আমাদের ফেসবুক জীবন

প্রকাশের সময় : 2020-10-28 11:43:17 | প্রকাশক : Administration
আমাদের ফেসবুক জীবন

আজহার মাহমুদঃ চোর, ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, গুটিবাজ, নেশাখোর, প্রতারক, মলমপার্টি, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, মাদকব্যবসায়ী, জুয়াড়ি, বেইমান, মিথ্যাবাদী এবং যত নোংরা মানুষ আছে তারা সবাই কিন্তু ফেসবুক চালায়। ফেসবুকে সবাই বাস্তব, সত্য এবং মনের কথা তুলে ধরে। সততার পোস্ট দেয়। নিজে সৎ তার গান গায়।

আর সেখানে আরও কিছু ভালো-মন্দ মানুষ সহমত, শুভকামনা কিংবা অভিনন্দন লিখে কমেন্ট করে। প্রকৃতপক্ষে কে কতটা ভালো তা ফেসবুকে কখনও বিচার করতে পারবেন না। প্রোফাইলে আল্লাহু লেখা ছবি ঝুলিয়ে সারাদিন ইউটিউবে অশ্লীল ভিডিও দেখা পাবলিককে আপনি কী বলবেন? কীভাবেই বুঝবেন সে মন্দলোক?

আর আমরা এটা বুঝতেও চাই না। যেহেতু সে আল্লাহু লেখা ছবি প্রোফাইলে রেখেছে, সেহেতু সে ধার্মিক, সৎ এবং ভালো মানুষ। আমরা এমনই ভাবি। প্রোফাইল দেখে কিংবা পোস্ট পড়ে এখন খারাপ বলতে পারেন না কাউকে। কারণ আপনি তো খারাপ কিছু দেখছেন না। এই যেমন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদ, সে তো বিভিন্ন টিভিতে মোটিভেশনাল কথাও বলেছে। আবার সেগুলো তার পেইজ এবং আইডিতে শেয়ারও করেছে।

দুয়েক-মাস আগে সে যে একজন ভন্ড প্রতারক তা কি কেউ জানতাম? জানতাম না। এভাবেই আমাদের চারপাশে অসংখ্য ভন্ড, প্রতারক রয়েছে যা আমরা নিজেরাই জানি না। কিন্তু আমরা চোখের পলকেই এসব ভন্ডদের সম্পর্কে না জেনেই তাদের মাথায় তুলে ফেলি। মূল কথা হচ্ছে- আমরা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো, সৎ, ইমানদার, সত্যবাদীর মতো ব্যক্তি।

হক কথাগুলো সবাই ফেসবুকেই বলি। আপনি আরও ভালোভাবে গবেষণা করতে চাইলে আপনার জানাকিছু অসৎ, নোংরা মানুষের ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করুন। আর তাদের প্রোফাইলে ঘুরে আসুন। দেখবেন আপনার সব মনের কথাগুলোই তিনি বলেছেন। পার্থক্য একটাই। তার লেখার সঙ্গে নিজের কোনোদিক থেকেই মিল নেই।

এই যেমন ধরেন এক ব্যাক্তি দিন-রাত দোকান খুলে ব্যবসা করেছে রেডজোনে থাকা লকডাউন এলাকায়। সে একজন স্বেচ্ছাসেবক। দৈনিক কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে ক্যাপশনে লেখে, লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করছি। ব্যাস, কাজ খতম। এবার মানুষ কমেন্টে তাকে দিনে দিনে মহান বানিয়ে দেয়। আসলে সে কতটা মহান তা বলতে পারবে তার আশপাশের মানুষ।

এ ছাড়া আজ থেকে বছরখানিক আগের ঘটনা। আমার এক বন্ধুর পেইজে সামান্য সমস্যা হওয়ায় একজন ভদ্রলোককে এডমিন করেছিল সমস্যার সমাধানে। ভদ্রলোক এডমিন হওয়ার পরই আমার বন্ধুকে পেইজ থেকে বের করে দেয় এবং ব্লক করে দেয় ফেসবুক। ভাবছেন এই লোকটিকে কেন ভদ্রলোক বলছি? কারণ তার প্রোফাইলে ঘুরে এলে তাকে কোনোভাবেই অভদ্র মনে হবে না।

যাই হোক ভদ্রলোকটি ওই পেইজ বিক্রি করবেন এক হাজার টাকা দিয়ে। এ ধরনের একটি পোস্ট তিনি পেইজটিতে করেন। এরপর আমার বন্ধু আমাকে বিষয়টা বলে। আমি তখন তাকে এক হাজার টাকা দিয়ে পেইজ কিনতে বললাম। সে বলেছে আমি যেন কিনে দিই। যদিও এ ধরনের কাজ বিশ্বাস ছাড়া কখনও হয় না। তাই বিশ্বাস করেই সামনে এগোলাম।

ভাবলাম লোকটি হয়তো টাকার জন্য এসব করেছেন। আর আমার বন্ধুরও পেইজটি দরকার। তাই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলি। কথা ফাইনাল করে টাকা পাঠাই। এর পরের ঘটনা আর বলতে ইচ্ছা করছে না। মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে, কতটা প্রতারক হতে পারে সেদিন বুঝলাম। নিজের প্রতি একটু রাগ হচ্ছে। চিনতে পারলামনা একজন প্রতারককে। আর কীভাবেই চিনব। ওই যে বললাম, ফেসবুক দেখে আসলেই বোঝা যায় না কে ভদ্র আর কে অভদ্র।

লোকটার প্রোফাইলের শুরুতেই লেখা আছে, অনেস্টি ইজ দ্যা বেস্ট পলিসি। বুঝলাম মানুষ কতটা সৎ হয়ে প্রতারক হতে পারে। এরকম আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটনা ঘটছে। যার ব্যাক্তিত্ব তার ফেসবুক দেখে বুঝতে পারবেন না। রঙিন এই ফেসবুকে এরকম অহরহ আজব আজব পোস্ট দেখি। যা ফেসবুকের চেয়ে বেশি রঙিন।

আর ফেসবুকের পোস্টগুলো এতটাই রঙিন যে কে ভালো আর কে মন্দ তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। তাই আজ ফেসবুকের রং মেখে সবাই এই জগতে সৎ এবং সত্যবাদী। ধরা খেলে প্রতারক। পরিশেষে বলতে চাই, ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এটা আমাদের সবার প্রয়োজনে ব্যবহার করি। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে কারও ব্যাক্তিত্ব আপনি বুঝতে পারবেন না। তাই যে কোনো পোস্ট, লেখায় মন্তব্য করার আগে ভাববেন। বিষয়টার সঙ্গে মানুষটার কতটা যায়। - যায়যায়দিন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com