মায়ানমারের অদেখা সৌন্দর্য

প্রকাশের সময় : 2022-01-26 11:31:39 | প্রকাশক : Administration
মায়ানমারের অদেখা সৌন্দর্য

জেসিউর রহমান শামীম: পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ আছে যাদের সম্পর্কে বাইরের মানুষ খুব কমই জানে। এদের মধ্যে মায়ানমার অন্যতম। বর্তমানে সব থেকে অশান্ত দেশের তালিকায় এই দেশটি উপরের সারিতে। মায়ানমারে সেই প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ বসবাস করে আসছে। দেশটি বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত  ব্রহ্মাদেশ, বার্মা, মায়ানমার ইত্যাদি। বার্মার রাষ্ট্রীয় নাম দ্যা ইউনিয়ন অফ বার্মা । বাংলায় মিয়ানমার প্রজাতন্ত্র। সংক্ষেপে মিয়ানমার। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের ২,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি উপকূলবর্তী এলাকা। পশ্চিমে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ; উত্তরে চীন; ও পূর্বে লাওস ও থাইল্যান্ড। মায়ানমারে অনেক দামি-দামি সম্পদ রয়েছে: তেল, গ্যাস, তামা, টিন, রুপো, টাঙ্গস্টেন এবং অন্যান্য খনিজ ও সেইসঙ্গে নীলকান্ত, পান্না, চুন্নি ও যসমের মতো মূল্যবান পাথর। তাই প্রাচীন বাসিন্দারা এটাকে সোনার দেশ বলে ডাকত। অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল অরণ্য, যেখানে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ পাওয়া যায়, যেমন সেগুন, কৃষ্ণবর্ণ কাঠ ও পডাও। এই অরণ্যে অনেক বন্য জীবজন্তুদেরও আবাস। এর মধ্যে কয়েকটা হল বানর, বাঘ, ভালুক, মহিষ ও হাতি। দেশটি মূলত কৃষি প্রধান দেশ এবং প্রচুর পশু পালন করতে দেখা যায়।

মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৬,৫৭৮ বর্গকিলোমিটার। যা আয়োতনে বিশ্বে ৩৯তম এবং এশিয়া মহাদেশে ১০ম স্থানে অধিষ্ঠ করেছে। মায়ানমারে প্রায় ১০০টির মত নৃগোষ্ঠী আছে যার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ হল বামার গোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যা ৫৪ দশমিক ৪১ মিলিয়নের মধ্যে প্রায় ৩৭ মিলিয়নের প্রতিনিধিত্ব করে বামার সম্প্রদায়। ১৮৮৬ সালে বৃটিশ উপনিবেশকালীন বার্মিজ শব্দ বামার থেকে বার্মা নামের উৎপত্তি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হয়।

জান্তা সরকার জাতীয়তাবাদী প্রমাণ করতে গিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশকালের সব চিহ্ন মুছে দেয়ার অংশ হিসেবে বার্মা নাম পরিবর্তন করে মায়ানমার রাখে । রেঙ্গুন নামও পরিবর্তন করে ইয়াঙ্গুন করা হয়। মায়ানমার আর বার্মা স্থানীয়ভাবে একই অর্থ বহন করে। প্রচলিত অর্থ অনুযায়ী মায়ানমার শব্দের অর্থ হল দ্রুতগামী ও শক্তিশালী মানুষ। নাম অনেক দেশই পরিবর্তন করেছে যেমন- পার্সিয়া থেকে ইরান, কম্পুচিয়া থেকে কম্বোডিয়া, দক্ষিণ রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে ইত্যাদি। দেশের নাম বার্মা থেকে মায়ানমার করা হলেও, জাতীয়তা কিন্তু বার্মিজ হিসেবেই পরিচিত। কেউ মায়ানমারিজ হিসেবে পরিচিত নয়।

মায়ানমারের লোকেরা ঐতিহ্যগতভাবে নম্র, শান্তিপ্রিয়, ভদ্র ও অতিথিপরায়ণ। তারা পর্যটকদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখায়। বাচ্চারা সাধারণত বয়স্ক পুরুষদেরকে কাকু ও বয়স্কা মহিলাদেরকে কাকিমা বলে ডাকে।

