বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক দেশের আদর্শ

প্রকাশের সময় : 2022-01-12 15:57:43 | প্রকাশক : Administration
বাংলাদেশের অগ্রগতি অনেক দেশের আদর্শ

মাছুম বিল্লাহ: ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এক সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতিকে অতুলনীয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে গোটা পৃথিবী তার প্রশংসায় মুখর, কারণ জাতিগঠনে সে সফল, সফল একটি সতেজ এবং প্রসরণশীল অর্থনীতির সৃষ্টিতে।

সত্তরের দশকের গোড়ায় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের শেষে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, সেদিন অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, সে হবে এক ব্যর্থ রাষ্ট্র (‘ফেলড স্টেট’)। আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তো বাংলাদেশকে ‘বাস্কেট কেস’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অথচ আজ সমস্ত মাপকাঠিতেই এই দেশ দ্রুত অগ্রগতির পথে, এমনকি তুলনীয় অন্য অনেক দেশের সামনে আদর্শ হওয়ার দাবিদার।

বাংলাদেশ মোটের উপর একটি শান্তিপ্রিয় আইন-অনুগামী দেশ হিসাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে দেশটি। মৌলবাদের অভ্যুত্থান ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ তাকে বিপথগামী করতে পারেনি, আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে বা আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে চায়নি এই রাষ্ট্র। এই সংযম কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতি বজায় রাখতেই সাহায্য করেনি, শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেও সহায়ক হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষার খরচ সীমিত রাখতে পেরেছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে জনসাধারণের প্রয়োজন মেটাতে।

স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশ, অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তান শতকরা ৭০ ভাগ বেশি সম্পন্ন ছিল। এখন পাল্লাটা উল্টে গিয়েছে। এক দিন যে ভূখণ্ড ছিল পাকিস্তানের হতদরিদ্র, ব্যাধিজর্জর এক অঞ্চল, আজ তা অর্থনীতির মোট আয়তনে এবং আপেক্ষিক বিচারেও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ এখন আনুমানিক শতকরা ৪৫ ভাগ বেশি সম্পন্ন; তার মাথাপিছু আয় ২,৫৫৪ ডলার, পাকিস্তানের মাত্র ১,৫৪৩ আমেরিকান ডলার।

পাকিস্তানের জিডিপি এখন ২৯৬ বিলিয়ন (২৯,৬০০ কোটি) ডলার, বাংলাদেশের ৪০৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পণ্য ও পরিসেবা রফতানির মোট অঙ্ক ৩৮ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ২৬ বিলিয়ন ডলার; বিদেশি ঋণের দায়ে পাকিস্তানের মাথা বিকিয়ে গিয়েছে, চীন, সৌদি আরবের মতো দেশের কাছে বা আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে ভিক্ষাপাত্র হাতে ঘুরতে হয় তাকে।

বাংলাদেশ তার সীমিত বাজেটের অনেকটাই খরচ করছে শিক্ষায় (সরকারি খরচের ১১ শতাংশ), স্বাস্থ্য পরিসেবায় (৪ শতাংশ), যেখানে প্রতিরক্ষায় তার বরাদ্দের অনুপাত প্রায় ৯ শতাংশ। পাকিস্তানের সরকারি বাজেটের ১৮ শতাংশ খরচ হয় প্রতিরক্ষায়, শিক্ষায় মাত্র ২.৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ১.২ শতাংশ! পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আর সন্ত্রাস সৃষ্টির কাঠামোর পিছনে বিপুল টাকা খরচ হয়, যা মূল্যবৃদ্ধিতে বড় রকমের ইন্ধন জোগায়; পাকিস্তানে মূল্যবৃদ্ধির হার এখন অত্যন্ত চড়া ৯ শতাংশেরও বেশি, বাংলাদেশে সেটা ৫.৬ শতাংশ। ১ ডলারের দাম এখন ১৭৮ পাকিস্তানি রুপি, আর ৮৫ বাংলাদেশি টাকা, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকার দাম পাকিস্তানি রুপির দ্বিগুণ।

সবচেয়ে বড় কথা হল, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান সভ্য দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের বড় উদ্যোগীরা বিরাট সব বাণিজ্য-সংস্থা তৈরি করেছেন, বিশ্ব অর্থ বাজারে ক্রমশ যাদের পরিচিতি বাড়ছে। এক সময় কেবল বাংলাদেশের পোশাক রফতানির কথাই বলা হত। এখন সেখানে ঔষধ, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং এবং অর্থলগ্নি-প্রযুক্তির মতো নানা ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি হচ্ছে।

শেয়ার বাজার এখনও প্রাথমিক স্তরে, কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তার সম্ভাবনাটাকে ইদানীং নজর করছেন। বিশ্ব লগ্নি বাজারে উপদেষ্টা সংস্থা ডন গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট “বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী”, কারণ সে দেশের আর্থিক নীতি রচনার ইতিহাস ভরসা দেয়, দেশের জনবিন্যাস উন্নয়নের অনুকূল- তরুণ, শিক্ষিত, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ওয়াকিবহাল বহু কর্মী আছেন সেখানে এবং দেশের অর্থনীতিতে একটা ভারসাম্য আছে উত্তরোত্তর জাতীয় আয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ আসছে পরিসেবা থেকে।

পশ্চিমবঙ্গ এবং বিৃটিশ ভারতের এক কালের রাজধানী কলকাতা অতীতে ছিল ভারতের সবচেয়ে অগ্রবর্তী এবং সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর অন্যতম। পশ্চিমের বাঙালিরা পুবের ‘বাঙাল’দের পশ্চাৎপদ, গরিব এবং সাংস্কৃতিকভাবে অনগ্রসর বলে মনে করত। আজ ১,৬৯৫ ডলার মাথাপিছু আয় আর ২১০ বিলিয়ন ডলার মোট আয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের পিছনে, অংশত পাকিস্তানেরও। স্পষ্টতই, শেষ হাসি পূর্ব বঙ্গের মানুষই হাসছেন। শাবাশ বাংলাদেশ!

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com