মনের ভিতর মনের কথা

প্রকাশের সময় : 2020-11-11 15:54:36 | প্রকাশক : Administration
মনের ভিতর মনের কথা

তাপিতা সাথীঃ পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার অদ্ভুত এক সৃষ্টির নাম “মানুষের মন”। মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে। কিন্তু মানুষ কি চাইলেই মনের সব কথা ব্যক্ত করতে পারে? মোটেই পারেনা। সব মানুষেরই মনের এক কোণে না বলা অনেক কথা জমা হয়ে থাকে। সমাজ, পরিবেশ-পরিস্থিতি, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে মনের ঐ জমানো কথাগুলো কখনোই বলা হয়না।

একটা বিষয় কি কখনো ভেবে দেখেছেন? মানুষের মনের কথা যদি সবাই বুঝে বা শুনে ফেলতো, তাহলে পৃথিবীতেই কেয়ামত হয়ে যেত। কারো সাথে কারোর সম্পর্ক থাকতো না। মারামারি -কাটাকাটি লেগেই থাকতো। মনের কথা অন্য কেউ জানবে না এটাই সৃষ্টির এক অনবদ্য রহস্য। তবে আমরা বিভিন্ন সময় অনুমান করে বলি- ওর মনের মধ্যে এটা চলছে। এগুলো নিতান্তই অনুমান, নিশ্চয়তা নয়।

ইচ্ছা-অনিচ্ছার সংমিশ্রনে আমাদের জীবন। মানুষ তার মনের ভালোলাগা, না লাগাকে সব সময় প্রাধান্য দিয়ে চলতে পারেনা। জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে চলতে হয়। হয়তো এই অনিচ্ছাকে মেনে না নিতে পারলে জীবনকে টানা মুশকিল হয়ে যাবে। তবে মানুষ তার নিজের ইচ্ছেমত কিছু করতে পারলে মনের মধ্যে খুশি ও আত্মতৃপ্তির ঢেউ বয়ে যায়।

আজব এই পৃথিবীতে হরেক রকম মানুষের হরেক রকম মন। মনে মনে মিল হওয়াটা খুব কঠিন। তবে আংশিক মিল হওয়ার কারনে সম্পর্কগুলো চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একটা কথাই মনে হচ্ছে, মানুষের সাথে মানুষের মনের মিল কমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে পরিবার ভাঙন, আত্মহত্যা, ডিভোর্স তথা মানুষে মানুষে পারস্পারিক সম্পর্ক।

আজকাল মানুষের মনের কথা বলার সময়-সুযোগ নেই বললেই চলে। মনের কথা বলার বা শোনার মানুষই বা কোথায়! মানুষ এখন মনের কথা কাউকে বলতেও চায় না। নেটওয়ার্কের দুনিয়ায় একখানা স্মার্ট মোবাইল থাকলেই তো চলে! এই যুগে সম্পর্ক হতে সময় লাগেনা। আবার ভাঙতেও সময় লাগে না। মানুষগুলোও কেমন যেন মোবাইলের মতই সস্তা হয়ে গেছে!

যারা শহুরে জীবন-যাপন করেন তাদের তো কথাই নেই। জীবনটা যেন পুরোই যান্ত্রিকতার ছকে বাঁধা। বেশিরভাগ মানুষ চাকরিজীবী। যারা চাকরি করেন না তারাও ব্যস্ত থাকেন তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে। আজকাল কারোর বাসায় বেড়াতে গেলে আগে জেনে নিতে হয় তারা বাসায় থাকবেন নাকি বাইরে কোন প্রোগামে যাবেন। আবার কোন কোন সময় বাসায় থাকেন তারা। কিন্তু মেহমানদারির ভয়ে বলেন বাসায় থাকবো না। মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষের আন্তরিকতার সীমাহীন ঘাটতি হয়ে গেছে। আবার মনে হয় ব্যস্ততার জন্য মানুষ দিন দিন এরকম হয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষই এখন আর আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেড়াতে গিয়ে মজা পান না। দর্শনীয় স্থান, পার্ক, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি জায়গায় সময় অতিবাহিত করতেই পছন্দ করেন। তবে দুই সময়ে মোটামুটি সব আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হয়। একঃ কেউ মারা গেলে, দুইঃ বিয়ে বাড়িতে। তাও যদি সময় সুযোগ মিলে।

মনে মনে একটা ধারনা ছিল, যারা ব্যস্ত সময় পার করেন তারা হয়তো অন্য মানুষদের নিয়ে ভাবার সময় পাননা। কিন্তু বাস্তবে আসলে অন্যকিছু লক্ষ্য করলাম। সঠিক, সৎ ও পবিত্র চিন্তাধারার মানুষগুলোর ভাবনা ইতিবাচক ও মঙ্গলকর হয়ে থাকে। যেমন ধরেন- এক আত্মীয় বা পরিচিত খেয়ে-পরে পরিবার নিয়ে ভালো আছেন, এটা দেখে সুখ পান তারা। অন্যদিকে, হিংসুটে নেতিবাচক চিন্তাধারার মানুষগুলো ঠিক এই পরিস্থিতিতে ভাববে- ওরা কেন এত সুখে আছে, ওদের তো খুব বেশি নেই তারপরেও কেন এত সুখ, আমার তো কত আছে তাও সুখ নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসলে গায়ে পরে ক্ষতি করা মানুষগুলো মানষিকভাবে অসুস্থ। এরা অন্যের সুখ দেখে অসুস্থ্য হয়ে পরে। নিজেদের সুখ থাকলেও সেটাকে তারা দেখতে পায়না। এরা সারাক্ষণ মানসিক যন্ত্রনায় ভোগে অন্যকে নিয়ে ভেবে। আমাদের মধ্যে যে মানুষগুলো অন্যের সুখ দেখে খুশি হতে পারে তারা সত্যিই খুব ভাগ্যবান। ক্ষনস্থায়ী এই পৃথিবীতে অন্যের ক্ষতি সাধনের কারণ হয়ে কি লাভ সেটা আমার বোধগম্য নয়।

কাজ করুন। নিজের ও আপন মানুষদের প্রতি য যত্নশীল হন। নিজের সত্ত্বাকে দিনে দিনে মজবুত করে তুলুন। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন। সময়কে গুরুত্ত্ব দিন। মা-বাবাকে সময় দিন। জীবনের নেতিবাচক লোকগুলো থেকে বিরত থাকুন। সামর্থ্য থাকলে মানুষের পাশে দাঁড়ান। অযথা কেউ বিরক্ত করলে তাকে ইগনর করুন। যাচাইকৃত ভালোবাসার মানুষগুলোকে আরো ভালোবাসুন। মনটাকে মাঝে মাঝে প্রজাপতির মত উড়তে দিন। পরচর্চা থেকে বিরত থাকুন। প্রার্থনা করুন তাঁর উদ্দেশ্যে, যে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চিত ভালো থাকবেন আপনি।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com