ঠেলায় বাঙালি অনেক কিছু মানতে বাধ্য হয়
প্রকাশের সময় : 2021-03-18 11:48:44 | প্রকাশক : Administration
সৈয়দ আবুল মকসুদ: বাঙ্গালি একটি বিবদমান জাতি। কোনো প্রশ্নেই আলোচনা করে মীমাংসায় পৌঁছার স্বভাব বাঙালির রক্তে নেই। ব্যক্তিগত জীবনেও রাস্তাঘাটে, গ্রামেগঞ্জে এমনকি অফিস আদালতেও আস্তিন গোটানো, হাতাহাতি, মারামারি, মালকোচা মেরে অন্যের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া তার স্বভাবজাত। অন্যকে গালাগালি করা তো বাঙালির প্রতিদিনের অভ্যাস। অন্যকে অপমান করার প্রতিভা বাঙালির অপার।
মিথ্যা কথাকে বাঙালি খুব পছন্দ করে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমাজবিজ্ঞানীও বাঙালির স্বভাব বিশ্লেষণ করে তার কূলকিনারা করতে পারবেন না। তবে বড় বড় সংস্কারকরা জাতিকে সংশোধন করে উন্নততর পর্যায়ে নিতে পারেন। কনফুসিয়াস চীনের সমাজে তা করেছিলেন। ভারতবর্ষেও হিন্দুসমাজে গত দুই আড়াই হাজার বছরে অনেক মহামানব এসেছেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে তেমন কোনো মানুষ জন্মগ্রহণ করেননি।
মুক্তিযুদ্ধসহ এ পর্যন্ত বাঙালি যা অর্জন করেছে তা জনগণের সচেতন অংশের আত্মত্যাগের ফলে হয়েছে। রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। জাতি গঠিত হয়নি। কারণ আমাদের জাতির কোনো স্রষ্টা নেই। আপনাআপনি বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে যেটুকু হওয়ার তাই হয়েছে। অভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বাঙালি নয়। শঙ্কর জাতি। নানা রক্ত বাঙালির শরীরে। দেখুন না রাস্তায় ৫০ জন বাঙালির ৩০ রকমের চেহারা। কেউ লম্বা, কেউ বেঁটে। কেউ কালো, কেউ বাদামি। কেউ ধবধবে ফর্সা। কারও নাক উঁচু, কারও নাক বোঁচা। কারও চোয়াল চওড়া। কারও মাথা ছোট।
কোনো থাই জাতির মধ্যে আপনি তা পাবেন না। ভিয়েতনামির মধ্যে পাবেন না। জাপানির মধ্যে পাবেন না। চীনাদের চেহারা-সুরত একরকম। কোরিয়া সবাই একই চেহারার। বাঙালি এক অন্যরকম জাতি। কোনো সংহতি নেই। দেখতে যেমন নানানরকম, স্বভাব-চরিত্র, মন-মেজাজও নানানরকম। কোনো ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছা তাই তার জন্যে কঠিন। ঠেলায় পড়লে অবশ্য অনেককিছু সে মেনে নিতে বাধ্য হয়। প্রয়াত সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক