ইসলামে প্রাণীদের প্রতি মমতা
প্রকাশের সময় : 2021-08-12 14:08:53 | প্রকাশক : Administration
আবু তালহা তারীফ: জীব জন্তু, সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তায়ালা যেমনি মানব ও জ্বীন তৈরি করেছেন তেমনি জীবজন্তুও তাঁর তৈরি। রাসুল (সাঃ) শুধু মানবজাতির প্রতি দয়ালু ছিলেন না, দয়ালু ও দয়াবান ছিলেন বিশ্বব্যাপি মাখলুকাতের প্রতি। যারা নিজেদের দুঃখ কষ্টের কথা মানুষের মত স্বাভাবিকভাবে অন্যের নিকট ব্যক্ত করতে পারে না সে বাকহীন জীবজন্তু ও পশু পাখীর দুঃখে রাসুল (সাঃ) এর হৃদয় ব্যথিত হতো। তাদের কষ্টে রাসুল (সাঃ) বিচলিত হতেন, কীভাবে তাদের দুঃখ কষ্ট লাগব করা যায় সে দিকে তিনি গুরুত্বসহকারে নজর দিতেন।
রাসুল (সাঃ) সারা জীবন মানব জাতির দুঃখ লাগবের জন্য যেরূপ পদক্ষেপ ও চিন্তা ভাবনা করেছেন তেমনি জীবজন্তু, পশু পাখির প্রতি দয়া প্রদর্শন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। রাসুল (সাঃ) কে বিশ্ব জগতের রহমত এর জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তো আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি। রাসুল (সাঃ) সবার জন্যই রহমত স্বরূপ ছিলেন”। (২১:০৭)
প্রাণী-জগতের সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে সে সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল জাহেলী যুগের মানুষরা। তারা পশুর সাথে পশুর মতো আচরণ করত, রাসুল (সাঃ) মদিনা শরীফ তাশরীফ নেয়ার পূর্বে সেখানকার লোকজন জীবিত উটের কুজঁ ও দুম্বার পিছনের বাড়তি গোস্ত কেটে খেত। রাসুল (সাঃ) জীবন্ত পশুর প্রতি এরূপ জাহেলী আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। সে জন্তুকে সাওয়ারের জন্য ব্যবহার করা হয় সে সকল জন্তুর উপর লাগাম বা জ্বীন বেধে তাকে কষ্ট দিতে এবং হয়রানী করতে নিষেধ করেছেন।
রাসুল (সাঃ) একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন প্রচুর ক্ষুধার তারনায় তার পিঠ পেটের সাথে মিশে গেছে, তখন এ দৃশ্য দেখে রহমতের নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর। যখন এরা সুস্থ সক্ষম থাকে তখন এদের উপর আরোহন কর, যখন ক্লান্ত হয় এর পূর্বে এদেরকে ছেড়ে দাও। রাসুল (সাঃ) বলেন, তোমার ঘোড়ার কপালের পশম, ঘাড়ের পশম ও লেজের পশম কর্তন করবে না।
রাসুল (সাঃ) এক আনসারীর বাগানে প্রবেশ করেন। সেখানে অবস্থানরত একটি উট নবী (সাঃ) কে দেখে কাঁদতে লাগল। নবী (সাঃ) তার কাঁধ ও মাথার পিছনের অংশে হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর তার কান্না বন্ধ হয়ে গেল। রাসুল (সাঃ) উটটির মালিকের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন; এই উটটি কার? তখন আনসার যুবকটিকে বললেন, আমার। প্রিয় নবী (সাঃ) বললেন,“আল্লাহ এই পশুর মালিক তোমাকে বানিয়েছেন, অথচ তুমি কি এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করনা? এই উট তোমার বিরুদ্ধে আমার নিকট নালিশ দিয়েছে; তুমি তাকে ক্ষুধার্থ রাখ এবং তাকে দিয়ে বেশি বোঝা বহন করাও। কিন্তু তাকে চাহিদা মোতাবেক খাবার দাওনা”। (আবু দাউদ)
জীব জন্তুকে কষ্ট দেওয়া এবং হয়রানী করা যাবে না। মনের শখ বা ফূর্তির জন্য অন্যায়ভাবে জীবজন্তু ও পশু পাখি অযথা হত্যা করাকে ইসলাম কঠিন ভাবে নিষেধ করেছেন। প্রাণীকে অন্যায় ভাবে আহত করা যাবে না। একদা রাসুল (সাঃ) এর পাশ দিয়ে একটি গাধা গমন কালে তিনি দেখতে পেলেন যে, তার মুখ মন্ডলে জলন্ত লোহা দিয়ে দাগ দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি বলেন, সে ব্যক্তির উপর লানত যে তার মুখে দাগ দিয়েছে। কারণ পশুর মুখে দাগ দিলে আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতি ঘটে। রাসূল (সাঃ) ব্যাঙ বধ করতেও নিষেধ করেছেন, পিপড়াকে পুড়িয়ে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। রাসুল (সাঃ) বলেন, “আগুণ দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া কেবল রব ছাড়া আর কারও জন্য সংগত নয়”। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
পশু প্রাণীকে শাস্তি না দিয়ে তাদেরকে ভালবাসা একান্ত কর্তব্য। যে চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া দেখাবে সে সাওয়াবের অধিকারী হবে। একদিন সাহাবারা রাসুল (সাঃ) এর নিকট আরয করলেন; হে আল্লাহর নবী চতুষ্পদ জন্তুর উপর দয়া করলেও কি আমরা সাওয়াবের অধিকারী হবো? রাসুল বললেন, “হ্যা যে কোন জীবের প্রতি দয়া করলে তোমরা তাতে সাওয়াবের অধিকারী হবে”। (বুখারী ও মুসলীম)