শুকরিয়া জানানোর সেরা আমল
প্রকাশের সময় : 2021-03-31 14:25:20 | প্রকাশক : Administration
যে কোনো খুশির সংবাদে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানের সুন্নাত। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন কোনো খুশির সংবাদ শুনতেন তখন তিনি কি আমল করতেন? খুশির খবর পেলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সেরা আমলই বা কোনটি?
খুশির সংবাদে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা সুন্নাত। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনন্দের কোনো সংবাদ পেলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে সর্বোত্তম একটি আমল করতেন; তাহলো- সিজদায় লুটিয়ে পড়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জানতে পারেন যে, তাঁর প্রতি দরূদ পড়ার সাওয়াব, নেক ও মর্যাদা অনেক বেশি। তাই তিনি উম্মতের জন্য খুবই খুশি হয়ে যান।
এ খুশির সংবাদে তিনি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়াস্বরূপ সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। আনন্দের সংবাদে সিজদার বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (বাইরে) বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি এত লম্বা সময় ধরে সিজদায় থাকলেন যে, আমি আশঙ্কা করলাম, হয়তো বা আল্লাহ তাঁর প্রাণ হরণ করে নিয়েছেন। আমি তাকে দেখতে কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি মাথা তুলে বললেন- হে আব্দুর রহমান! কি ব্যাপার তোমার?
আমি ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, ‘জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমাকে বললেন, ‘আমি কি আপনাকে সুসংবাদ দেব না? আল্লাহ তাআলা আপনাকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আপনার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করব। আর যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম জানাবে, আমি তাকে শান্তি দান করব।’ আমি আনন্দের এই খবর শুনে আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরেকে হাকেম)
প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মতের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন মর্মে খবর শোনার পরও তিনি অত্যাধিক খুশি হয়ে যান। সে খুশির সংবাদে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এভাবে। হজরত আমির ইবনু সাদ (রাহঃ) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গে মক্কা থেকে মদিনার দিকে রওনা হলাম।
অতঃপর আমরা ‘আযওয়ারা’ নামক স্থানের কাছে পৌঁছালে তিনি বাহন থেকে নেমে আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছুক্ষণ দোয়া করে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং অনেকক্ষণ সিজদায় কাটান। অতঃপর সিজদাহ থেকে উঠে পুনরায় মহান আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছুক্ষণ দোয়া করেন আবার সিজদাহ করেন এবং অনেকক্ষণ সিজদায় থাকলেন। আবার উঠে দুই হাত তুলে দোয়া করলেন এবং সিজদা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনবার এরূপ করলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আবেদন করেছি এবং আমার উম্মতের জন্য সুপারিশ করেছি। আমাকে এক-তৃতীয়াংশ উম্মতের জন্য শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়েছি। আবার মাথা তুলে আমার রবের কাছে উম্মাতের জন্য আবেদন করেছি।
তিনি আমাকে আমার উম্মতের আরও এক-তৃতীয়াংশের জন্য শাফাআত করার অনুমতি দিলেন। আমি পুনরায় সিজদায় অবনত হয়ে প্রভুকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি পুনরায় মাথা তুলে আমার মহান রবের কাছে উম্মতের জন্য দোয়া করি। তিনি আমাকে আরও এক-তৃতীয়াংশ উম্মতের জন্য শাফাআত করার অনুমতি দেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার জীবনে যে কোনো বৈধ ভালো কিংবা খুশির সংবাদে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া একান্ত আবশ্যক। কেননা সিজদাহ হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সেরা আমল ও উপায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই খুশির সংবাদে আল্লাহর কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। উম্মতে মুসলিমের জন্য এটি অন্যতম শিক্ষা। - সূত্র: অনলাইন