পবিত্র শব-ই বরাত
প্রকাশের সময় : 2021-03-31 14:23:19 | প্রকাশক : Administration
পবিত্র শব-ই-বরাত। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ভাগ্য রজনী হিসেবেও পরিচিত। ধর্মীয়ভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র এই রজনী লাইলাতুল বরাত নামে পরিচিত। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ও অধিক পুণ্যলাভের আশায় এই রাতে মুসলিম সম্প্রদায় রাতভর ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন।
তবে সারাবিশ্বের করোনাভাইরাস মহামারী আকারে রূপ নেয়ায় এবার পুণ্যময় এই রজনীতে ভিন্ন আঙ্গিকে ইবাদত-বন্দেগি করবেন দেশের মুসলমানরা। মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর যথাযথ মর্যাদার মধ্যে দিয়েই এই রজনী অতিবাহিত করবে। গ্রাম বাংলায় এই রজনী উপলক্ষে একসঙ্গে বসে হালুয়া রুটি খাওয়ার রীতি প্রচলন রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বিশ্বের মুসলমানরা এদিন রাতে আল্লাহর নৈকট্য ও করুণা লাভের আশায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকবেন।
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, প্রতিবছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহর যে তিনটি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব মনে করা হয় শব-ই-বরাত তার মধ্যে একটি। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই রাতটি মুসলমানদেরকাছে আসে। শব-ই-বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রমজানের প্রস্তুতি।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালা এ রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে বরকতময় এ রাতে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাঁর মাখলুকাতের দিকে বিশেষ নজরে তাকান।
তবে কোন কোন ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, এই রাতের বিষয়ে কোরআনে সরাসরি কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। অনেকে সূরা আদ-দুখান এর ৩ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘কোরআন অবতীর্ণের বরকতময় রাতকে’ শব-ই-বরাত হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
এতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মোবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা : ৪৪-দুখান: আয়াত ৩-৪।) অন্যরা সূরা কদরের ১ম আয়াত অনুসারে ‘কোরআন অবতীর্ণের বরকতময় রাত’ দ্বারা শব-ই-কদরকে বোঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই আমি একে (কোরআনকে) লাইলাতুল কদরে (বাংলায় : মহিমান্বিত রজনীতে) অবতীর্ণ করেছি সূরা কদর : আয়াত ১।
ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিয়াহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিসগ্রন্থের কোন কোন হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লে−খ পাওয়া যায়। এসব হাদিস শাস্ত্রে ‘শব-ই-বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘নিসফ শাবান’ বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’। একটি হাদিসে বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন।
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, মুহাম্মাদ (সঃ) এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা পালন করতেন। শাবান মাসের রোজা ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এ মাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনও কখনও প্রায় পুরো শাবান মাসই তিনি নফল সিয়াম পালন করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মাসে রাব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম ওঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমার রোজা রাখা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক’। - সূত্র: অনলাইন