্গেল ডকিং ২টি), কনভেয়ার বেল্টসহ ৩৬টি চেক-ইন-কাউন্টার। যার মধ্যে ২টি স্বয়ংক্রিয়, বহির্গামী ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ২৪টি পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, ৬টি এস্কেলেটর, ৯টি লিফট এবং আগমনী যাত্রীদের জন্য ৩টি লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট, ভবনের ফ্লোরে বসবে ইঞ্জিনিয়ারড স্টোন। নতুন টার্মিনালের ১ম তলা আগমনী যাত্রীদের এবং ২য়তলা বহির্গামী যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হবে।
শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে আগত যাত্রী টার্মিনালের চেক-ইন লেভেলে সরাসরি যেতে পারবেন। আবার বিদেশ হতে আগত যাত্রীরা ১ম তলা থেকে বিমানবন্দর ত্যাগ করে সারফেস রোড ব্যবহার করে শহরের যেকোন প্রান্তে যেতে পারবেন। টার্মিনাল অভিমুখী বহির্মুখী সকল যানবাহন চলাচল হবে একমুখী যা বিমানবন্দর অংশকে সম্পূর্ণ যানজট মুক্ত রাখবে।
টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে আরও যে সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তা হলো অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত কার্গো টার্মিনাল, ফায়ার স্টেশন, কন্ট্রোল টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, রক্ষণাবেক্ষণ ভবন, ৬টি উড়োজাহাজ পার্কিং উপযোগী এপ্রোণ, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রসহ ফুয়েল ডিস্ট্রিবিউশন এ্যান্ড হাইড্রেন্ট সিস্টেমসহ আরও অনেক সুবিধা সন্নিবেশিত থাকবে এই নতুন টার্মিনালে। কাজ শেষ হলে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ তথা সিলেটের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশের বিমান সংস্থা এ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আকাশ পথে যাত্রীদের বিশ্বমানের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নের সুবিধা হবে। - সূত্রঃ জনকণ্ঠ