অপূর্ব সুন্দর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানা

প্রকাশের সময় : 2021-08-25 15:55:37 | প্রকাশক : Administration
অপূর্ব সুন্দর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানা

জেসিউর রহমান শামীম: রিপাব্ললিক অফ ঘানা পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্বাধীন দেশ। দেশটির পশ্চিমে আইভরি কোস্ট, উত্তরে বোরকিনা ফাসো, পূর্বে টোগো এবং দক্ষিনে গিনি উপসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। ঘানা শব্দটি এসেছে মেন্ডে ভাষা থেকে। অনেকে মনে করেন ঘানা নামটির উৎসমূলে রয়েছে গিনি। দেশটিতে প্রায় শতাধিক জাতি গোষ্ঠীর বাস। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং অপূর্ব সুন্দর সব প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্য আছে দেশটির ঝুড়িতে। বিচিত্র পশু-পাখি, নানা রকম প্রজাপতি, পোকা-মাকড় ও গাছ-পালা যে কোন ভ্রমণ পিয়াশু মানুষকে মুগ্ধ করে নিমেষেই।

সাব-সাহারান দেশ গুলোর মধ্যে ঘানা সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে বৃটিশ উপনিবেশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ঘানা বৃটিশ উপনিবেশের “গোল্ড কোস্ট” নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালের ১ জুলাই দেশটিকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পরে ১৯৯০ সালের দিকে ঘানায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর আফ্রিকান বাকী দেশগুলির স্বাধীনতার জন্য ঘানা নেতৃত্ব দেয়। ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫ শত ৬৭ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটিতে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে ঘানা পৃথিবীর ৮২-তম বৃহত্তম দেশ। ঘানার সরকারী ভাষা ইংরেজী, তবে বেশির ভাগ ঘানাবাসী কমপক্ষে একটি আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পারে। কমপক্ষে ৪০ টি ভাষা দেশটিতে প্রচলিত আছে। ঘানার মোট জনসংখার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ খৃষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী আর ইসলাম ধর্মের অনুসারী আছে প্রায় ১৮ শতাংশ। বাকিরা আফ্রিকান বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী।

ঘানার রাজধানী ও সর্ব বৃহৎ শহর হলো আক্রা। ২ শত ২৫ দশমিক ৬৭ বর্গকিলোমিটারের এই শহরটিতে প্রায় ২২ লাখ লোকের বাস। আক্রা নগরীটির গোরা পত্তন হয়েছিল পনের শতকের দিকে। আফ্রিকা মহাদেশ হল পৃথিবীর মধ্যে যে সব জায়গাতে দাস প্রথা ছিল তাদের নামের সর্ব প্রথমে। চৌদ্দ’শ শতকে এই ঘানাতেই হয়েছে দাস ব্যবসা। পৃথিবীতে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় লেক “লেক ভোলটা” এর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ঘানার সীমানায় পড়েছে। যেটি ঘানার মোট আয়তনের প্রায় সারে ৩ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি তৈরী করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৪ বছর। রঙ্গিন ও উজ্জ্বল কেন্ট কাপড় ঘানার ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তবে দেশের উত্তর অংশের মানুষ গারো রঙ এর কাপড় পরতে ভালোবাসে।

কাকুম ন্যাশনাল রেইন ফরেস্ট ঘানার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রানী এবং পাখি ছাড়াও এখানে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ক্যানোপি ওয়াকওয়ে। যা প্রায় এক হাজার ফুট দীর্ঘ ও ত্রিশ মিটার উচু। কাকুম ন্যাশনাল রেইন ফরেস্টে প্রায় ছয় শত পঞ্চাশেরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়। মোল হল ঘানার মূল জাতীয় উদ্যান। এখানে ২ শত ৫০ এরও বেশি প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। ওয়ালি জলপ্রপাত শুধু ঘানার নয় বরং পশ্চিম আফ্রিকার সর্বোচ্চ জলোপ্রপাত। জাতীয় উদ্যান গুলোর পর ঘানার আর একটি দর্শনীয় স্থান হল “লারাবঙ্গা” মসজিদ। যা দেশটির সবচেয়ে প্রাচীনতম মসজিদ। এলমেনা দুর্গ দেশটির আর একটি দর্শনীয় স্থান। এটি সাব-সাহারায় অবস্থিত প্রাচীনতম ইউরোপীয় ভবন। কেজেটিয়া পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম বাজার যা ঘানার কুমাসিতে অবস্থিত। এখানে পোশাক থেকে শুরু করে জীবন্ত পশু সব কিছুই পাওয়া যায়। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুসারে ঘানা আফ্রিকার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।

ঘানার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে ওয়াকাই। যেটি মটরশুটি, চাল, মাছ, ডিম, ভাজা মুরগী ইত্যাদির মিশ্রনে তৈরি করা একটি খাবার। ফোক এবং পপ সঙ্গীত ঘানার সংস্কৃতিরর একটি জনপ্রিয় দিক। ফুটবল ঘানার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ঘানার ব্ল্যাক স্টার ফুটবল দলটি তার অর্জনের জন্য বিশ্বেব্যাপী পরিচিত। ঘানায় সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে সে দেশের কফিন। মৃত্যুকে ঘানাতে উৎসব হিসাবে পালন করা হয়। কোন মানুষ মারা গেলে সে মানুষটির কর্ম ক্ষেত্রে যে পেশায় ছিল ঠিক সেই পেশার চিহ্ন অনুযায়ী কফিনটি বানানো হয়। যেমন জেলের কফিনটি মাছের মত, পাইলট এর কফিন বিমান এর সাদৃশ্য। সেই কফিনেই সে তার বাকীটা জীবন সুখে কাটাবে এটা তাদের বিশ্বাস। ঘানায় বাচ্চাদের নাম করণ করা হয় জন্ম বার দিয়ে। অর্থাৎ যেই সন্তান যে বারে জন্ম গ্রহণ করবে তার নামের পুর্বে সেই বারের নাম উল্লেখ থাকবে। ১৯৯৭ সালে ঘানার কূটনীতিক কফি আনান জাতি সংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হন।

২০০৭ সালে ঘানার উপকুলে তেল আবিষ্কৃত হয়। খনি শুরুর ৫ বছর পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয় । তেল আবিষ্কার ঘানার আর্থিক উন্নতি ঘটায়। ২০১৬ সালে দেশটি ৯০ মেক্টিক টন স্বর্ণ উৎপাদন করেছিল। সোনা উৎপাদনের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর ১১ তম দেশ। চকলেট তৈরির প্রধান উপাদান কোকো বীজ উৎপাদনের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম দেশ। এত কিছুর পরেও ঘানায় অভাব অনটন আছে। কৃষি দেশটির অর্থনীতির মুল ভিত্তি হলেও এখানকার বেশিরভাগ লোকই দরিদ্র। দেশটির গড় আয়ু বিশ্বের নিচ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে এবং শিশু মৃত্যুর হার নিচ থেকে চতুর্থ। ৮০ শতাংশ শিক্ষিতের এই দেশটির জি ডি পি বিশ্বের সর্বনিম্নের দিকের তৃতীয় স্থানে, যা প্রায় ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। মুদ্রা বা টাকা আবিষ্কারের আগে শামুক বা কড়ি ছিল ঘানার বিনিময় মাধ্যম। ঘানার সরকারী মুদ্রার নাম ঘানা সেডি। বাংলাদেশি প্রায় ১৪ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করে ১ ঘানাইয়ান সেডি পাওয়া যায়।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com