করোনা দিনের ডায়েরি...

প্রকাশের সময় : 2020-12-27 17:31:18 | প্রকাশক : Administration
করোনা দিনের ডায়েরি...

৯ম পর্ব

ফাজিল করোনায় জনগণের পাশে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। জানাবারই কথা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটা তাঁর দায়িত্ব। কিন্তু পাশে দাঁড়াবার মত সক্ষম ব্যক্তিরা তাঁর কথায় সাড়া দেননি। উল্টো সক্ষমরা অক্ষম সেজেছেন। আহ্বান জানাবার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও যতো বড় মাপের দূর্যোগ ততোটা মাপে সাড়া মেলেনি।

বাইরের প্রচন্ড তুষারপাত দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, তাহলে হঠাৎ বড়লোকেরা কোথায় গেলেন? হঠাৎ করে বড়লোক হওয়া বড়লোকেরা না হয় ভাগলেন, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করে তিলে তিলে বড়লোক হওয়ারাও হাওয়া! তারা তো জনমভরই দায়িত্ববান ছিলেন। তারা গেলেন কোথায়? ঢাকার শহরে প্রাডো চালিয়ে জ্যাম বাঁধানো ধনীকশ্রেণীরাই বা লুকালো কোথায়?

দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে দাবীদার গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও পুতিয়ে গেছেন। তাদের জান পুত পুত করছে। মানে, যায় যায় করছে। এবং জানের সাথে মানও প্রায় শেষ। ইজ্জত বলতে আর কিচ্ছু বাকী নেই। ভিক্ষার থালা মেলে ধরেছেন তারা। কথাবার্তার ধরণে মনে হয় যেন দিন আনে দিন খায়। জীবনেও মুনাফা করেননি তারা। করোনায় ফ্যাক্টরী বন্ধ হবার প্রথম মাসেই বেতন দেবার অক্ষমতার কথা জানিয়েছেন। তাহলে বলতেই হয়, এত বছর করলেনটা কি? গলাবাজি? নাকি এখন যা করছেন, তা ভাওতাবাজী?

ভাওতাবাজীটা করেন কিভাবে? গার্মেন্টস সেক্টরের এখন রমরমা অবস্থা। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রফতানী হচ্ছে বেশ অনেক বছর ধরে। পাশাপাশি কোনো সন্দেহ নেই, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিপুল উন্নয়ন যজ্ঞ দেখছে বাংলাদেশের মানুষ। রোগের চিকিৎসায় প্লেন চার্টার করে বিদেশে যাওয়ার মতো বড় লোকের তালিকা করলে তা এতটা ছোট হবে না। অথচ যখন দেশে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা দেখা দিল, সমগ্র বিশ্ব যখন থমকে দাঁড়ালো, তখন তারা কেউ বললেন না যে আমরা প্লেন চার্টার করে পিপিই আনব। মাস্ক আনব। ভেন্টিলেটর বা অন্যান্য সামগ্রী আনব।

বড় দুঃখ লাগছে এসব দেখতে। গত এক দশকে বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, রেডিও-টিভি চ্যানেলসহ নানা ধরনের ব্যবসার লাইসেন্স পেয়েছে এমন লোকের সংখ্যা নেহায়তই কম নয়। ব্যাঙ্গের ছাতার মতো তারা লাইসেন্স নিয়ে এসব গড়ে তুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে লাইসেন্স প্রাপ্তিটাই মুখ্য। কিন্তু সরকারের বদান্যতায় এসব পেয়ে তারা আসলে দেশের দুঃসময়ে সরকারকে কতটুকু সহযোগীতা করছে, তার নমুনা জাতি তথা সরকার হাড়ে হাড়ে প্রত্যক্ষ করছে।

হাসপাতালগুলো বর্তমান দুঃসময়ে মানুষের জন্য দরজা বন্ধ না করলেও দরাজ দিলে তা খুলেও রাখেনি। রোগী ভর্তি করা নিয়ে গাইগুই করছে। দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার জন্যে এমন কোন পথ নেই, যেটা তারা অবলম্বন করছে না। লুকিয়ে রেখেছে নিজেদেরকে। কেবল লুকায়নি, দলও বেঁধেছে। সরকারকে সহযোগীতা না করবার জন্যে দলবেঁধে পণ করেছে। যদিও এসব করেও তাদের শেষ রক্ষা হচ্ছে না। করোনা অন্দরে গিয়েও তাদের ধরছে।

অথচ এর বেশিরভাগই বিত্তবান। ব্যতিক্রম বাদে তারা না দিচ্ছেন সেবা, না দিচ্ছেন ত্রাণ কিংবা অনুদানে অর্থ। এসবে কষ্ট পেলেও হতাশ হননি সরকার প্রধান। মনোবল হারাননি। ভেঙে পড়েননি। ভেঙে পড়ার মত মানুষ তিনি নন শেখ হাসিনা। তিনি বেজায় সাহসী। সেই শৈশব থেকে শুনে আসছি, আমেরিকা বিশ্বমোড়ল। দুনিয়ার সবার মাথার উপর দিয়ে ছড়ি ঘোরায় তাঁরা। এ কারণে সবাই তাঁদের ভয় করে। ধরেই নিয়েছিলাম, ক্ষমতাশালী ওই রাষ্ট্রটির সামনে বাংলাদেশের কোনো সরকার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না।

