আলোকিত মানুষ গড়ার পীঠস্থান

প্রকাশের সময় : 2021-05-26 16:08:00 | প্রকাশক : Administration
আলোকিত মানুষ গড়ার পীঠস্থান

ইফতেখারুল অনুপম: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মগড়া ইউনিয়নের চৌরাকররা গ্রাম। এক সময় এই গ্রামে ছিল না উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। পড়াশোনার জন্য ভাল মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিল না আশপাশের গ্রামে। ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১২ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরে আসতে হতো ওই গ্রামের শিক্ষার্থীদের। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, ওই এলাকায় ছিল না কোন পাঠাগারও। মানব সভ্যতার ইতিহাস আলোকিত করার শ্রেষ্ঠ অংশ বা সম্পদ হলো পাঠাগার। আর পাঠাগার হলো বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা যেখানে পাঠক গ্রন্থপাঠ, গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে।

সমাজের মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানো তথা সুশিক্ষার কথা বিবেচনা করে ‘এসো বই পড়ি, নিজেকে আলোকিত করি’স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সালে (২১ ফেব্রুয়ারি) ওইগ্রামে এক পুলিশ সদস্যের উদ্যোগে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’। পাঠাগারটি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের চৌরাকররা গ্রামে অবস্থিত। পাঠাগারটিতে বই পড়া, জ্ঞান আহরণ তথা নতুন তথ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রতিনিয়তই পাঠকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন বয়সের নারী-পুরুষ এখানে এসে জ্ঞানের অতল সমুদ্রে অবগাহন করতে পারেন। আবার কেউ চাইলে নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে পাঠাগারের সদস্য হতে পারেন। কোন পাঠক ইচ্ছা করলে পাঠাগারে বসে বই পড়তে পারেন। আবার চাইলে বাড়িতে নিয়েও পড়তে পারেন।

জানা যায়, পাঠাগারটি পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে। তাদের সহযোগিতায় সদস্য হওয়া, বই নেয়া, বই ফেরত দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পন্ন হয়ে থাকে। তারাও তাদের কর্তব্য সুন্দরভাবে পালন করছেন। যদিও এটি পারিবারিক পাঠাগার তবুও গ্রন্থাগারটি পরিদর্শন ও অনুসন্ধান করলে বুঝা যায় এর গভীরের সৌন্দর্য। পাঠাগারের যাবতীয় কার্যক্রম সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, আশপাশে কোন পাঠাগার না থাকায় বই পড়তে হলে আমাদের ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সরকারি গ্রন্থাগারে যেতে হতো, যা অনেক কষ্টসাধ্য ও দুরূহ ছিল। তাই ইচ্ছা থাকলেও সবসময় সুযোগ পেতাম না। এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার ফলে আমরা খুব সহজে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে অনেক উপকৃত হচ্ছি। চৌরাকররা গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ খোদাবক্স বলেন, বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আজেবাজে আড্ডা না দিয়ে এই পাঠাগারে সময় দিচ্ছে। যা তাদের বিভিন্ন আসক্তি থেকে দূরে রাখছে। তাই আশা করি, এভাবেই এগিয়ে যাবে ‘বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’চারদিকে ছড়াবে জ্ঞানের আলো। চৌধুরী মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, পাঠাগারটি সাধারণ মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করছে যা তাদের ভবিষ্যত আলোকিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম জানান, এ রকম একটি চমৎকার উদ্যোগ নেয়ার জন্য পাঠাগারের সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানাই। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে এই পাঠাগারটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমি প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে সবসময় পাশে থাকব।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান বলেন, অনেক মানুষ আছেন, যারা বই পড়তে ভালবাসেন। তবে নিয়মিত বই কিনে পড়ার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য সহজে বই পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পাঠাগারটি শুধু বই পড়াকে ঘিরে নয়, আমরা বিনোদনের আয়োজনও করে থাকি। প্রতি বছর প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, বৃত্তি প্রদান, কবিতা আবৃতি, গান এবং কোরানের হাফেজদের নিয়ে আল-কোরান পাঠসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা সভা করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, পাঠাগারের সংগ্রহে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক বই রয়েছে। যেমন- ধর্মীয়, সাহিত্য, বিজ্ঞানমনস্ক, ইতিহাসমূলক, জীবনী, চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, শিশু সাহিত্য ছাড়াও একাডেমিক বই বিদ্যমান। পাঠাগারটির উন্নয়নে যারা বই দিয়ে এবং বিভিন্ন সময় সুপরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। - জনকন্ঠ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com