আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর
প্রকাশের সময় : 2021-10-21 10:58:25 | প্রকাশক : Administration
ওয়াজেদ হীরা: অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়ানো এবং চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমাতে এই উদ্যোগ নেয় সরকার। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির প্রায় পাঁচ বছর পর ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই মেগাপ্রকল্প অনুমোদনের জন্য উঠতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭শ’ ৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশে যে কটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে তার কোনটিই গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল এসব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মাতারবাড়িতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প নেয়া হয়। দেশের জন্য এটি হবে ঐতিহাসিক বিষয়। টার্মিনাল হলে বড় বড় জাহাজ আসবে, এক লাখ টন সম্পন্ন জাহাজ। সমুদ্রপথে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে এটি। এর মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনীতিতে গতি তো আসবেই পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়বে।
২০১৬ সালে জাইকা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে যাতে মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। জাপানের কাশিমা ও নিগাতা (পূর্ব) নামের দুটি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হবে দেশের প্রথম এ গভীর সমুদ্রবন্দর। এ বন্দরে থাকবে একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। বন্দরটিতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ।
এ বন্দর চালু হলে একদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়বে, অন্যদিকে চাপ কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। জাইকার সার্ভে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ ২ হাজার টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলম্বো, জহরলাল নেহেরু, করাচী ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। এ মাতারবাড়িতে অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কন্টেনার পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প।
মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টার্মিনাল থাকবে। এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউএস কন্টেনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়তে পারে না। যার ফলে মাদার ভেসেলগুলো বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফলে ফিডার জাহাজে করে কন্টেনার আনা-নেয়া করতে হয়।
প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টিইইউএস আমদানি পণ্য কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের ১৬ মিটার গভীরতার জন্য মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ থাকায় একসঙ্গে ৮ হাজার কন্টেনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর ফলে এখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বন্দরে কন্টেনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, বহুমুখী টার্মিনাল ও কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রাসঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম ক্রয়, সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পরামর্শক সেবা দেয়া হবে। - সূত্র: অনলাইন