করোনা দিনের ডায়েরি...

প্রকাশের সময় : 2020-11-11 16:08:19 | প্রকাশক : Administration
করোনা দিনের ডায়েরি...

৬ষ্ঠ পর্ব

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন

প্রতিদিন ভোর হয়। কিন্তু সে ভোর সূর্য্যের হাসিমাখা ভোর নয়। করোনা যুগের ভোর। দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সয়ে গেছে। করোনা যুগে প্রবাসের ভোর আর ভাল লাগে না। বিদেশ বিভূঁইয়ে প্রবাসে থাকলেও মন পরে থাকে দেশে। দেশের খবরের জন্যে সদা উদগ্রীব থাকি। তবে দেশী টিভির পর্দায় চোখ রাখি না। চোখ রাখতে ইচ্ছে করে না। এসব চ্যানেলে সংবাদ প্রতিবেদকের খুবই নিম্মমানের সংবাদ বর্ণনা দেখতেও রুচিতে বাঁধে।

আতেলদের টকশো দেখা ছেড়েছি বহু আগে। এখন খবর দেখাও ছাড়তে হবে। এত্ত এত্ত চ্যানেল দেশে। অথচ সেই অনুপাতে সংবাদকর্মী তৈরী হয়নি। অথচ সেই কর্মীরা দেশ বিদেশের সব খবরের যোগান দিচ্ছে। এবং দেশী তরতাজা খবরের জন্য আমরা এইসব দেশি নিউজ চ্যানেলগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকি। দুঃখজনক হলেও সত্যি চ্যানেলগুলোর মাঠের সংবাদদাতাদের কাজ বেশিরভাগই হতাশাজনক। অনর্গল কথা বলে, শব্দচয়ন ভুল কিংবা উল্টাপাল্টা। এ্যাঁ আঁ করে বেহুদা সময় নষ্ট করে।

একই কথা বলে বারবার। হুদাই বলে। খুবই বিরক্তিকর। একটা বিষয় লক্ষণীয়। খবর শুরু হলে দেখা যায়, নিউজরুমে একজন সংবাদ পাঠ করছেন। তারপর তিনি সংযোগ দিলেন মাঠে। মাঠের সংবাদদাতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। কিছুটা সময় নিয়ে বুঝলেন তাকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। তারপর তিনি বললেন। বলা শেষে এবার তার লাইভ ইন্টারভিউ নেয়া শুরু। বলা কথা আবারও তিনি রিপিট করলেন। মানে একটা খবর তিনবার শোনা হলো।

সাথে একঘেঁয়ে বিজ্ঞাপন বিরতি তো আছেই। তাও বিজ্ঞাপনের ভ্যারাইটিজ থাকলেও কথা ছিল। একটি বিরতিতে একই বিজ্ঞাপন বারবার দেখানো হয়। এভাবে ২০ মিনিটের সংবাদ টেনে টেনে একঘণ্টা বানায়। আর মাঠ প্রতিবেদনে সংযোগ দিলে তো কথাই নেই। দেশে কি চটপটে, লেখাপড়া ও শুদ্ধ উচ্চারণ জানা ছেলেমেয়ের আকাল পড়েছে? সংবাদ পরিবেশনা কি আরও ভালো করা যায় না? দেশের বাইরের অনেক নিউজ চ্যানেলের কাছ থেকে আমরা কি কিছুই শিখতে পারি না?

