হাবিব গ্রুপের সাফল্যের সাত দশক

প্রকাশের সময় : 2021-04-15 12:23:49 | প্রকাশক : Administration
হাবিব গ্রুপের সাফল্যের সাত দশক

আসিফ সিদ্দিকী: বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনেক আগেই যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প পরিবার হাবিব গ্রুপ। ১৯৪৭ সালে ট্রেডিং কোম্পানি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আমদানিনির্ভর ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সিমেন্ট শিল্প, জাহাজ ভাঙা, টেক্সটাইল, বিদ্যুত উৎপাদন, সার কারখানা, ব্যাংকিং ব্যবসা থেকে শুরু করে এই গ্রুপের সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে এয়ারলাইনস ব্যবসা। এই ব্যবসার হাল ধরেছে নতুন প্রজন্ম।

৭১ বছর বয়সী এই শিল্প গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৭ সালে ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ মিয়ার ট্রেডিং কোম্পানি দিয়ে। তখন হাবিব ট্রেডিং শুধু আমদানি এবং তুলা রপ্তানির ব্যবসা করত। ইউরোপে একচেটিয়া তুলা রপ্তানির জন্য তারা বেশ সফলতা অর্জন করেছিল। পাকিস্তান আমলে যেসব বনেদি গ্রুপ ব্যবসা করত হাবিব মিয়া তাদের প্রায় সমবয়সী। উত্তরাধিকার সূত্রেই হাবিব উল্লাহ মিয়া ব্যবসায়ী হয়েছিলেন। তাঁর বাবা নজু মিয়া সওদাগর ছিলেন চট্টগ্রামের একজন প্রতিথযশা ব্যবসায়ী; ছিলেন আসাম-বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট। চট্টগ্রামে তাঁর নামে সড়ক ও বাজার রয়েছে। ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন ২০টি শিল্প ইউনিটে বার্ষিক ছয় হাজার কোটি টাকারও বেশি লেনদেন করেছে হাবিব গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। ব্যবসার আকার এত বড় হলেও এই শিল্প গ্রুপ প্রচারের মধ্যে নেই। হাবিব গ্রুপের ব্যবসা শুরু, পরিধি বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগ এবং ব্যবসার বৈচিত্র্য বাড়ানো সব কিছুই হয়েছে চট্টগ্রামকে ঘিরেই। ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও দেশের শীর্ষ শিল্পপতিদের মতো চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়নি হাবিব গ্রুপ।

১৯৮১ সালে হাবিব মিয়ার মৃত্যুর পর গ্রুপের হাল ধরেন তিন সন্তান ইয়াকুব আলী, মাহবুব আলী ও ইয়াসিন আলী। এর মধ্যে ব্যবসায়ী মহলে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মাহবুব আলী। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। ব্যবসার বৈচিত্র্য শুরু হয় তাঁর এবং ছোট ভাই ইয়াসিন আলীর হাত ধরেই। টেক্সটাইল থেকে শুরু করে বিদ্যুত এবং এয়ারলাইনস ব্যবসাও তাঁর পরিকল্পনাতেই হয়; কিন্তু এয়ারলাইনস ব্যবসা তিনি শুরু করে যেতে পারেননি।

এ বিষয়ে ইয়াকুব আলী বলেন, ছোট ভাই মাহবুব আলী ও ইয়াসিন আলীর বড় স্বপ্ন ছিল এয়ারলাইনস ব্যবসা করার। এ জন্য বিমান কেনা থেকে শুরু করে রিজেন্ট এয়ারলাইনস নামকরণ এবং লোকবল নিয়োগ সবই চূড়ান্ত হয়; কিন্তু তার অকাল মৃত্যু এয়ারলাইনস শুরুটা দেখে যেতে পারেনি। তার ইচ্ছাকে সম্মান দিতে বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর রাতে খোলা রেখেই রিজেন্টের উড়োজাহাজেই মরদেহ আনা হয়।

