পারলে তোমার সন্তানদের ক্ষমা করো

প্রকাশের সময় : 2021-03-03 13:06:39 | প্রকাশক : Administration
পারলে তোমার সন্তানদের ক্ষমা করো

ওমর ফারুক: হিন্দি অথবা উর্দু ভাষা যদি কোনদিন কোনভাবে একটি   আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা পেয়ে যায়, তাহলে তার কৃতিত্বের একটা বড় অংশ পাওয়া উচিত বাংলাদেশীদের, বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশীরা প্রবাসে থাকেন।

হিন্দি/উর্দু জানুক বা না জানুক, ঠিক জানুক বা ভুল জানুক, তাতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানি কাউকে দেখলেই দরকার পড়ুক বা না পড়ুক, গায়ে পড়ে হিন্দি/উর্দুতে কথা বলে বা বলার জন্য মুখিয়ে থাকে এমন জাতি (ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানি ছাড়া) বোধ করি একমাত্র বাঙ্গালীরাই আছে এই পৃথিবীতে।

বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের কথা বলবো না, তবে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলতে পারি যে কানাডা প্রবাসী প্রতি ১০ জন বাংলাদেশীর ৫ জনই সর্বদা উতলা থাকেন হিন্দি বা উর্দুতে কথা বলার জন্য, যদিও আমি ১০০% নিশ্চিত তারা হিন্দি/উর্দুর চাইতে ইংরেজি অনেক ভাল জানেন।

আর সুবিধামত কোন ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানিকে পেয়ে গেলে তো কোন কথাই নাই, ধন্য হয়ে যায় এ জীবন। আমি কোন কোন বাঙ্গালিকে এমনভাবে হিন্দি/উর্দুতে কথা বলতে শুনেছি যা দেখে মনে হতে পারে ৫২’র ২১’শে ফেব্র“য়ারীতে আমাদের দেশে যা ঘটেছিল তা আসলে একটা দুর্ঘটনা এবং আমাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা ভুলে যাওয়া। অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, হিন্দি/উর্দুতে  কথা বললেই তো আর আমরা বাংলা ভুলে যাচ্ছি না, তাহলে সমস্যা কি? তাদের জন্য শুধু এটুকুই বলবো, যদি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে জাতীয়তা আর জাতিসত্ত্বার মর্ম কি তা উপলব্ধি করতে পারবেন। আর সেটা উপলব্ধি করতে পারলেই বুঝতে পারবেন বুঝে না বুঝে কি ক্ষতিটাই না করছি নিজেদের তথা বাঙ্গালী জাতির।

কানাডা একটা মাল্টি-কালচারাল কান্ট্রি এবং এখানে প্রায় সব দেশের মানুষের কমিউনিটি আছে। একই কমিউনিটির মানুষ তাদের নিজেদের ভেতর মূলত তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলে (যারা ইংরেজিতে অনেক বেশি কমফোর্টেবল তাদের কথা আলাদা) এবং ভিন্ন কমিউনিটির মানুষের সাথে ইংরেজিতে অথবা ফ্রেঞ্চে কথা বলেন। তবে খুব সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রম বাঙ্গালীরা, এরা অন্য ভাষা ভাষীর সাথে ইংরেজিতে কথা বললেও ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানিদের সাথে হিন্দি বা উর্দুতে কথা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

এই কারণে যে ক্ষতিগুলো হচ্ছে তার প্রথমটি হল; অধিকাংশ ইন্ডিয়ান পাকিস্তানি কিংবা অন্য ভাষা ভাষীরা মনে করে বাঙ্গালীরা আসলে আলাদা কোন জাতি না, বরং এরা ইন্ডিয়া বা পাকিস্তানেরই একটা অংশ, বাংলা এদের একটি আঞ্চলিক ভাষা মাত্র (কলকাতার মত) কিন্তু মাতৃভাষা হচ্ছে হিন্দি বা উর্দু। এর ফলে কোন ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানি যখন কোন বাংলাদেশীর সাথে কথা বলে তখন ৯০% ক্ষেত্রে তারা ইংরেজির পরিবর্তে হিন্দি বা উর্দুতে কথোপকথন শুরু করে।

আরেকটি ক্ষতিকর দিক হচ্ছে; কোন বাংলাদেশী যখন কোথাও নিজেকে ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে পরিচয় দেয়, তখন খুব কম মানুষই পৃথিবীতে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করতে পারে।

তাই অনেক বাঙ্গালীই ইচ্ছায় বা  অনিচ্ছায় নিজেকে ‘ইন্ডিয়ান’ ক্ষেত্র বিশেষে  ‘পাকিস্তানি’ (কারণটা আন্দাজ করে নিন) হিসেবে পরিচয় দেয় যাতে করে বাংলাদেশ সম্মন্ধে যেসব বিদেশিদের ধারণা কম তাদেরকে   চিনাতে পারাটা সহজ হয়।

আর কোন একটি উপলক্ষ পেলেই হিন্দি/উর্দু গানের দাপট যে কতটা অভাবনীয় পর্যায়ে চলে যায় তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। চরম অবিশ্বাস্য ও নির্মম দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশীই তাদের জাতিসত্ত্বা আর জাতীয়তাবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে এইসব আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন এবং হাসিমুখে তাদের এই জাতিগত ক্ষতিগুলো মেনে নিচ্ছেন।

আমি জানি আমার এই লেখাটি অনেকে দু’তিন  লাইন পড়েই এড়িয়ে যাবেন নিজের বিবেকের মুখোমুখি হতে চান না বলে, কিংবা যারা এখনো পড়ছেন তাদের অনেকেই আমাকে মনে মনে গালি দিচ্ছেন অপ্রিয় সত্য তুলে ধরার অপরাধে।

মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দানকারী সালাম বরকত রফিক জব্বারদের সাথে যদি আমার মৃত্যুর পর সৌভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্যক্রমে কখনও দেখা হয়ে যায়, অকৃতজ্ঞ বাঙ্গালী জাতির একজন হিসেবে আমি তাদের সামনে দু’পা সোজা রেখে মাথা উঁচু করে এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারব কিনা, আপাতত এটা ভেবেই সবচেয়ে বেশি লজ্জা ও কষ্ট পাচ্ছি। হে জন্মভূমি, পারলে তোমার সন্তানদের ক্ষমা করো তুমি! - টরন্টো, কানাডা

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com