পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, টানেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি
প্রকাশের সময় : 2022-02-17 09:13:42 | প্রকাশক : Administration
আবদুর রহিম হারমাছি: যদি একটু ঠান্ডা মাথায় হিসাব করা হয় তা হলে দেখা যাবে, ২০২২ সালের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসে, আমাদের অর্থনীতি যদি আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মতো ৮ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যাবে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে এই তিন মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য যোগ হলে প্রবৃদ্ধি দুই অংকের ঘরে চলে যাবে।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে। এ বছরই শেষ হবে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের তিনটি মেগা প্রজেক্টের কাজ। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মেট্রোরেল, একটি পদ্মা সেতু; আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল। আগামী জুনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে। এরপর অক্টোবরে চালু হবে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ডিসেম্বরে চালু হবে বহুল কাঙ্খিত মেট্রোরেল। এই তিনটি প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু পদ্মা সেতু চালু হলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। ২২ বছর আগে ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালুর পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক দুর্দান্ত গতি সঞ্চার হয়েছিল। শুরু হয়েছিল এক ভিন্ন বাংলাদেশের যাত্রা। ওই সেতুর প্রধান ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক তখন বলেছিল, এটি চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে দশমিক ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত গতি পাবে। তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে ১ থেকে দেড় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি যোগ করে চলেছে বঙ্গবন্ধু সেতু। এ তথ্য বিশ্বব্যাংকসহ স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বারবার দিয়েছেন। পৌনে দুই বছর ধরে চলমান করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে আবার গতি ফেরার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদি করোনা পরিস্থিতি বর্তমানের পর্যায়েও থাকে, তারপরেও এবার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আর যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী এবার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আইএমএফ তথ্যানুযায়ী ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। আর এডিবি তথ্যানুযায়ী ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে।
এসব পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। এবার সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। ২০২২ সালের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসে, আমাদের অর্থনীতি যদি আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মতো ৮ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যাবে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে এই তিন মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য যোগ হলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের (ডাবল ডিজিট) মাইলফলকের ঘরে নিয়ে যেতে পারবে।
তখন আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। উন্নয়নের উলম্ফন অব্যাহত থাকবে। ২০৩১ সালের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এদেশ। করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে। আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এখন একটাই ভয় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এটা যদি সামাল দেয়া যায় আর এর মধ্যে এই তিন মেগা প্রকল্প চালু হয়ে গেলে অবশ্যই অর্থনীতিতে নতুন গতি পাবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই বাড়বে। করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৮ দশমিক ১৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল দেশে। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।- সূত্র: অনলাইন