প্রাণ ফিরেছে বুড়িগঙ্গার, নদীতে মিলছে মাছ

প্রকাশের সময় : 2021-09-27 16:23:27 | প্রকাশক : Administration
প্রাণ ফিরেছে বুড়িগঙ্গার, নদীতে মিলছে মাছ

বুড়িগঙ্গার কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে উৎকট ঝাঁজালো গন্ধের নোংরা কালো পানির এক নদীর চেহারা। তবে বর্তমানে পাল্টে গেছে এ দৃশ্য। কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে ঢাকার জন্মদাত্রী বুড়িগঙ্গায়। এ নদীর পানি এখন বেশ স্বচ্ছ। কমেছে দুর্গন্ধ আর দূষণ, বেড়েছে অক্সিজেনের পরিমাণও। নদীর বিভিন্ন জায়গায় জাল-বড়শি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও চোখে পড়ে প্রতিদিন। শরতের এই সময়ে এখন নদীতীরে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায় নির্মল বাতাসে, যা গত দুই যুগে ভাবাই যায়নি।

‘বুড়িগঙ্গার সন্তান’ ঢাকার বয়স ছাড়িয়ে গেছে ৪০০ বছর। বাকল্যান্ড বাঁধের তীরে গড়ে ওঠা এই শহরের উন্নয়নের জঞ্জাল বুড়িগঙ্গাকে ধ্বংস করেছে তিলে তিলে। গত দুই দশকে এর দূষণ পৌঁছেছে বিপজ্জনক পর্যায়ে। দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছিল ১ দশমিক ০২ মিলিগ্রামে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পানিতে মাছ তো দূরের কথা কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকাও অসম্ভব। কিন্তু বর্ষা এবং লকডাউনে অনেকটা বদলে গেছে সেই পানির রং ও গন্ধ। অক্সিজেনের মাত্রা পৌঁছেছে ৪ মিলিগ্রামে, যা গত কুড়ি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বদলে যাওয়া পানিতে সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় ঝাঁপ দিয়ে শৈশবের দূরন্তপনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে শিশুদের। এ যেন বুড়িগঙ্গারই ‘শৈশবে’ ফিরে যাওয়া।

বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামপুর, সদরঘাট, সোয়ারিঘাট, কামরাঙ্গীরচর হয়ে বছিলা ব্রিজ পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, পানিতে এখন আগের মতো দুর্গন্ধ নেই, পানির ঘন কালো রং উধাও। আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও টলমলে। নদীর অনেক জায়গায় জাল দিয়ে মাছ ধরছে নদীতীরের বাসিন্দারা। পাওয়াও যাচ্ছে নানা জাতের ছোট ও মাঝারি মাছ। নদীর পানি হাতে তুলে নিলে বোঝার উপায় নেই এটা বুড়িগঙ্গা নাকি মেঘনার পানি।

স্থানীয়রা জানায়, পানি বদলে যাওয়ায় বুড়িগঙ্গায় মাছ আসতে শুরু করেছে। সদরঘাট ও বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় কয়েকজনকে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে। শ্যামপুরে বড়শি দিয়েও মাছ ধরছিলেন কয়েকজন।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা নৌকার মাঝি ইস্কান্দার (৫০) বলেন, ‘গত ২৫ বছরেও বুড়িগঙ্গায় এমন ভালো (স্বচ্ছ) পানি দেখিনি। আগে তো নদীতে নৌকা নিয়ে নামলে গন্ধে বমি চলে আসত। এখন তেমন কোনো গন্ধ নেই। বাবুবাজার ব্রিজের নিচে তো দেখলাম জাল দিয়ে মাছ ধরতে। এটা আগে চিন্তাও করা যায়নি।’ তবে বুড়িগঙ্গার তলদেশে এখনও ময়লার স্তূপ। নদীতে জাল ফেলার পরে জালের সঙ্গে এখনও ভেসে ওঠে দুই দশক ধরে জমতে থাকা ময়লা।

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা কলেজ ছাত্র মোঃ মোবিন বলেন, ‘কাজ না থাকলে বুড়িগঙ্গার পাড়ে আসতাম না গন্ধের কারণে। এখন কোনো গন্ধ নেই।’

ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল পারাবত লঞ্চের স্টাফ আজিজ মিয়া বলেন, ‘ঘাটে (সদরঘাট) এলে এখন বোঝার উপায় নেই এটা বুড়িগঙ্গা নাকি কীর্তনখোলা নদী (বরিশাল)। আগের মতো গন্ধ নেই। পানিও আগের চেয়ে অনেকটা পরিষ্কার। এরকম সব সময় থাকলে হয়।’

এদিকে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নিয়ে যা ঘটছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। দিন, মাস, বছর থেকে এখন দশক পার হলেও বুড়িগঙ্গা নদীর পানিদূষণ রোধে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর হয়নি। আদালত দায়িত্বপ্রাপ্তদের তলব করছেন, তিরস্কার করছেন এবং অসন্তোষও প্রকাশ করছেন। কিন্তু এসব সত্বেও কাজ হয়েছে অনেক কম। এখনও মানব বর্জ্যরে পাশাপাশি কিছু শিল্পবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, ইটভাঁটা, পলিথিন ইত্যাদির গন্তব্য বুড়িগঙ্গা। বিআইডব্লিউটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গায় ৬৮টি স্যুয়ারেজ সংযোগ রয়েছে, এর ৫৬টিই ওয়াসার।

কেরানীগঞ্জ ও শ্যামপুরের কলকারখানার বর্জ্য এবং নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের বর্জ্য বুড়িগঙ্গার দূষণের অন্যতম কারণ। বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা কেরানীগঞ্জ ও শ্যামপুরের বেশ কিছু কারখানায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের ইটিপি স্থাপনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে দূষিত বর্জ্য নদীতে পড়া অনেকটাই কমে আসে। সম্প্রতি একটি আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসা বুড়িগঙ্গায় তাদের স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এসব কারণে গত দুই বছরে বুড়িগঙ্গার দূষণ কিছুটা কমেছে। এখন মাছও পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ।

বর্ষা ও লকডাউন ছাড়াও সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কারণে বুড়িগঙ্গার পানি এখন স্বচ্ছ। এটা খুবই ভালো খবর। এখন এ অবস্থা যেকোনো উপায়ে ধরে রাখতে হবে। গত জুন মাস থেকে বুড়িগঙ্গার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন বেড়েছে। নদীর বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাট পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। ২০১৯-এর ডিসেম্বর ও এপ্রিল ২০২০-এর তুলনায় আগস্ট ২০২১-এ বুড়িগঙ্গার পানির মান ভালো হয়েছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মান ভালো করার জন্য গবেষকদের ভূমিকা অপরিসীম। একই সঙ্গে সরকারের পূর্ণ সহায়তা ও সদিচ্ছাও জরুরি। নদী ও নদীর পাড় থেকে অবৈধ দখল, শিল্পবর্জ্য শোধনে ইটিপি/সিইটিপি ব্যবহার, ত্র“টিপূর্ণ নৌযান মেরামত ও নৌযানে পয়ঃপ্রণালীর আধুনিকায়ন, নদীতে শহরের বর্জ্য ছাড়ার আগে স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমেই বুড়িগঙ্গার আগের রূপ স্থায়ীভাবে ফিরে পাওয়া সম্ভব। - সূত্র: অনলাইন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com