একজন ক্যাপ্টেন নওশাদ! একজন ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস!

প্রকাশের সময় : 2021-09-27 16:24:59 | প্রকাশক : Administration
একজন ক্যাপ্টেন নওশাদ!  একজন ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস!

বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে মাস্কাট-ঢাকা পথে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। মাঝ আকাশে ক্যাপ্টেন হার্ট অ্যাটাক করলে উড়োজাহাজটি ভারতের নাগপুরে এসে জরুরি অবতরণ করে। উড়োজাহাজটিতে পাইলটের দায়িত্ব পালন করছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। এতে আরোহী কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।

মাঝ আকাশে হার্ট অ্যাটাকের পরও সফলভাবে উড়োজাহাজ অবতরণ করানো এই সেই পাইলট নওশাদ, যিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি ফ্লাইট দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করতে পারায় পেশাগত দক্ষতা ও নৈপুণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বরের ঘটনা। সেদিন ভোররাতে মাস্কাট বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ প্লেনে ১৪৯ যাত্রী ও সাতজন ক্রু নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল। বিজি-১২২ ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করার পর মাস্কাট বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদকে জানানো হয়, রানওয়েতে টায়ারের কিছু অংশ পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত তার প্লেনের হতে পারে। ওই তথ্যের পর অধিকতর নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাপ্টেন নওশাদ তার ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।

এ সময় তাঁর অনুরোধে ঢাকায় জরুরি অবতরণের জন্য সব ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবতরণের আগে ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি নিয়ে রানওয়ের উপরে দুই বার লো-লেভেলে ফ্লাই করেন। তখন দেখা যায়, আসলেই প্লেনটির পেছনের দুই নম্বর টায়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন নওশাদ অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত টায়ার ও ল্যান্ডিং গিয়ারসহ নিরাপদে ফ্লাইটটি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। সবাই সুস্থ ও নিরাপদে উড়োজাহাজ থেকে নেমে আসেন।

ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালে হুট করেই নিথর হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। এক দিকে ক্যাপ্টেন নওশাদের নিথর দেহ, অন্য দিকে ১২৪ জন যাত্রী। ঘাবড়ে না গিয়ে তখনই ককপিটের কন্ট্রোল নেন সঙ্গে থাকা ফার্স্ট অফিসার। ঘোষণা করেন মেডিকেল ইমার্জেন্সি। ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুরের ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি।

২৭ আগস্ট বিজি ০২২ ফ্লাইটে থাকা ক্রদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেদিনের ঘটনা। সেই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছাড়াও ২ জন ককপিট ক্রু ও ৬ জন কেবিন ক্রু ছিলেন। হুট করে ককপিট থেকে ফার্স্ট অফিসার জানালেন ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ককপিটে গিয়ে আমরা তার অবস্থা দেখে কেবিন ক্রুরা বুঝতে পারি তিনি মারাত্মক ভাবে হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

ফার্স্ট অফিসার মেডিকেলে ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে দ্রুত জরুরি অবতরণের জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ শুরু করেন। নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুর এয়ারপোর্টে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজ। আগে থেকেই বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিলো। রানওয়েতে নামা মাত্রা দ্রুত ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতলে পাঠানো হয়।

ক্যাপ্টেন নওশাদের সিভিআর হার্ট অ্যাটাক করার পর তার দ্রুত চিকিৎসার জন্য ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে দ্রুত জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হন তরুণ ফার্স্ট অফিসার। তার নাম মোস্তাকিম পিয়াস। মাত্র ৪ বছর আগে বিমানে যোগ দিয়েছেন।

ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিম পিয়াস। ইন্ডিয়ার হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। যিনি দুই দফায় প্রায় তিন শতাধিক যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানের ককপিটে বসে।

বাংলাদেশে এমন বীরের জন্ম হয়েছে বারবার, আমরা তাদের মনে রাখি না। কয়েকদিন মিডিয়া আর ফেসবুকে হয়তো আলোচনা হবে কিছু, আবার ভুলে যাবো তাদের। অথচ এ ধরণের মানবপ্রেমী দায়িত্বশীল মানুষগুলো হতে পারে ভবিষ্যত প্রজন্মের আইকন। ক্যাপ্টেন নওশাদ আর পাইলট মোস্তাকিম পিয়াস বাংলাদেশের গর্ব। তাদের মতো ক্রান্তিবীরদের জাতীয় সম্মাননা দেওয়া হলে তরুণ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উজ্জ্বীবিত হবে। - সূত্র: অনলাইন

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com