ভেবেছিলাম ভ্যাকসিন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হবে!!

প্রকাশের সময় : 2021-02-03 16:18:28 | প্রকাশক : Administration
ভেবেছিলাম ভ্যাকসিন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হবে!!

গোলাম রাহাত খান: ভেবেছিলাম ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পৌঁছার পর ডাক্তারদের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ডাক্তার সমাজের বিরাট অংশে এখন শুনশান নীরবতা আর কন্সপিরিসী থিওরির ফিসফাস। পৃথিবীর সব দেশে ভ্যাকসিনের যে অগ্রাধিকার তালিকা করা হয়েছে খুব সঙ্গত কারণেই ডাক্তারসহ সব স্বাস্থ্য কর্মীরা তার শীর্ষে। ডাক্তার নার্সরা করোনা রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে আসে। তারাই সমাজে সবচেয়ে ঝুঁকিতে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থারও রিকমেন্ডেশন হচ্ছে এদের আগে টিকা দেবার। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা প্রথম দিকে ভ্যাকসিন প্রকিউর করেছিল তাদের ডাক্তার নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা টিকা নেবার অফার পাবার সাথে সাথে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করে তাড়াহুড়া করে সবাই টিকা নিয়েছে।

অথচ খুবই হতাশার কথা আমাদের ডাক্তার সমাজের বিরাট অংশ ষড়যন্ত্র সূত্রে আগে ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছে না। এ যেন আষাঢ়ে গল্প। বিশ্বাস হতে চায় না। কেউ কেউ আবার বলছে, তাদের উপর কেন প্রথম ট্রায়াল দেয়া হবে? আন্তর্জাতিক মানদন্ডে এই আমাদের বিজ্ঞান পড়া ডাক্তার সমাজ! আমরা সবাই জানি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল পর্ব আগেই শেষ হয়ে গেছে । এটা ট্রায়াল নয়। পরীক্ষিত নিরাপদ টিকা। টিকা প্রোডাকশনে যাবার আগে বিজ্ঞান সম্মত যত ট্রায়াল, প্রসেস সব সম্পন্ন হবার পড়ই এই টিকা মানুষের শরীরে গিয়েছে।

আর বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন গিয়েছে। অক্সফোর্ড দুনিয়াজোড়া শিক্ষা দীক্ষা গবেষণা প্রোডাকশনের ব্র্যান্ডেড নাম। যুক্তরাজ্যে আজ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। সবাই টুকটাক জ্বর জারি হওয়া ছাড়া নতুন এন্টিবডি নিয়ে সুস্থ্য আছে। এন্টি ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন সারা পৃথিবীতেই আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির এক ছেলেও এই মিথ্যা প্রচারণার আন্তর্জাতিক একটি গ্রুপের হোতা। অকাট্য যুক্তি প্রমান থাকলেও অল্প সংখ্যক কিছু মানুষ ভিন্ন মত প্রকাশ করে। ইউ কে তে এক ঘরোয়া আড্ডায় সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন বাংলাদেশি ভাই আমাকে গত বছর নভেম্বরের দিকে বলেছিলো, করোনা বলে কিছু নেই। এই সব সাজানো নাটক। আমি পাল্টা কোনো আলোচনায় না গিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলছি, সাইকো। এর মানসিক চিকিৎসা দরকার। সাধারণ মানুষের খুব ছোট একটি অংশ ভ্যাকসিন নিয়ে কথা তুলবে এটাই সমাজ বিজ্ঞানের নিয়ম।

আর তাদেরকে সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে সত্যটা বোঝাবে এই বিষয়ে যারা এক্সপার্ট তারা। এই ক্ষেত্র ডাক্তারের। অথচ আমাদের বেলায় আমাদের ডাক্তার সমাজের বড় একটা অংশ উল্টোটা করছে। কোনো কিছু হলেই এই যে হাজার হাজার আওয়ামী ডাক্তার রাস্তায় থাকেন, রাজনীতিবিদের চেয়ে বড় রাজনীতিবিদ যারা, যদিও একসময় আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ করার লোক ছিল না। এনারা এখন কোথায়? সরকার সাফল্যের সাথে ভ্যাকসিন প্রকিউর করে তাদেরকে, বিশ্বের সব দেশের মত আগে নিরাপদ করতে চাচ্ছে অথচ তারা এখন নিবেন না । ভাবা যায়? কি সেলুকাস!

আবার ভ্যাকসিন প্রায়োরিটিতে যদি অন্য কোনো পেশাজীবিদের আগে ভ্যাকসিন দেয়া হতো তাহলেও শুরু হয়ে যেত হাউ কাউ। আমাদের ভ্যাকসিন দেয় না কেন।

গত প্রায় ১০০ বছর ভ্যাকসিন পৃথিবী থেকে অসংখ্য ছোঁয়াচে মহামারি করতে পারে এমন রোগ একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যেমন পোলিও ইলাইটিস। আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেক শিশু ছিল যাদের পোলিওর কারণে কোমর থেকে দুই পায়ের সব মাসেল শুকনো এবং অবশ ছিল। আমার ছেলেবেলার দুইজন বন্ধু আছে এদের দলে। সারা জীবন তারা হুইল চেয়ারে বা ক্রাচে ভর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জীবন। গত ২৫ বছর আমরা বাংলাদেশে কোনো বাচ্চাকে পোলিও হয়ে পঙ্গু হতে দেখিনি। কারণ পোলিও টিকা।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় দেশে ৩ কোটি ভ্যাকসিন লাগবে না। কারণ ডাক্তাররা অনীহা দেখালে অন্য পেশাজীবীরাও এই কুসংস্কারকে বিশ্বাস করবে। আর সাধারণ মানুষ তো তাদের অনুসরণে টিকা দেখলেই ভেঙে চুড়ে দৌঁড় দিবে। দশ চক্রে ভগবান ভুত হবার অবস্থা। ১৫ই অগাস্টসহ সকল দিবসে হাসপাতালের রোগী রেখে ব্যানার নিয়ে রাস্তা ব্লক করা হাজার হাজার ফেক জয়বাংলার ডাক্তারদের নিয়ে কি যে বিপদে পড়েছে আজকে প্রধানমন্ত্রী! এই লেখা ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। শুভ চেতনা জেগে উঠুক মানবিকতায় সেই কামনায় ।

বিএসএমএমইউর ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজির ডাঃ মোস্তফা জামান বাবুল ভাই আর ভাবীকে শুভাশীষ তারা ভ্যাকসিন নেবার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে। অন্ধকারে আলোর বর্তিকা নিয়ে দিনশেষে কিছু মানুষ থেকেই যায়। লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের নাশন্যাল হেল্থ সার্ভিসের মেডিকেল ডাক্তার

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com