করোনা দিনের ডায়েরি...
প্রকাশের সময় : 2021-09-08 11:31:23 | প্রকাশক : Administration
২৫ তম পর্ব
ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন
অবশেষে করোনা এলো! সত্যি সত্যি এলো! এসে প্রমাণ করলো এতদিন বাংলাদেশে করোনা আসেনি। অন্তত সেই অর্থে আসেনি। লক্ষকোটি মানুষের শতসহস্র কথা, হাজারো জল্পনা আর ভীতিকর আতঙ্ক; সবই ছিল গুজব। গেল তিনমাসে নানা লেখায় বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম এসব সত্যি নয়; গুজব। কিন্তু ততটা কাজ হয়নি। প্রমাণ করতে পারিনি। সব গুজব আর ভীতিকর ভাবনাকে অসার প্রমাণ করার জন্যে করোনার সত্যি সত্যি আসার প্রয়োজন ছিল। এবং শেষমেষ এসেছে। বাংলার পাড়ায় মহল্লায় এসে প্রমাণ করেছে, এতদিন সত্যি সত্যি আসেনি সে।
আসেনি বলে সে জানেও না, কতকিছু হয়ে গেল তাকে নিয়ে বাঙালী সমাজে। স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালী। সবাই স্বাধীন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও স্বাধীন। তাই তাকে নিয়ে যার যা ইচ্ছে লিখছে। যার যা ইচ্ছে তাই বলার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তর্কের চেয়ে বিতর্ক করছে বেশি। বিতর্কের চেয়ে কুতর্ক। লক্ষ্য একটাই। করোনাকে পুঁজি করে বিশেষ একজনকে আক্রমণ। সামাজিক যোগাযোগের অধিকাংশ পোস্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আক্রমণের লক্ষ্য এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার।
অথচ হাসিনার চরম শত্র“কাদের সিদ্দিকীও গেল সপ্তাহের লেখায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, দেশের এই কঠিন ক্রাইসিস মোকাবেলা করার সাধ্য বর্তমান বাংলায় হাসিনা ছাড়া আর কারো নেই। তিনি বলেছেন, সমালোচনা বন্ধ করে শুধু একবার চিন্তা করুন, শেখ হাসিনা দুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রীর আসনে না থাকলে দেশের কি অবস্থা হতো! হাসিনার ভুল থাকতেই পারে। ভুল আমাদের নেই? আমরা নিজেদের ভুল দেখি না; শুধু দেখি শেখ হাসিনার ভুল। অদ্ভুত আমাদের খাসিলত। আমরা নিজের বেলায় আইনজীবী; পরের বেলায় বিচারক।
সরকার ত্রাণ দিল। তার জন্য কেউ প্রশংসা করল না। ত্রাণ বিলির একেবারে শুরুর দিকে সারাদেশে আড়াই’শ ভাগের ১ ভাগ ত্রাণ চুরি হলো। সময় ক্ষেপণ না করে চোরদের সরকার গ্রেফতার করল। ত্রাণ উদ্ধার করল, মামলা হলো। এসবে সরকার কোন প্রশংসা পেল না। উল্টো তথাকথিত সুশীল সমাজের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগে স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারকে চোর বলল। চোর ধরা সরকারকেই চোর বলল।
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে কৃষকের ধান কেটে দিতে বলল। অনেক নেতাকর্মী তাই করল। এক-দুই জন কাঁচা ধান কাটল। সবাই মিলে কাঁচাধানের ছবিটিই ব্যাপকভাবে প্রচার করল। কৃষকের ধান কাটা একটি কল্যাণকামী প্রতীকী কাজ। কল্যাণমূলক কাজ উৎসাহ ও প্রেরণা পাওয়ার অধিকার রাখে। তা হলো না। কাঁচা ধান যারা কাটল তাদের সমালোচনার পাশাপাশি যারা ভাল কাজ করল তাদের প্রশংসা পাওয়ার কথা। তাদের ভাগ্যে তা জুটল না।
আসলে আমরা জেনেটিক্যালি নেগেটিভ থিংকিং এর মানুষ। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির এমনই মানুষ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া খুব কঠিন। সত্যি সত্যি আমার কি চাই, তা নিজেও জানি না। করোনার শুরুতে সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করল। অনেকে বলল, মানুষের জীবন রক্ষায় মক্কা মদিনায় নামাজের জামাত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মসজিদগুলো এখনো উম্মুক্ত কেন? সরকার যখন মসজিদের জামাত সঙ্কুচিত করল তখন তারাই কাঁচাবাজারের ছবি প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগে লিখতে শুরু করল, ‘বাজার খোলা, মসজিদ বন্ধ!’
অথচ বাজার বন্ধ করলে মানুষ না খেয়ে মরবে। তবুও ভন্ডরা এসব লিখে মানুষকে ভুল বোঝালো, কনফিউজ্ড করলো। করোনা নিয়ে পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি কনফিউশানে রেখেছে ডব্লিউএইচও। এটি ইচ্ছাকৃত। তারা প্রতিটি ঘটনায় পরস্পর বিরোধী দুটো করে বক্তব্য দিচ্ছে; যেন মানুষ বিভ্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তিনটি বক্তব্যও দিচ্ছে। মানে প্রতিটি ম্যাটারে একবার বলছে হ্যাঁ, আবার বলছে না। আবার বলছে হ্যাঁ। এটি ইচ্ছাকৃত।
এখানে তাদের ভিন্ন স্বার্থ আছে। স্বার্থ না থাকলে করোনায় ঔষধ অথবা ভ্যাকসিন নিয়ে ভাল কোন খবর পেলে নড়েচড়ে বসতো। লাফিয়ে উঠতো। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন নিয়ে আসছে আগষ্টেই। সারা পৃথিবী আশায় আছে। সেদিন ভ্যাকসিন নয়, খোদ চমৎকার কার্য্যকরী ঔষধের সন্ধান দিল; ডেক্সামেথাসন। সারা বিশ্ব খুশিতে টগবগ। শুধু চুপ করে আছে ডব্লিউএইচও। পাশাপাশি অসম্ভব ভাল কাজ করা আইভারমেকটিন এবং ফেভিপিরাভির নিয়ে একটি কথাও বলে না।
যেমনি ডবিউএইচও বলে না, তেমনি মিডিয়াও বলে না। ভাল খবর তাদের জন্যে না। তাদের দরকার শুধুই নেগেটিভ খবর। তারা কেউই চায় না করোনা পরাজিত হোক। করোনায় বিজ্ঞানের সফলতা নিয়ে মিডিয়ায় কোন রিপোর্ট নেই। মাতামাতি নেই। মাতামাতি কেবল কয়জন মারা গেল আর কয়জনকে আক্রান্ত করলো। চরম ধ্বংসাত্মক মাতামাতি।
এদের জ্বালায় জাতি নীরবে জ্বলছে। কেউ জ্বলছে হার্ট এ্যাটাকে, কেউবা ব্রেইন স্ট্রোকে। করোনায় যত না মানুষ মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে ঢের মারা যাচ্ছে এদের নেগিটিভিটির তাড়নায়। এদের থামানো দরকার। অচিরেই থামানো দরকার। চলবে...