উন্নয়নের সঠিক পথে থাকতে উদ্ভাবনের বিকল্প নেই

প্রকাশের সময় : 2022-01-26 11:13:14 | প্রকাশক : Administration
উন্নয়নের সঠিক পথে থাকতে উদ্ভাবনের বিকল্প নেই

সঞ্জীব রায়: ভিশন ২০২১ অনুযায়ী আমাদের দেশ এখন “ডিজিটাল বাংলাদেশ”। এইতো ২০২১ এর ডিসেম্বরের ১২ তারিখ “ভিশন ২০২১” এর ১২ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় “ডিজিটাল বাংলাদেশ” বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্য পূরণের পথে দেশ এগিয়েছে বহুদূর, দ্রুততার সাথে। সমানতালে হয়েছে ডিজিটালাইজেশন আর উন্নয়ন। কিন্তু এই ডিজিটাল আর ডেভলপমেন্ট, দু’টি নিয়েই সমালোচনার কোন অন্ত নেই। সমালোচনা আর সংকটের দিকে দৃষ্টি রেখেই যদি সমাধান আর সম্ভাবনার পথে হাঁটতে চাই তাহলে একমাত্র উপায় হলো উদ্ভাবনী হওয়া।

উদ্ভাবন নিয়ে অনেক কথাই হয়, আসলে উদ্ভাবন কি? সহজ ভাষায় বললে এটি হলো নতুনের প্রবর্তন। যে কোন চলতি বা রীতিবদ্ধ ধারা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধারার সূচনা করাকেও উদ্ভাবন বলা যায়। আবার পরিবর্তিত বাস্তবতায় চলার জন্য নতুন ধরনের কৌশল, ব্যবস্থা ও উপকরণ নিয়ে আসার মাধ্যমেও উদ্ভাবনকে বোঝা যায়। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উন্নয়নের সাথে উদ্ভাবন যোগ করার কোন বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী গত দুই দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে উদ্ভাবন সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিশ শতকজুড়ে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর দয়া-দানের মুখাপেক্ষী থাকার মানসিকতা নিয়ে গরীব ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শুধু ক্ষুধা ও দারিদ্রের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে। সেই মানসিকতার পরিবর্তনেও   উদ্ভাবনী চিন্তা ও দক্ষতা ভূমিকা রেখেছে। নিজের সম্পদ, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কিভাবে আরো বাড়িয়ে তোলা যায়, আরো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় সেই লক্ষে একটি জাতি যদি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয় তাহলে উন্নয়নের পরনির্ভরতার দশা কেটে যাবে। সেজন্য উন্নয়ন ও উদ্ভাবনকে সমান্তরাল রেখায় নিয়ে আসতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আসবে তখনই যখন আমরা আরো বেশি মনযোগী হবো উদ্ভাবনে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি, সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়, সামাজিক এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল নিয়ে অনেকেই আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নিয়েছেন আবার কেউ হয়েছেন ডিজিটাল চোর। আবার সামষ্টিকভাবেও অনেক ভালো উদ্যোগের নজির আছে, কিন্তু দুষ্টচক্র ডিজিটাল ফাঁদ পাততেও পিছিয়ে নেই। এখানেই উদ্ভাবনের ভাবনা ও কৌশল একটি ভারসাম্য নিয়ে আসতে পারে। অর্থনীতি বা ব্যবসায় অর্থনীতির ভাষায় বললে, বিনিয়োগ, লাভ আর ক্ষতির ভারসাম্য রক্ষা করে নতুন সুযোগকে কাজে লাগানোর নামই হলো উদ্ভাবন। এই উদ্ভাবনকে একটি জাতীয় চেতনায় রূপ দিতে হবে। আর তার জন্য দরকার সামগ্রিক পরিকল্পনা ও সামষ্টিক উদ্যোগ। সুচিন্তিত পলিসি আর গণমুখী ব্যবস্থা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সত্যিকারের সুফল নেয়া তো যাবেই না বরং বাড়বে ডিজিটাল চোরের উপদ্রপ। আর সব অর্জন মাটি করে দেবে “ডিজিটাল ডিভাইড” বা বিভাজন। গ্রাম ও শহরের বিভাজন, গরীব আর ধনীর বিভাজন, পাহাড় আর সমতলের বিভাজন, নারী আর পুরুষের বিভাজন। ডিজিটাল লিটারেসি বা স্বাক্ষরতা নিশ্চিত না করে ডিজিটাল ইনোভেশন এর কথা চিন্তা করা তাই মূর্খতার শামিল।

দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একটি উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তোলা খুবই জরুরি। সেই লক্ষ্য এবং ভাবনা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এবং সরকারি আমলাতন্ত্রে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় ও যৌথ উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি জনমানুষকে সম্পৃক্ত করে কার্যকরী পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিতে হবে। সরকার গৃহিত এ-টু-আই বা অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের দোড়গোরায় সেবা পৌঁছে দেয়াসহ বিভিন্ন সেবার সহজীকরণে উদ্ভাবনের নজির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেসরকারিভাবে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে তার কোন তথ্য পাওয়াই মুশকিল। বেসরকারি খাত হয়তো নিজ প্রয়োজনেই ইনোভেশনে গুরুত্ব দেবে কিন্তু সমন্বয় ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়নে সেই উদ্যোগের কার্যকারিতা যাচাই করা যাবে না।

বাংলাদেশ যখন ভিশন ২০৪১ নিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তখন ইনোভেশন বা উদ্ভাবনই হলো এর প্রধান কৌশল। মনে রাখা জরুরি, খুব শীঘ্রই অনেকগুলো খাত বিলুপ্ত হবে, প্রচলিত ধারার চাকরিগুলো আর থাকবে না। তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষতাসম্পন্ন একটি ভবিষ্যতের জন্য উদ্ভাবনী হবার কোন বিকল্প নেই। এই উদ্ভাবনের মূলসুর পৌছে দিতে হবে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, পাড়ায়-মহল্লায়, অফিসে-আড্ডায়, মাঠে-ঘাটে আর ফ্ল্যাটে-ফ্ল্যাটে। মানবসম্পদ উন্নয়ন, সুষম উন্নয়ন (বা সব শ্রেণির মানুষের আয় ও জীবনমানের উন্নয়ন) আর শিক্ষিত যুবকদের দক্ষ ও   উদ্ভাবনী করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় নতুন ধারার প্রবর্তন ঘটানোর দিকে বিশেষ মনযোগ দিতে হবে। তা না হলে উন্নয়নের এই বাংলাদেশকে আমরা সঠিক দিশায় রাখতে পারবো না। খেই হারাবো বারবার। অনেকগুলো বড় বড় ব্রীজ দেখে উন্নয়নের আনন্দে আটখানা হতে পারি; কিন্তু যদি সেতু পেরিয়ে সংযোগ সড়ক ঠিক না থাকে তাহলে পড়তে হবে খাঁদে। সেই ফাঁদে পা দেবো না আমরা, ভুল পথে যাবে না উন্নয়নের বাংলাদেশ যদি উদ্ভাবনই হয় আমাদের উন্নয়নের মূলমন্ত্র।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com