বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলিটা চালিয়েছিলো কে?

প্রকাশের সময় : 2021-09-08 11:21:51 | প্রকাশক : Administration
বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলিটা চালিয়েছিলো কে?

নিঝুম মজুমদার: বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলিটা ওইদিন চালিয়েছিলো কে? আমরা ঘটনা পরম্পরায় জানতে পারি মেজর মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে অনেকটা গ্রেপ্তার করার কায়দায় দোতলা থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো এই বলে যে, ‘স্যার আপনাকে আমাদের সাথে একটু আসতে হবে’বঙ্গবন্ধু এমন একটা অবস্থাতেও ঠান্ডা মাথায় তার প্রিয় তামাকের পাইপটা হাতে নিয়েছিলেন।

ইনফ্যাক্ট যখন গোলাগুলি শুরু হয়েছিলো এর কিছুক্ষণ আগে তখন তিনি পাঞ্জাবি পরে নীচেও গিয়েছিলেন। কাপুরুষ দা গ্রেট শফিউল্লাহ ফোনে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেয় পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবার, কিন্তু এই ব্রেইভ হার্ট মানুষটা সেই কথার দুই পয়সা পাত্তা দেন নাই। উল্টা মহিউদ্দিনকে দেখে বলেছিলেন, ‘এই বেয়াদপি করতেসস কেন? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’

সাক্ষীদের সূত্রে জানা যায় এই ধমক খেয়ে ওই অবস্থাতেও মহিউদ্দিনের হাত পা কাঁপাকাঁপি অবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। দোতলার সিঁড়িতে একটু নামতেই হঠাৎ করে নীচ থেকে যমদূতের মত উঠে এলো মেজর নূর আর মেজর বজলুল হুদা। আদালতের রায়, সাক্ষীদের জবানী বা স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হুদা আর নূর মহিউদ্দিন আর সাথের সৈনিকদের সরে যেতে বলে এবং হুদা ফায়ার ওপেন করে। পরে ক্রমাগত গুলি করতে থাকে নূর আর হুদা এবং বঙ্গবন্ধু সেখানেই মৃত্যুমুখে পতিত হন।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড নিয়ে আগেও লিখেছি বা বলেছি কিন্তু আজকের আমার এই লেখার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ অন্য। যমদূতের মতো এই খুনীদের ক্রুদ্ধ বন্দুক, অস্ত্র, এতো পাশবিকতা এসব নিজের চোখের সামনে দেখেও বঙ্গবন্ধু ওই সময় ধমক দিয়েছিলেন মহিউদ্দিনকে। ঠান্ডা মাথায় পাইপ নেওয়ার মতো অসম্ভব সাহসী এক বুক ছিলো পিতার। এমন একটা সময়ে পাইপ নেয়ার মতো সাহস কি একজন সাধারণ মানুষের হতে পারে কিংবা খুনীদের এতো উঁচু গলায় ধমক কে দিতে পারে?

কাওয়ার্ড শফিউল্লাহর পরামর্শ মতে বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে পারতেন। ইনফ্যাক্ট এই খুনের বর্ণনা, সাক্ষ্য, জবানবন্দী পড়ে আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধু খুব ভালোভাবেই পালিয়ে যেতে পারতেন যখন থেকেই গোলাগুলি শুরু হলো। কিন্তু এই অসীম সাহসী মানুষটা পালান নি। পাহাড়ের মতো অবিচল দাঁড়িয়ে ছিলেন তার সমস্ত সাহস নিয়ে। ইচ্ছে করলেই পিতা না মারার জন্য অনুরোধ করতে পারতেন খুনীদের, পারতেন খুনীদের কাছে অনুনয় বিনয় করতে। কিন্তু এই খুনীর দলের সাক্ষ্য বা স্বীকারোক্তি কোনটা থেকেই এমন অনুনয় বা বিনয়ের গল্প পাওয়া যায় না। বরং পাওয়া যায় তার গর্জন করা ধমকের সূত্র। হ্যাঁ, জাতির পিতা মৃত্যুর আগে খুনীদের ধমক দিয়েছিলেন। এমন ধমক, যেখানে খুনীরা পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিলো।

শুধু বঙ্গবন্ধু কেন? বেগম মুজিবের কথাই আপনারা বিবেচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর শরীর ছুঁয়ে এক অপার্থিব যন্ত্রণায় তিনি কেঁদে উঠেছিলেন। বলেছিলেন, পরিবারের আর কাউকে না মারতে। শুধু তাকে যেন এখানেই মেরে ফেলে তার স্বামীর পাশে। ইচ্ছে করলে তিনি অনুনয় বিনয় করতে পারতেন। হাতে-পায়ে ধরতে পারতেন খুনীদের। বাঁচার আকুতি করতে পারতেন। কিন্তু করেছিলেন কি? উত্তর হচ্ছে, না। করেন নি। করবার চেষ্টাও করেন নি। স্বামীর সাথে সহমৃত্যু চেয়েছিলেন এই মানুষটি।

চিন্তা করে দেখেন, এই মহিয়সী নারীর কথা। তার প্রেম আর ভালোবাসার কথা। যেই ভালোবাসা এই যুগের সস্তা ভালোবাসা নয়, এই যুগের পুতু পুতু আর ন্যাকা প্রেম নয়। এই প্রেম এমন-ই এক মানুষের প্রেম যিনি পিতার পাশে থেকে পিতাকে করেছেন আরো বড় এক ছায়া আর বড় এক মানুষ। ইয়েস, তিনিই বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গমাতা। স্বামীর লাশ দেখে তাঁর পাশেই খুন হতে চেয়েছিলেন বেগম মুজিব। মৃত্যুর আগে এক চুল পরিমান ভয় পাননি বঙ্গবন্ধু কিংবা বেগম মুজিব। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। বুক চিতিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন আমাদের এই অভাগা জাতির জনক।

কিন্তু একটা মজার ব্যাপার জেনে রাখেন যে, হুদা মৃত্যু থেকে যাতে বাঁচতে পারে সে কারণে হুদার আইনজীবি আদালতে এক হাস্যকর যুক্তি দেয়। সে বলে, হুদা সাইজে ছোট, ফলে এমন সাইজের ছোট মানুষের এমন গুলি চালাতে বা খুন করতে পারার কথা না। এই যুক্তি শুনার পর আদালতে হাসির রোল পড়ে যায়। খুনীরা বাঁচার জন্য তার শরীর আকৃতি বা গঠন নিয়েও যুক্তি দিতে পিছপা হয়নি। অন্যদিকে ওই পাহাড় সম মানুষ সমস্ত সাহস নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। এই হচ্ছে ছুঁচো আর বাঘের পার্থক্য।

আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিলো যার দৃঢ়তা ছিলো, তেজ ছিলো আর ছিলো অসংখ্য দুর্বলতা। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিলো, ভালোবাসতে জানতেন। তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। - (সংকলিত) ফেসবুক থেকে

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com