ইমাম গাজ্জালীর জীবনকথা

প্রকাশের সময় : 2021-07-19 09:47:10 | প্রকাশক : Administration
ইমাম গাজ্জালীর জীবনকথা

এসএম আরিফুল কাদের: প্রত্যেক যুগেই পথহারা মানুষদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য ঐশীজ্ঞান সমৃদ্ধ এক বা একাধিক মনীষীর আবির্ভাব ঘটে এ ধরাতে। তাঁরা নবী বা রাসুল নন; বরং বিশ্বনবী (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে এবং তাঁরই আদর্শের দিকে আহ্বান করেন মানবজাতিকে। তাঁদেরই একজন ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক ও যুক্তিবিদ আল গাজ্জালী। তাঁর পুরো নাম আবু হামেদ মোহাম্মদ আল গাজ্জালী। তবে তিনি ‘ইমাম গাজ্জালী’ নামেই খ্যাতি লাভ করেছেন। ‘গাজ্জাল’ শব্দের অর্থ সুতা কাটা। এটা তাঁর বংশগত উপাধি। কারো মতে, পিতা মোহাম্মদ কিংবা পূর্ব পুরুষগণ সুতার ব্যবসা করতেন। তাই তাঁকে এ উপাধি দেওয়া হয়েছে।

তিনি ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত ‘তুস’ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন এবং শৈশবেই তিনি পিতাকে হারান। তবে পিতার মৃত্যুতে তিনি নিদারুণ অসহায় অবস্থায় পড়েও সাহস হারাননি। জ্ঞান লাভের প্রতি ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ। তাই তৎকালীন বিখ্যাত আলেম হযরত আহমদ ইবনে মুহাম্মদ বারকানী এবং হযরত আবু নসর ঈসমাইলের নিকট তিনি কোরআন, হাদীস, ফিক্হ ও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। কন্তু তাতে অতৃপ্ত হয়ে জ্ঞান অন্বেষণে পাগলের মতো ছুটে যান তৎকালীন দুনিয়ার প্রধান বিদ্যাপীঠ বাগদাদের নিযামিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল মালিক (রাঃ) এর নিকট ইসলামী দর্শন ও আইন বিবিধ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) ছিলেন লেখালেখি ও ভ্রমণপ্রেমী মানুষ। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নিযামিয়া মাদ্রাসার রেক্টর নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন এ পদের জন্য নিযুক্ত সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ।

ধর্ম-দর্শনে তাঁর ছিল প্রভুত জ্ঞান। ধর্ম ও যুক্তির নিজ নিজ বলয় তিনি নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘আত্মা কখনও ধ্বংস হয় না কিন্তু দেহ ধ্বংস হয়’। আত্মা মুত্যুর পর জীবিত থাকে। হৃদপিন্ডের সাথে আত্মার কোনো সম্পর্ক নেই। হৃদপিন্ড একটি মাংসপেশি মাত্র। মৃত্যুর পরও দেহে এর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। কিন্তু আত্মা মৃত দেহে অবশিষ্ট থাকে না। মৃত্যুর পর আত্মার পরিপূর্ণ উৎকর্ষ ও মুক্তি সম্ভবপর হয়ে থাকে’। গ্রীক দর্শনের প্রভাব ইসলামী দর্শনের উপর রেখাপাত করে রেখেছিল। এমনকি ইসলামী দর্শন হয়ে পড়েছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ইমাম গাজ্জালী কলম হাতে নেন। তিনিই সেই সময় দর্শনের মর্ম মূলে ঝাঁকুনি সৃষ্টি করেন।

অংকশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। এ সম্পর্কে তাঁর বিশেষ বিষয় ছিল ম্যাজিক স্কোয়ার। সাবিত ইবনে কোরা ও ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ম্যাজিক স্কোয়ার মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারে নি। তিনি নক্ষত্রাদির গতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধে দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে চার সহস্রাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

এ মহা মনীষী ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ইসলামের এক নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি ১১১১ খ্রিস্টাব্দের ৫০৫ হিজরী মোতাবেক সোমবার দিন ৫৫ বছর বয়সে এ নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিশ্বি বিখ্যাত এ মনীষী চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন মুসলিম জাহানে। লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com