কিন্তু না! একজনকে পাওয়া গেলো। খুব সাহসী একজনকে পাওয়া গেলো শেষ অবধি। তিনি আর কেউ নন, শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বাবা শেখ মুজিবও অমিত সাহসী এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কন্যা বাবার মতো না হয়ে কি পারেন? মোটেই পারেন না। তাঁর বাবা জনগণের প্রিয় বঙ্গবন্ধু পশ্চিমা শাসকদের থোড়াই কেয়ার করতেন। তাঁর কন্যা বলেই একাই লড়তে পারেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ একজন দূতকে তিনি পাত্তাই দেননি দিনের পর দিন। এবং মাসের পর মাস। ডিপ্লোমেসীতে কঠিন তেদর এই দূত চেষ্টা করেছেন সব চ্যানেলেই। ইউরোপিয়ানদেরও সাথে রেখেছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি। তাঁর সব অনুরোধ বিফলে গেছে। তবে সব অনুরোধ যে ফেলে দিয়েছেন তা নয়। ভালটা রেখেছেন। এবং অন্যায় অনুরোধ রাখেননি একটাও। এটা একটি অকল্পনীয় বিষয় বটে। গর্বেরও বটে।

সেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এই করোনা দূর্যোগকালে সঠিক আর কঠোর সিদ্ধান্ত নেবেন। জয় তাঁরই হবে। এটা ব্যক্তিগতভাবে আমার বিশ্বাস। এ জন্য তাঁর আশপাশের সবাইকে শুধু তাঁকে যথাযথ সাপোর্টটি দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত থাকতে হবে তাঁদের নিজেদের। তবেই এই মহাদূর্যোগ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে দেশ। দাঁড়াতে পারবো আমরা। সাড়ে ষোলকোটি বাঙালী জনতা।

যদিও কোটি কোটি বাঙালীর এই বাংলায় ভেজাল আর ক্যাচালের অভাব নেই। এই দেশে করোনায় ত্রাণ বিতরণ হবে আর চুরিধারী হবে না এটা কি সম্ভব? চুরিধারী হচ্ছেও। জেলা শহর থেকে উপজেলা শহরে ত্রাণের অনুমোদন তথা ত্রাণসামগ্রী পৌঁছতে না পৌঁছতেই মোছে হাত বুলাতে শুরু করেছে জনপ্রতিনিধি নামধারী চোরেরা। আওয়ামী পলিটিশিয়ান পরিচয়ের বাইরে তারা এখন চাল, ডাল কিংবা তেল চোর খেতাবও পাচ্ছে। যদিও এদের সংখ্যা এখনও হাতে গুণে বলা যায়।

মিডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী বলা যায়, এখন পর্যন্ত সারাদেশে চুরির ঘটনা ৬০ থেকে ৭০টির মত হয়েছে। তবে যত না চুরি হচ্ছে হাউকাউ হচ্ছে তারচেয়ে সহস্রাধিক জোরে। বিরোধীপক্ষ তো লাফিয়ে ওঠছে। এমনভাবে সোশাল মিডিয়ায় এর প্রচারণায় নেমেছে যেন করোনা নয়, দেশে আনন্দ উৎসব শুরু হয়েছে। করোনার ভয় ভুলে প্যারোডি গান বানাবার প্রতিযোগীতায় নেমেছে ওরা। ভাবনা একটাই; করোনায় মরে মরুক বাঙালী, সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়বো। সরকারকে ত্রাণচোর প্রমাণ করে ছাড়বো।

কিন্তু একবারও ভাবে না, এসব চোর ধরেছে সরকার নিজেই। ধরেছে সরকারের পুলিশ কিংবা র‌্যাব। তারপর নিউজ হয়েছে। আর নিউজ হয়েছে বলেই এই অধমরা জেনেছে। সরকার শুধু চোর ধরেই থেমে থাকেনি। আদালতের রায়ের অপেক্ষায়ও থাকেনি। দিনের মধ্যেই এদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বারশীপ বাতিল করছে। বহিস্কার করছে দল থেকে।

অনিয়ম ঘটে না এমন কোনো দেশ আছে পৃথিবীতে? নেই। ভূড়ি ভূড়ি অনিয়ম হয় কাড়ি কাড়ি দেশে। দেখার বিষয় হচ্ছে সে সবের বিচার হয় কিনা। আগেপরে জানি না, তবে এখন একশান দৃশ্যমান। যারাই এসব ত্রাণ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকেই ছাড়ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশে যেখানেই অনিয়মের খবর পাচ্ছে, সেখানেই চলছে অভিযান ও গ্রেফতার। কোনো দলীয় পরিচয় দেখা হচ্ছে না। কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না।

এরপরও সমালোচনাকারীরা থেমে নেই। তারা তাদের বাঁশী বাজিয়েই চলেছে। এটা দুঃখজনক। দুঃসময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সরকারের সমালোচনা করাই তাদের কাজ। শুধু কথা আর কথা বলছেন। অনেক অনেক কথা; অনেক দল-মত, সুশীল সমাজ বা অনেকেই। কিন্তু তারা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। ৬৮ হাজার জায়গায় সরকার ঠিকমত দিয়ে যাচ্ছে। এসবের মাঝে মাত্র ৬০/৭০টা জায়গায় যদি একটু সমস্যা হয়ও, তাতে তো মহাভারত অশুদ্ধ হবার কথা না।

সরকার তো তার বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছে। কঠোর ব্যবস্থা। সেটা নিয়ে কোথায়ও একটি কথা নেই। শুধু আছে চিৎকার চেঁচামেচি। কিন্তু নেই এতদিনকার চেনা মানুষগুলো। নেই ডঃ কামাল, প্রফেসর ইউনূসসহ বাকীজনেরা। কোন মানুষকে একটি পয়সা দিয়ে, একমুঠো ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করার মত তাদের একজনও নেই। মাঠেও নেই, টিভিতেও নেই। নিকট অতীতেও ছিল বলে মনে পড়ে না। চলবে...

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com