রিপাবলিক অফ উগান্ডার অদেখা সৌন্দর্য

প্রকাশের সময় : 2021-12-01 15:24:22 | প্রকাশক : Administration
রিপাবলিক অফ উগান্ডার অদেখা সৌন্দর্য

জেসিউর রহমান শামীম: আফ্রিকার মুক্তা (পার্ল অফ আফ্রিকা)। নাম দেখেই মনে হচ্ছে দেশটির সৌন্দর্যের কথা। কিন্তু এই সৌন্দর্যের ভিতরে লুকিয়ে আছে অজানা আর ভয়ঙ্কর রূপ। দেশটির নাম রিপাবলিক অফ উগান্ডা। পুর্ব আফ্রিকার এই স্থলবেষ্টিত দেশটির পুর্ব দিকে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং দক্ষিণে তানজানিয়া অবস্থিত। বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া হ্রদ দেশটির দক্ষিণের তীর ঘেঁষে আছে। এমন সব অবাক করা বিষয় আছে এই দেশটিতে যা অন্য দেশে খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

আনুমানিক ২ হাজার বছর আগে বান্টু ভাষাভাষী জনগন এই দেশে সর্ব প্রথম অভিবাসী হয়ে বসবাস শুরু করে। যাদের একমাত্র পেশা ছিল শিকার করা। তাছাড়াও তাদের লোহার কাজ সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা ছিল। ১৪ ‘শ ও ১৫ ‘শ শতকে রাজত্ব বিস্তারকারী কিতারা সাম্রাজ্য এখানকার প্রাচীতম রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এর পর দেশটিতে উত্থান ঘটে বুগান্ডা, আঙ্কোলে ও বুনিইওরো-কিতারা সাম্রাজ্যের। আর এই বুগান্ডা রাজ্যের নাম থেকেই উগান্ডা নামের উৎপত্তি। ১৮৯৪ সালে এই উগান্ডা ব্রিটিশের প্রোডেক্টোরেটে পরিনত হয়। উগান্ডা ১৯২৬ সালে তার বর্তমান সীমানা নির্ধারণ করে এবং ১৯৬২ সালে এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ৭৯তম দেশটি ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুরে প্রায় ৪ কোটি ২৮ লাখ মানুষের বসবাসের স্থান। যার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী এবং বাকীদের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী।

সোয়াহিলি ও ইংরেজি ভাষা দুইটি উগান্ডার সরকারী ভাষা। এর মধ্যে সোয়াহিলি ভাষা চারটি দেশের জাতীয় বা সরকারি ভাষা এবং একই সাথে আফ্রিকান ইউনিয়নের দাপ্তরিক ভাষা গুলির মধ্যে একমাত্র আফ্রিকান ভাষা। লুগান্ডা নামের একটি আঞ্চলিক ভাষাও প্রচলিত এই দেশে।

উগান্ডার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী কাম্পালা। মার্ছার (যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন পরামর্শক সংস্থা) কাম্পালাকে পূর্ব আফ্রিকার বসবাসের জন্য সেরা শহর হিসাবে অবিহিত করেছে, যেটি নাইরোবি ও কিগালি থেকেও এগিয়ে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভবন এই কাম্পালা শহরটিতে অবস্থিত। এর মধ্যে কাম্পালা হিলে অবস্থিত উগান্ডার গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ। এটি শুধু উগান্ডা নয় বরং পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। মসজিদটি চালু হয় ২০০৭ সালে। গাদ্দাফি মসজিদে এক সাথে ১৫ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারে। দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে আরও আছে উগান্ডা মিউজিয়াম, উগান্ডান ন্যাশনাল থিয়েটার, নাকাসোরো মার্কেট এবং সেন্ট বালিকুডেমে মার্কেট। উগান্ডার মানুষেরা কোন কিছুর ওজন মাপাতে দাড়ি পাল্লা বা কিলোগ্রাম এর হিসাব করে না বা করতেও চায় না। ওদের ওজন হিসাব করার জন্য দোকানে একটা নির্দিষ্ট বাটি থাকে। সে বাটিতে করেই এক বাটি দুই বাটি হিসাব করা হয়। উগান্ডায় এখনোও মানুষ খেকো মানুষ পাওয়া যায়। আর নিজের পা কে টোপ বানিয়ে অজগর সাপ ধরে।

উগান্ডা রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশ। রাষ্ট্রপতি একই সাথে রাষ্ট্রের ও সরকারের প্রধান। এ দেশের আইন শৃঙ্খলা অনেক শক্ত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় ভারী অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে এবং ক্রিমিনাল দেখা মাত্র ক্রস-ফায়ারের নির্দেশনা থাকে। 

জাতীগত ভাবে উগান্ডার মানুষ কালো। সাধারন ভাবে তাদের চলা ফেরা দেখে ভয়ংকর লাগতে পারে, কিন্তু আসলে তারা খুবি নরম মনের, তারা যে কোনো মানুষকে খুব তারাতারি আপন করে নেয় এবং মিশে যায়। অনেক হাসি খুশি ও রসিক মনের মানুষ তারা এবং সেই সাথে তারা অতিথী পরায়ণ মানুষ। ২০১২ সালে উগান্ডা ছিলো পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। কলা আর ভুট্টা উগান্ডার মানুষের জাতীয় খাবার। তারা প্রায় তিন বেলায় কলা আর ভুট্টার তৈরি খাবার খায়। এ খাবার ছাড়াও অন্যান্য খাবার ও উপভোগ করে তারা। দেশটিতে গাছ কাটা নিয়ে একটি প্রথা প্রচলিত আছে আর তা হলো কেও যদি একটি গাছ কাটে তাহলে একই সময় তাকে আরও তিনটি গাছ লাগাতে হয়। কলা, আনারস এবং এবাকাডো উৎপাদনে উগান্ডা পৃথিবীর প্রথম সারির দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এলকোহল মজুদ আছে উগান্ডায়।

এখনও উগান্ডায় গরিলা দেখতে পাওয়া যায়। এখনও দেশটিতে প্রায় ৭শত ৫০ টির মত পাহাড়ী গরিলা দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে অন্য কোনো দেশে হাতে গোনা কয়েকটা গরিলা আছে মাত্র। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারে দেশটির প্রায় সকল মানুষই উপভোগ করে। দিনটি তারা নাচ গান ও আনন্দ করে কাটায় ঠিক যেন ঈদের দিন। উগান্ডায় বিশেষ অতিথিকে তেলে ভাজা ফরিং খেতে দেয় স্থানীয়রা। শুধু মাত্র বিশেষ বিশেষ মানুষের জন্যই এই আয়োজন করে থাকে।

উগান্ডার ৫০ শতাংশ জনগণ এর বয়স ১৪ বছরের নিচে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত উগান্ডা বিশ্বের সবচেয়ে তরুন দেশ। কৃষি প্রধান দেশ হওয়াতে দেশটি এখনো উন্নয়নশীল। বিভিন্ন বাংলাদেশী কৃষি নির্ভর কোম্পানি কৃষি কাজ করার উদ্দেশ্যে উগান্ডাতে জমি ইজারা নিয়েছে। উগান্ডান শিলিং উগান্ডার মুদ্রার নাম। বাংলাদেশী ১ টাকা দিয়ে পাওয়া যায় প্রায় ৪১ উগান্ডান শিলিং। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৩০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৭ শত ৬৯ মার্কিন ডলার।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com