প্রকাশের সময় : 2021-10-21 11:22:36 | প্রকাশক : Administration

করোনা দিনের ডায়েরি...

২৮ তম পর্ব

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন

 

মাসের পর মাস গেল। অথচ এখনো বোঝা গেল না করোনার গতিপথের ধরন। এখনও নিশ্চিত নয়। কিভাবে ছড়ায় কিংবা কোথায় কবে যায় বলা মুশকিল। করোনা কি এখন ছড়াচ্ছে, নাকি ক’মাস আগেই এক সাথে সবখানে ছড়িয়ে আছে সেটাও বোধগম্য নয়। গোপনে গাপনে করোনা কোথায়, কোন দেশে এবং কবে, কিভাবে ঢুকেছে কেউই বলতে পারছে না। মহাপন্ডিতের মত বলার চেষ্টা করছে মাত্র। কিন্তু পান্ডিত্যের মুরোদে ঘাটতি আছে বলে বলতে পারছে ঘটনা ঘটার পরে। প্রকাশ্যে ঘটার আগে কিছুই পারছে না।

করোনা প্রকাশ্যে জাপানে ঢুকেছে দুইধাপে। প্রথম ধাপটি ছিল ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে। ঘটা করে চীন থেকে বিশালাকার ব্রিটিশ প্রমোদতরীতে করে প্রশান্ত পাড়ের দেশে করোনার আগমন। প্রথম আগমনে চারদিকে হুরাহুরি পড়ে যায়। জাপানের সকল সংবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয় জাহাজটি। দিনে দিনে জাহাজটিতে রোগী বাড়তে থাকে এবং অল্প ক’দিনেই বারো আনা লোক করোনায় আক্রান্ত হয়। কেবল জাপানীজ নয়; জাহাজে থাকা বৃটিশ, আমেরিকান এবং কানাডিয়ানসহ বাঘাবাঘা সব রাষ্ট্রের লোকজনও আক্রান্ত হয়।

তবে করোনা জাহাজীদের কষে ধরলেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। জাপানে তেমন ভাবে ছড়াতে পারেনি। হাজার কয়েক লোক আক্রান্ত হলেও আগে থেকে প্রচলিত জাপানীজ ফ্লু মেডিসিন এভিগান (ফ্যাভিপিরাভির) খেয়ে একের পর এক সবাই হাসপাতাল ছেড়েছে। এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাপান হয়েছে করোনা মুক্ত। বলা যায়, ফ্যাভিপিরাভিরের জোরে জাপানে পাত্তাই পায়নি করোনা। একদিকে শক্তিশালী এবং কার্যকরী ফ্যাভিপিরাভির, অন্যদিকে নিয়ম মেনে চলা জাপানীজ জাতির অভাবনীয় সহযোগিতায় কেবল প্রথম ধাপের নয়, দ্বিতীয় ধাপের করোনাও লেজেগোবরে পালিয়ে যায়।

জাপানে করোনার প্রথম ধাক্কায় আমি ঢাকায় ছিলাম। ফেরার সময় জাপানে ব্যাক না করে সোজা শোনিমের কাছে গেলাম। কানাডা ভালো রকমের নিরাপদ ছিল বলেই গেলাম। করোনা নিয়ে তখনও কানাডা নির্বিকার, নিরুত্তাপ। করোনা আছে, কিন্তু ভীতি নেই। টুকটাক হাতেগোনা করোনার রোগী ছিল বটে। কিন্তু কানাডিয়ানদের মনে করোনা নিয়ে সামান্য শঙ্কা ছিল না। ভয় ছিল না। ছিল না মোকাবেলার কোন আয়োজনও।

কিন্তু আমি এসে সারতে পারিনি, অমনি করোনা নড়েচড়ে উঠলো। নড়েচড়ে উঠলো সরকারও। যেন আমি আসিনি, স্বয়ং করোনার বার্তাবাহক এসেছে। আমি আসার দিন সাতেকের মধ্যে মহা হুলস্থুল পড়ে গেল চারদিকে। লকডাউন, জরুরী আইন সব জারি হয়ে গেল। সবার মত আটকা পড়লাম আমিও। ভীনদেশে ঘরের মধ্যে কঠিনভাবে আটকা। আজো আছি। দিন গেল, মাস গেল। করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া গেল না আজও।

তবে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে ভীষণ ভাবে। মে মাসের শেষের দিক থেকে অবস্থা দারুণভাবে বদলাতে শুরু করেছে। সংক্রমণ কমতে কমতে একেবারে নেমে আসায় আমরা বেরুতে শুরু করেছি। ঈদের পরদিন শোনিমকে নিয়ে প্রথম বেরিয়েছি। মুক্ত বাতাসে গা ভাসিয়ে বহুদিন পরে অনুভব করেছি নির্মল বাতাস। আহ! কী শান্তি! এরপর থেকেই শুরু হলো মাস্ক পড়ে নিয়মিত বাইরে বেরোনো। প্রথম প্রথম বেশিদূর যেতাম না। বাসার আশপাশেই থাকতাম। জন্মের পরপর মুরগীর ছোট ছোট বাচ্চা মাকে রেখে যেমনি খুব বেশি দূরে যায় না, আমরাও তেমনি বাসা থেকে খুব দূরে যেতাম না।

