বৃদ্ধাশ্রমে মা-বাবা

প্রকাশের সময় : 2022-02-17 09:16:23 | প্রকাশক : Administration
বৃদ্ধাশ্রমে মা-বাবা

অধ্যাপক মোঃ আবদুর রশিদ: ছোট বেলায় শুনতাম মা-বাবা সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং ভর্তির সময় শিক্ষককে বলতেন আমার সন্তান যেন ভাল মানুষ হয়। শিক্ষক ও ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। যার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে, শিক্ষকদের সংস্পর্শ এবং মা-বাবার চেষ্টায় সন্তান শিক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে আদর্শ গুনাবলী বিশিষ্ট একজন সেরা মানুষে পরিণত হত। আজকাল কেন জানি এ বিষয়টি উপেক্ষিত। মা-বাবার নিয়ত, শিক্ষকদের প্রচেষ্টা, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ, সর্বোপরি সন্তানের ইচ্ছা শক্তি সবই যেন দুনিয়াবী উন্নতির জন্য। ফলশ্রুতিতে শিক্ষিত হওয়া সত্বেও নিম্ন মানসিকতার কারণে সন্তান হয়ে উঠে স্বার্থপর। শুধু স্বার্থপর বললেই যথেষ্ট হবে না, চরম স্বার্থপর। যার জলন্ত প্রমাণ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা। এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে হয়ত সমস্যা কোথায় কিছুটা হলেও উপলব্ধি হতে পারে। একটা সময় ছিল, এদেশে যৌথ পরিবারের প্রচলন ছিল একই সাথে মা-বাবা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ভাই-বোন সবাই বসবাস করত। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশাপাশি থাকার সুযোগ ছিল। বর্তমান সময়ে যৌথ পরিবার গুলো যেন বিলুপ্ত হবার পথে। একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলশ্রুতিতে, পারস্পরিক সম্প্রীতি যেন বিনষ্ট হতে চলেছে। স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ২২% বৃদ্ধ এবং বাংলাদেশে এই হার ৩৭% এবং এর অধিকাংশই কর্মক্ষম নয় বিধায় সন্তানরা এদের সংসারে উপস্থিতিকে দিন দিন বাড়তি ঝামেলা মনে করছে। তাই তারা বৃদ্ধকে সংসার থেকে দূরে দিতে পারলেই যেন বাঁচে। ফলশ্রুতিতে বৃদ্ধাশ্রমকে মা-বাবার স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে। মায়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় শহুরে মায়েদের মধ্যে চাকুরির ব্যস্ততা বা অন্য কোন কারণে মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না বা খাওয়াতে চান না। এক জরিপে দেখা যায় বুকের দুধ পান করাতে পারে না এমন মায়ের সংখ্যা দেশে ৫৪%। যার কারণে যে সন্তানকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জন্মদান করেছিলেন সেই সন্তানের প্রতি শিশুকাল থেকেই দূরত্ব তৈরী হয়। মা হিসেবে যে আদব-কায়দা ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া দরকার ছিল, কর্মের ব্যস্ততায় তা দিতে পারেন নাই। যেই সন্তানের উন্নতির জন্য মা-বাবা রাত দিন ব্যস্ত, সেই সন্তানই এক সময় হয়ে উঠে মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল। অপরদিকে তারা ধর্মহীনতার সুযোগ নিয়ে হয়ে উঠে হিংস্র অথবা একগুয়ে। বর্তমানে দেশে তরুণদের মধ্যে ৬৮% তরুণ ধর্ম বিমুখ অর্থাৎ ধর্ম থেকে দূরে। অথচ ধর্মইতো মা-বাবার প্রতি সন্তানকে শ্রদ্ধাশীল করে তোলে।

প্রতিটি ধর্মেই সৃষ্টিকর্তার পর মা-বাবার মর্যাদাকে স্থান দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

“তোমাদের পিতা-মাতা বয়োবৃদ্ধ হলে তাঁদেরকে বিরক্তির সৃষ্টিতে দেখনা”(সূরা-বনি-ইসরাইল আয়াত-২৩)

সনাতন ধর্মের পূরাণে বলা হয়েছে,

সহস্র পিতা অপেক্ষা মা- (সম্মানিয়া)

হাদিসে বলা হয়েছে “জান্নাত মায়ের পায়ের নীচে”

হাদিসে আরও বলা হয়েছে -

“মা-বাবার চেহারার দিকে তাকালে কবুল হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায়”।

কোন সন্তানের মধ্যে ধর্মীয় বুঝ থাকলে সে চেষ্টা করবে শত কষ্টের মধ্যেও মা-বাবাকে সামনে রাখতে। ধর্মীয় বুঝ না থাকার কারণে মা-বাবার উপস্থিতিকে সংসারের জন্য বাড়তি বোঝা মনে করবে এবং তখনই মা-বাবাকে অন্যকোন জায়গায় শিফ্ট করা যায় কিনা পথ খুঁজবে। পথ খুঁজে না পেলে শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমকেই বেছে নেয় মা-বাবাকে স্থানান্তর করার জন্য।

জাগতিক শিক্ষায় যতবড় শিক্ষিতই হোক না কেন প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব এবং নীচু মানসিকতার চরম অবস্থা সন্তানকে মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল করে তোলে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে শিক্ষার হার প্রায় ১০০% । অথচ মা-বাবা অবহেলিত।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com