শিখবো কি? খেলতে খেলতেই তো আমাদের জনম সারা। গার্মেন্টস সেক্টরে কি খেলাটাই না শুরু হয়েছে। খেলার উদ্দেশ্য পরিস্কার। এটা তালবাহানা খেলা। যে খেলার মূল লক্ষ্য তালবাহানা করে করে শ্রমিকদের বেতন সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া। শুরুটা করেছে ঢাকায় শ্রমিকদের ডেকে এনে। জানা কথা, সরকার এলাউ করবে না। ওদের ফিরিয়ে দেবে। করেছেও তাই। যেই না ফিরিয়ে দিয়েছে অমনি চাইলো প্রণোদনা। এটাই বাহানা। প্রণোদনা চাইবার বাহানা। প্রথমে প্রণোদনা আদায় করবে। তারপর পরিস্থিতি বুঝে কয়েকটা দিন দেখে কারখানা লে-অফে যাবে। মানে গাছের উপরেরটাও খাবে, তলারটাও খাবে।

চলুন, গার্মেন্টস বানিজ্যের বিশ্লেষণটা দেখি। গার্মেন্টস মালিকরা বলছে, তাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলারের। অথচ বছরে মোট পোশাক রপ্তানি হয় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের। তারমানে ৯০% অর্ডার এখনও বহাল আছে। যা থেকে নিশ্চিতভাবে মুনাফা থাকবে। সাথে শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মালিকরা কি এতটাই নিঃস্ব সর্বশান্ত হয়ে গেলেন যে, শ্রমিকের বেতনের জন্য তাদের কাছে কোন টাকাই নাই? তাহলে শ্রমিকদের বেতন বাবদ সরকার পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ কার জন্য দিলো?

এটা লেখার দরকার নেই। সবাই বোঝে। বুঝলেও না বোঝার ভান করে চোখ বন্ধ রেখেছে। অসুবিধা কি? দেশের সবকিছুই তো বন্ধ। গণপরিবহনও বন্ধ। অথচ দলে দলে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ঢাকার পথে ছুটছে পায়ে হেঁটেই। এদের জন্য নেই কোন সামাজিক দূরত্বের থিওরী! নেই কোন কোয়ারেন্টাইনের সবক। মানুষ হলে না এটা প্রযোজ্য হবে। এরা তো সব আধুনিক ক্রীতদাস। মরলে মরুক। মুনাফা হতেই হবে!

পোষাক শিল্প অবশ্যই বাঁচাতে হবে। কিন্তু এভাবে নয়। সবদিক বুঝেশুনে ভেবেচিন্তে উদ্যোগ নিয়ে বাঁচাতে হবে। জীবনের সাথে জীবিকার চিন্তা অবশ্যই করতে হবে। তবে তা কোনভাবেই শুধুমাত্র শ্রমিকের জীবনের বিনিময়ে নয়। করোনায় মৃত্যুর মুখে শুধু শ্রমিকদের জীবনকে ঠেলে দিয়ে নয়। সংবিধানে প্রতিটা নাগরিকের জীবনের মূল্য সমান।

মূল্যবান এই জীবনের জন্যেই জীবিকাও প্রয়োজন। তবে জুলুম করে নয়। শোষন করে নয়। এসব দেখলে মনটা ভাল রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। টেনশান শুরু হয়। এমনিতেই নিজের হাজারও টেনশানের শেষ নেই। এর উপর করোনার টেনশান। তারপরও নিজেকে শান্তনা দেই। অন্যকেও দেই। বলি, টেনশান করো না কেউ। টেনশান করে কোন লাভ আছে?

কোন লাভ নেই। করোনা যুগে টেনশান না করে কেবল সতর্ক থাকা জরুরী। আর জরুরী আল্লাহকে ডাকা। পাশাপাশি ভাল থাকার উপায় বের করাও জরুরী। আমি নিজেও সারাদিন উপায় খুঁজি। কিন্তু বের করতে পারি না। বড়ই মুশকিলের ব্যাপার। উপায়হীনতার সময় উপায় খুঁজে বের করা আসলেই মুশকিলের। তবে দিন সাতেক হলো একটা আপাত উপায় বের করে নিয়েছি। ভিডিও দেখছি।