দিন দ্রুত বদলাতে লাগলো। বদলাতে লাগলো মানুষের মন। সাহস আসলো মানুষের মনে। মানুষ পার্কে যায়, শপিং এ যায়। কাজেও যায়। তবে বিধিবিধান মেনে যায়। গেল সপ্তাহে আমরা গেলাম ফিশিং এ। ফ্যামিলি ফিশিং। কয়েকটা ফ্যামিলি মিলে গেলাম। যত না মাছ ধরা, তারচেয়ে ঢের বেশি হৈ-হুলোড় করা। তবে মাছও ধরেছি। তেলাপিয়া সাইজের গুটিকয়েক মাছ আমার বড়শিতেও ধরা পড়েছে। কিন্তু বাজিমাত করেছে আমার শোনিম। ফিশিং ডে'র সবচেয়ে বড় মাছটি ওর বড়শিতেই বেঁধেছে।

বিষয়টি আমাদের কয়েক ফ্যামিলির টক অব দি ডে হলো। কিন্তু বাংলাদেশে টক অব দি কান্ট্রি হলো ইতালির খবর; ইতালি ক্ষেপেছে। বাংলাদেশের উপর ক্ষেপেছে। হায়রে ইতালি! যখন ওদের দেশে করোনা ভয়াবহ ছিল আমরা ওদেরকে ছোট করে দেখিনি। বরং পাশে দাঁড়িয়েছি। ওদের দেশ থেকে আক্রান্ত হওয়া বাংলাদেশীদের নিজেদের দেশে আসতে দিয়েছি। বিমানে ভরে করোনার ইতালি-ভার্সান নিয়ে এসে আমরাই বরং বিপদে পড়েছি। আর এখন ওরা কিছুটা সেইফসাইডে যেয়ে আমাদেরকেই গ্রহন করতে চাচ্ছে না। উল্টো বাজে মন্তব্য করছে আমাদের নিয়ে। 

এটাই রিয়েলিটি। করোনা মানুষ চিনিয়ে দিল। মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে ক্যাচালও বাঁধিয়ে দিল। বলা যায় না, করোনা উত্তর এই করোনাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কি না। তথাকথিত উঁচু জাতের রাষ্ট্রসমূহ যেভাবে গরীব তথা অসহায় রাষ্ট্রকে ইচ্ছেমত হেয় করা শুরু করেছে, এতে করে এসব রাষ্ট্রের মানুষদের প্রতিহিংসা পরায়ণ হওয়াটা কোনভাবেই অস্বাভাবিক হবে না। সমস্যার শুরু হবে হয়ত সেখান থেকেই। করোনা উত্তর সে এক নতুন সমস্যা।

সমস্যার কথা আজ থাক। বাংলাদেশ এখন করোনা নিয়ে খারাপ অবস্থায় নেই। সংক্রমণ ক্রমাগত নীচের দিকে। মৃত্যুও কমতির দিকে। অন্যদিকে সুস্থ্যতার হার বাড়ছে। এসবই মুক্তির লক্ষণ। জাপান, কানাডার মত ইনশালাহ্ আমরাও মুক্তি পাবো! পাবো না কেন? করোনা টিকা সেপ্টেম্বরেই আসছে। বাংলাদেশে ফ্যাভিপিরাভির কার্যকরী করোনা মেডিসিন হিসেবে যথেষ্ঠ গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। মৃদু সংক্রমণে ফ্যাভিপিরাভির কার্যকর; ১০ দিনের মধ্যে করোনা মুক্তি-ঔষধটির ট্রায়াল শেষে এমন দাবি করেছেন দেশের চিকিৎসকরা।

এর চেয়েও সহজলভ্য কার্যকরী মেডিসিনও ঢাকাতেই আছে। দেশের ট্রায়ালে প্রমাণিত আইভারমেকটিন। লক্ষণের শুরুতে এই ঔষধটি প্রয়োগ করতে পারলে সাফল্য শতভাগ। আর দামও অবিশ্বাস্য রকমের কম। মাত্র ৩০ টাকায় করোনা মুক্তি। এরপরও কি করোনার ভয়ে আমরা পুতুপুতু করবো? ইতালি আর ইউরোপ আমাদের কতটা তুচ্ছ করলো সেটা নিয়ে মন খারাপ করবো? মোটেই করবো না। আমরা তো প্রায় জিতেই গেছি। আর কয়টা দিন মাত্র। সব দূর্মুখদের মুখে ছাই দিয়ে আমরা করোনা তাড়াবো। বিজয় উল্লাস করবো; আনন্দ উল্লাস। ঘরে করবো, বাইরে করবো। সারাদেশের সব মানুষ মিলে করবো। চলবে...

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com