সিমির জামদানি যাচ্ছে ইউরোপে
প্রকাশের সময় : 2021-12-29 11:40:00 | প্রকাশক : Administration
বাংলাদেশের নারীরা এখন আর বেকার বসে নেই। ঘর কন্যা সামলানোর পাশাপাশি ঘরে বসেই করছেন ব্যবসা। দিন যত যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। বর্তমানে পোশাক, শাড়ি-গয়না থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী, ঘর সাজানোর পণ্য, শিশু খাদ্য, প্রসাধন সামগ্রীসহ এমন কিছু নেই, যা অনলাইনে কেনা-বেচা হচ্ছে না। আর ই-কমার্স নামে পরিচিত এ ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে।
কাজী শাহনেওয়াজ আফরিন সিমিও এমন একজন উদ্যোক্তা। শুরুতে কারো সহযোগিতা না পেলেও নিজ প্রচেষ্টা আর পরিশ্রমে নিজের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। অর্জন করেছেন ক্রেতাদের আস্থা। দেশ তৈরি পণ্য যাচ্ছে সুদূর ইউরোপেও।
এই নারী উদ্যোক্তার জন্ম পঞ্চগড় উপজেলার গলেহাকান্তমনি গ্রামে। বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার। নিজের একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করার। ছাড়িয়ে তার সামরিক বাহিনীতে চাকরি করারও ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এইচএসসি পাস করার পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর বিবিএ শেষ করেছেন। ইচ্ছা ছিল এমবিএ তে পড়ার। কিন্তু সংসারের নানা ঝামেলায় হয়ে ওঠেনি। চাকরির সুযোগ থাকলেও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে করা হয়নি। ঘরে বসেই কিছু করার চিন্তা নিয়ে এগোতে থাকেন।
সেই থেকে সিমি দর্জিকে দিয়ে নিজের পছন্দমতো ডিজাইনের ড্রেস বানাতেন। সেগুলোয় সুঁই-সুতা দিয়ে হাতের কাজ করতেন। শাড়ি এবং ওয়ালম্যাট তৈরি করতেন। সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসার দিকে হাঁটতে থাকেন। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চোখের সমস্যায় সুঁই-সুতার কাজ আর আগায়নি। তখন তার দিন কাটে হতাশায়। কিন্তু সিমি এত অল্পতে দমে যাননি। মনে থাকা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করতে থাকেন। পরিবার ও সন্তানকে সময় দেওয়ায় বাইরে চাকরি করা সম্ভব হয়নি। তাই করোনার কথা মাথায় রেখে ভাবেন অনলাইনে ব্যবসা করবেন। ঘরে বসেই প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন। সেই থেকে জামদানি ও দেশীয় শাড়ি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ‘জুনাইরাস সিক্রেট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলেন।
সিমির পেজের সিগনেচার পণ্য ঢাকাই জামদানি শাড়ি। নারায়ণগঞ্জের জামদানি পলি থেকে শাড়িগুলো আনা হয়। এছাড়া টাঙ্গাইল ও তাঁতের শাড়ি বিক্রি করা হয়। এগুলো সংগ্রহ করা হয় হোল সেলারদের কাছ থেকে। শাড়ির জন্য বিদেশ থেকেও অনেক অর্ডার আসে। সেগুলো কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রথম দিকে একটু ভয় পেতাম সঠিক বিজনেস পলিসি বুঝতাম না কিন্তু সেল হওয়া শুরু করলো। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। আমি অনলাইন বিজনেস নিয়ে স্টাডি শুরু করলাম, বিভিন্ন ওর্য়াকশপ, সেমিনার এ জয়েন হতাম, এভাবেই ২ মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের এক কাস্টমারের থেকে প্রায় ৫৫০০০ টাকার বেশি একটি অর্ডার পেয়ে গেলাম। উনি দ্বিতীয়বার আমার কাছে আবার অর্ডার করে আমার রিপিট কাস্টমার হয়ে গেলেন। আমি এভাবেই মনের জোর পেলাম আর আমার স্বপ্ন পূরণের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গেলাম।
ঘর কন্যা সামলে সফল এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, অনেকে আমাকে একটা প্রশ্ন করে দুইটা ছোট বাচ্চা নিয়ে কিভাবে আমি দুইটা বিজনেস চালাই আমার কষ্ট হয় না? এই প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকে প্রতিনিয়ত হতে হয়। আমি তাদের এই উত্তরই দেই যে না আমার বাচ্চা দুইটা নিয়ে বিজনেস চালাতে কোন সমস্যা হয় না। তবে হাসবেন্ড এর সহযোগিতা ছাড়া এতোদূর আসা সম্ভব হতো না। সে কখনো কোন কাজে আমাকে বাধা দেয়নি। সে অর্থনৈতিকভাবে ও মানসিকভাবে আমাকে সাপোর্টদিয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি কষ্ট আর পরিশ্রম না করলে জীবনে কেউ সফল হতে পারে না। আমার কথা আমাকে পারতেই হবে, একদিন আমার পরিচিতি হবে নিজের একটা ব্র্যান্ড হবে আর এর জন্য তো পরিশ্রম করতেই হবে, তাই না?
নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে আপনার উপদেশ কী এমন প্রশ্নের জেবাবে সিমি বলেন, সত্যি বলতে আমি নিজেও তরুণ উদ্যোক্তা। আমি বিশ্বাস করি মনের জোরটাই বড় কথা। কারও কোন কথায় কান না দিয়ে মনের জোরটাকে একত্রিত করে কাজ করে যেতে হবে, তাহলেই সফলতা আসবে। - সূত্র: অনলাইন