অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ
প্রকাশের সময় : 2021-10-21 11:34:09 | প্রকাশক : Administration
জেসিউর রহমান শামীম: আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ছোট দেশ গুলোর একটি মালদ্বীপ। এটি বিশ্বের ৮ম ক্ষুদ্রতম দেশ। ভৌগলিক ভাবে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত মহাসাগরে প্রায় ১ হাজার ১৯২ টি ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপ দেশ। দেশটির সরকারী নাম ‘রিপাবলিক অফ মালদ্বীপ’। দেশটি শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং এশিয়া মহাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দ্বীপ গুলোর সমন্বিত আয়তন মাত্র ২ শত ৯৮ বর্গকিলোমিটার বা ১১৫ বর্গ মাইল। মালদ্বীপে এত গুলো দ্বীপ থাকা সত্বেও মানুষের বসবাস মাত্র কয়েকটিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিলুপ্তির আশঙ্কায় আছে দেশটি। বিজ্ঞানিদের মতে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে এই দ্বীপগুলির সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত মহাসাগরে ডুবে থাকা একাধিক আগ্নেয়গিরির লাভা এর উপর ঐ সময় প্রবাল নামের এক ধরণের জীব বংশ বিস্তার শুরু করে। এক প্রজন্মের মৃত প্রবালের উপর আরেক প্রজন্মের জন্ম হয়। এভাবে প্রবালের স্তুপ জমতে জমতে সমুদ্র পৃষ্ঠে নতুন দ্বীপের জন্ম দেয়। মালদ্বীপের প্রতিটি দ্বীপ এভাবেই সৃষ্টি।
মালদ্বীপ পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। ৪ লক্ষ মানুষের দেশ মালদ্বীপের রাজধানী মালেতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস। মালে এর আয়তন প্রায় সারে ৫ বর্গ কিলোমিটার। এটিই পৃথিবীর সর্বাধিক ঘনবসতি পূর্ণ শহর গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রশাসনিকভাবে এটি একটি কেন্দ্রীয় দ্বীপ, একটি বিমান বন্দর, এবং সিটি কাউন্সিল পরিচালিত আরোও দুটি দ্বীপ রয়েছে। মালের দ্বীপগুলি প্রায় প্রতিটি একটি অপরটির সাথে পাকা সড়কের মাধ্যমে যুক্ত। মালের আশেপাশে রয়েছে বহু পর্যটন কেন্দ্র ও রিসোর্ট। মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় বন্দরটি এ দ্বীপেই অবস্থিত। যেটি দেশটির সকল বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল।
ভাষা ও সংস্কৃতি পর্যালোচনা করলে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যায় মালদ্বীপে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন দ্রাবিড় জনগোষ্ঠি। খৃষ্টপূর্ব ৩০০-৩৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার রাজ্য থেকে এখানে এসেছিল। বারো শতকে এখানে পারসিকরা মালদ্বীপবাসীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেন। মালদ্বীপ পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট মুসলিম দেশ। এ দেশে ৯৯ শতাংশ মানুষ মুসলিম। বাকী ১ শতাংশ অন্যান্য ধর্মের বিশ্বাসী। তবে বারো’শ শতাব্দীর আগে এ দেশে বৌদ্ধ ধর্ম পালন করা হত। সাপ্তাহিক ছুটির দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে মালদ্বীপের বেশ মিল রয়েছে। মালদ্বীপেও পশ্চিমা রীতির বিপরীতে বাংলাদেশের মত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি পালন করে থাকে। মালদ্বীপ ১৯৬৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
দেশটির অর্থনীতি পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সাধারণত পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্র তট বিভিন্ন স্ফটিক জাত বালু দ্বারা গঠিত হয়। কিন্তু মালদ্বীপের সমুদ্রতট অত্যন্ত দুর্লভ প্রবালজাত সাদা বালি দ্বারা গঠিত। এ ধরনের প্রবাল সমুদ্রতট পৃথিবীর মোট সমুদ্রতটের তুলনায় ৫ শতাংশ। গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রভাবিত অঞ্চল হওয়ায় মালদ্বীপে সারা বছরই গরম পরে। এ দেশের গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মালদ্বীপ ভ্রমণের সবচেয়ে উপযোগি সময় হলো নভেম্বর থেকে এপ্রিল। সে সময় তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে। বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পর্যটক এ সময়টাতেই ভ্রমণে আসে মালদ্বীপে। অনেকের কাছেই হানিমুনের সবচেয়ে পছন্দের দেশ মালদ্বীপ। তাই মালদ্বীপকে হানিমুন ডেস্টিনেশনও বলা হয়।
মোট আয়ের ২৮ শতাংশ এবং মোট বৈদেশিক আয়ের ৬০ শতাংশই আসে পর্যটন শিল্প থেকে। মাছ মালদ্বীপের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সম্প্রতি দেশটি অবকাঠামো, শিল্প ও মৎস্যসম্পদ খাতে বেশ উন্নতি করেছে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতেও তাদের যথেষ্ঠ উন্নতি হয়েছে। যার ফলে সার্ক ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি। এদেশে শিক্ষার হার অত্তন্ত ভালো। দেশটিতে প্রায় শত ভাগ লোক শিক্ষিত। সেই সাথে বেকারত্বের হার একেবারেই কম।
মালদ্বীপের খাদ্যভ্যাস প্রণালী মূলত মাছকে কেন্দ্র করে, কেন্না পর্যটনের পরেই মৎস্য শিল্প মালদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প। প্রতিদিনের খাবার হিসাবে মাছ ও ভাত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন মালদ্বীপবাসী। কিন্তু পর্যটকদের জন্য রিসোর্টে পরিবেশিত অধিকাংশ খাবারই আমদানীকৃত। প্রাচীনকাল থেকেই সামদ্রিক মাছ দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। মালদ্বীপের মুদ্রার নাম মালদ্বীপিয়ান রুফিয়া। ১ মালদ্বীপিয়ান রুফিয়া সমান বাংলাদেশি প্রায় ৫ টাকা ৫০ পয়সা।