মন্দ হয়নি উপায়টি। বেশ কাজে দিচ্ছে। দিনে ২-৩ টা উত্তম সুচিত্রার সিনেমা আর ৬-৭ টা বাংলা নাটক। সময় ভালই কেটে যাচ্ছে। তিশা, মম, মেহজাবিন এবং সাবিলা থেকে শুরু করে জাহিদ, চঞ্চল, ইরফান আর জোভান; কারো নাটকই বাদ দেই না। ইরফান আর জোভানকে আগে দেখিনি; প্রথম দেখলাম। বেশ প্রতিভাবানই মনো হলো। মেহজাবিনও প্রথম। অদ্ভুত বিষয়! চিকনাচাকনা চেহারা। গড়নে ঠিক নায়িকার মত না। কিন্তু দেখলে মনের মধ্যে কোথায় যেন মোচরামুচরি শুরু হয়।

জাহিদ হাসানকে বুড়ো বুড়ো লাগে। লাগারই তো কথা। আর কত! বয়স হয়েছে না! সেই কবে থেকে দেখছি। অবশ্য কবে থেকে শোনিমের মাও আমায় দেখছে। এজন্যেই কিনা জানি না। সেও আমাকে একই কথা বলে। বুড়ো বেটা বলে। এটা একটা কথা হলো? কথায় কথায় বুড়ো বেটা! দোষটা অবশ্য তারও না। পুরো দোষই আমার চুল দাঁড়ির। এত কালি মাখি, এত শেইভ করি। তারপরও ঢেকে রাখতে পারি না। পৃথিবীতে চুলদাঁড়ির মত আর কোন কিছু এত তাড়াতাড়ি বাড়ে না।  

কানাডায় করোনা বেটাও খুব তাড়াতাড়ি বাড়ছে। মাত্র দু’সপ্তাহে ৬০০% বেড়েছে। যেমনি বাড়ছে আক্রান্তের হার; তেমনি মৃতের সংখ্যাও। হুহু করে বাড়ছে। ইতিমধ্যে নামটাও বদলে গেছে। আগের নামটা সুন্দর ছিল। মেয়েলি মেয়েলি ছিল; করোনা। এখন বেটা বেটা লাগে; কোভিড। করোনাই তো ভাল ছিল। তবে মেয়ে হোক, আর বেটা হোক; ধরলে মহা বিপদ। হুলস্থুল বেঁধে যায়। কেবল হাসপাতালে যাওয়া যায় না। কানাডা সরকারের কড়া নির্দেশ। কথা একটাই। যা হবার হবে। মরো বাঁচো; সব বাসায় বসেই হবে।

বাসা আমার আটতলায়। এখানে বসে মরতেও তেমন খারাপ লাগার কথা না। সতেরো তলা ভবনের আটতলায় থাকাটা যেমনি আরামের তেমনি নিরাপদও। এতদিন নিরাপদ ভেবেই দিনাতিপাত করছিলাম। সামনের দিনগুলো হয়ত তেমন নিরাপদে আর থাকা যাবে না। খুব কাছে আমেরিকার নিউইয়র্ক স্টেট। বাই রোডে ত্রিশ মিনিটের পথ। মহা বিপদগ্রস্ত ওরা। কাল একদিনে মারা গেল ৮৮৪ জন। সংখ্যা রোজ বাড়ছে। ওখান থেকে কেবলই মৃত্যুর সংবাদ আসে।

সংবাদ এখানেও আসে। চাইলেও আসে, না চাইলেও আসে। লিখতে বসেছি। অমনি হুরমুর করে খবর আসলো। হুরমুর করে কখনো ভাল খবর আসে না। খবরটি বড়ই খারাপ। আমার তথাকথিত নিরাপদ ভবনের এক বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমি আচান্মক থেমে গেলাম।

ভেবেছিলাম আজ একখানা রম্য রচনা লিখবো। হলো না। সব আশা সব সময় পূরণ হয় না। আশা পূরণ হতে হলে মনের শক্তি লাগে। মনের এই জায়গাতেও আজ একটা বড় ধাক্কা খেলাম!!! চলবে

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com