মায়ানমারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বয়স্ক ব্যক্তিদের মসৃণ চামড়া দেখে প্রায়ই কোন না কোন মন্তব্য করে থাকে। মহিলারা বলেন এত তারুণ্যপূর্ণ ত্বকের একটা রহস্য হল, মুখে লাগানোর এক বিখ্যাত ফ্যাকাশে- সোনালি রঙের প্রসাধন তানাক্কা, যেটা তানাক্কা গাছ থেকে তৈরি। এটি ত্বকে তৈলাক্তভাব আনার ও ঠান্ডা করার সঙ্গে সঙ্গে কড়া গ্রীষ্মমন্ডলীয় সূর্যরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

মায়ানমারে পুরুষ ও মহিলার প্রধান পোশাক হল লুঙ্গি। একজন মহিলা লুঙ্গিকে স্কার্টের মতো কোমরে জড়ায় এবং লুঙ্গির খোলা প্রান্তকে কোমরে গুঁজে দেয়। অন্যদিকে একজন পুরুষ তার কোমরের সামনে খোলা দুই প্রান্তকে হালকাভাবে গিঁট বেঁধে দেয়। পরিপাটী ও হালকা হওয়ায় গ্রীষ্ম প্রধান দেশের জন্য লুঙ্গি একেবারে উপযুক্ত।

মায়ানমারের লোকেদের অনেক গুণ রয়েছে, কারণ তারা রেশম বোনা, হাতে গড়া গহনা তৈরি ও কাঠের ওপর নকশা করার ব্যাপারে খুবই দক্ষ। সেগুন, পডাও ও অন্যান্য কাঠ দিয়ে তারা নজরকাড়া মানুষ, বাঘ, ঘোড়া, মহিষ ও হাতির প্রতিকৃতি তৈরি করে। এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন টেবিল, ঘরের পার্টিশান ও চেয়ারের ওপর খুব সূক্ষ কারুকাজ করা হয়। মায়ানমারের লোকেরা গালা দিয়ে তৈরি সুন্দর কারুকাজ করা জিনিস যেমন বোল, থালা ও ঢাকনা দেওয়া বাক্স তৈরি করতেও পটু। যে বিষয়টা তাদেরকে অদ্বিতীয় করে তোলে।

মায়ানমারের ৮৫ শতাংশ লোক বৌদ্ধ; বাকি লোকেরা প্রধানত মুসলমান ও খ্রীষ্টান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের মতো মায়ানমারের অধিকাংশ লোকেদের জীবনেও ধর্ম এক মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ হিসেবে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা কোন মহিলাকে না ছোঁয়ার জন্য শপথ নেন। একজন পশ্চিমের লোক বাসে এই লেখা দেখে হয়তো অবাক হয়ে যাবে যে: “দয়া করে বাসের চালককে জিজ্ঞেস করবেন না যে আমরা কখন পৌঁছাব।” চালকরা কি অধৈর্য যাত্রীদেরকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে যান? না। আসলে বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের প্রশ্ন শুনে নাতরা (আত্মারা) দুঃখ পাবে এবং তারা হয়তো বাসকে দেরি করিয়ে দেবে!

আকাশছোঁয়া বিল্ডিংগুলোর মধ্যে ২,৫০০ বছরের পুরনো ৯৮ মিটার উচু সোনা মোড়ানো ত্রিকোণ গম্বুজ স্বেডাগোন পাগোডা রয়েছে দেশটিতে, যেটা প্রাচীন সময়কার ধনসম্পদ ও নির্মাণ কৌশলের কথা প্রকাশ করে। আনুমাণিক ৭,০০০ টা হীরে ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর দিয়ে এই গম্বুজটা মোড়ানো রয়েছে। এটার চূড়াতে একটা ৭৬ ক্যারেট হিরে রয়েছে। মায়ানমারে আরও অন্যান্য প্রাচীন বিল্ডিংগুলোর মতো স্বেডাগোন ভূমিকম্প ও যুদ্ধে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটার বেশ কয়েকটা অংশকে আবার বানানো হয়েছে।

কিন্তু কেউ কেউ দাবি করে থাকে যে সুবর্ণ সুলেই পাগোডাই হল ইয়ানগানের প্রকৃত সম্পদ। ২,০০০ বছরের পুরনো এবং ছেচল্লিশ মিটার উঁচু এই পাগোডা চারটে প্রধান শহরের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com