বহুজাতিক লিভার ব্রাদার্স থেকে শুরু করে বনেদি শিল্প গ্রুপগুলো চট্টগ্রাম থেকে প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নিলেও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে হাবিব গ্রুপ। তাদের করপোরেট অফিস এখনো চট্টগ্রামের জুবিলি রোডের লাভ লেইন এলাকায়। এই শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, কঠিন সংগ্রাম করছি এবং সফলভাবে মোকাবেলা করছি। কারণ আমাদের দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে।

ইয়াকুব আলী বলেন, এয়ারলাইনসের পর আমরা জ্বালানি খাতে ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে নিজেদের কারখানার প্রয়োজনে ছোট বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করি। পরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে সম্পৃক্ত হই। এখন চট্টগ্রামের সীতাকু- আর নরসিংদীর ঘোড়াশালে স্থাপিত দুটি বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে উৎপাদন ১৪১ মেগাওয়াট। যার ক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড।

দেশের প্রথম সারির এনসিসি ব্যাংকের অন্যতম অংশীদার হাবিব গ্রুপ। শুরুর দিকের অনুভূতি বলতে গিয়ে ইয়াকুব আলী বলেন, প্রথমে এটি ছিল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। এক বন্ধুর কাছ থেকে কিনে দুঃখে পড়ি। সে সময় নিজের পকেটের টাকায় বিমানে মিটিংয়ে যোগদানের জন্য ঢাকা গেছি, ডিভিডেন্ট তো দূরে থাক গাড়ি ভাড়া, খাওয়ার টাকাও পাইনি। অনেক প্রতিকূলতার পর আজ এনসিসি ব্যাংক বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে।

এনসিসি ছাড়াও মেঘনা ব্যাংক, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স কোম্পানি, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন লাইফ ইনস্যুরেন্স ও যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিরও অন্যতম অংশীদার হাবিব গ্রুপ। এ ছাড়া নিজেদের আছে চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার ও সিকিউরিটিজ কোম্পানি। ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের অন্যতম অংশীদার হাবিব গ্রুপ। ভারত ও মিয়ানমারে রপ্তানিও করছে।

বর্তমানে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল কারখানা হচ্ছে হাবিব গ্রুপের। হাবিব গ্রুপ যশোরে এসএসপি সার কারখানা স্থাপন করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে স্থাপিত এই কারখানা থেকে বছরে ১ লাখ ৩৫ হাজার টন এসএসপি সার উৎপাদিত হচ্ছে। আর জাহাজভাঙ্গা শিল্পের চারটি ইয়ার্ডে বছরে ২ লাখ টন স্ক্র্যাপ তৈরি হচ্ছে। গ্রুপের অংশীদারিত্বের ৫০০ বেডের একটি হাসপাতালে কোম্পানির ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেছে হাবিব গ্রুপ।

কোন ব্যবসায় মনোযোগ বেশি জানতে চাইলে ইয়াকুব আলী বলেন, ‘নাম-যশ খ্যাতির জন্য এয়ারলাইনস, মানুষ এক নামেই চেনে। কিন্তু সামান্য ঘটনার জন্য বদনামও কম হয় না।

বর্তমানে হাবিব গ্রুপের হাল ধরছে তৃতীয় প্রজন্ম। রিজেন্ট এয়ারলাইনস দেখছেন মাশরুফ হাবিব, টেক্সটাইল খাতের হাল ধরছেন সালমান হাবিব আর গার্মেন্টসের হাল ধরছেন তানভীর হাবিব। তাঁরা তিনজনই গ্রুপ পরিচালক। এ ছাড়া রিজেন্ট এয়ারের পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন তানজিলা হাবিব। ইয়াকুব আলী ছাড়াও গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও নীতিনির্ধারণী কাজ করছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসীন আলী।

৬৭ বছর বয়সী ইয়াকুব আলী এখনো প্রতিদিন সময় মেনে অফিসে এসে কাজ সারেন, নীতিনির্ধারণী পরামর্শ দেন। জরুরি কাজ না থাকলেও অফিসে আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে ব্যবসায়ীদের কোনো অবসর নেই। স্যামসন এইচ চৌধুরীও জীবনের শেষদিনও অফিস করেছেন। আমি খুবই এনজয় করি অফিসে। বাসায় থাকলে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। - কালের কণ্ঠ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com