ইসলামী ঐতিহ্যের দেশ মালি

প্রকাশের সময় : 2022-02-23 12:51:07 | প্রকাশক : Administration
ইসলামী ঐতিহ্যের দেশ মালি

জেসিউর রহমান শামীম:পশ্চিম আফ্রিকার একটি বড় দেশ মালি । মালির পুরো নাম মালি প্রজাতন্ত্র। দেশটির উত্তরে প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি, আর বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে সবুজ তৃণভূমি। ১৪ শতাব্দীতে ইউরোপে যখন দুর্ভিক্ষ আর খাদ্যাভাবে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়, তখনও খাবারের অভাব কী তা জানত না মালির লোকজন । মালি এখন দরিদ্র দেশ হলেও একসময় ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও স্বচ্ছল দেশ।

‘মালি’ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেন সুনদিয়াতা কেইতা নামক এক ব্যক্তি, যিনি ইতিহাসে বেশ অজ্ঞাত, তার ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কিছু জানা যায়না। তবে জানা যায়, তিনি মালি সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন এবং ১২৩০-এর দশকে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম জনগণের জন্য একটি শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। আর ইতিহাসে গত এক হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধনবান যে ব্যক্তি ছিলেন তিনি মালির মুসলিম রাজা ‘মানসা মুসা’। মাদিন্কা ভাষায়  “মান্সা” অর্থ রাজা। মালির দশম “মান্সা” বা রাজা ছিল “প্রথম মুসা” যিনি ১৩১২ সাল থেকে ১৩৭৭ সাল পর্যন্ত মালি শাসন করেন।

তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় প্রচুর মাসজিদ নির্মাণ করেন, এসব মসজিদের অনেকগুলো ৭০০ বছর পরও টিকে আছে। দ্বীনি ইলম শিক্ষার জন্য সাম্রাজ্য জুড়ে অসংখ্য মাদরাসা তার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। টিম্বাকতুর সাংকোরে মাদরাসাকে তিনি পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন। সেখানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখার সুব্যবস্থা ছিল। বিশ্বের নামকরা স্কলারদের নিয়ে মালিতে সে সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার পর  বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লাইব্রেরি। ব্যক্তিগত ও সরকারী সংগ্রহে ইসলামী আইন, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, ভাষা, ইতিহাস থেকে শুরু করে নানা বিষয়ের হাজার হাজার বই। দেশটির ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তখন আফ্রিকার সকল প্রান্ত থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করত।

উপনিবেশ মালির আজকের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী। এক সময়কার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ১৯০৪ সালে মালি দখল করে নেয়। পরে ১৯৬০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফরাসি উপনিবেশের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মালি। এরপরও ফ্রান্স মালির আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বজায় রাখে। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম ও স্বর্ণসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদের ভান্ডারের সবই যায় ফ্রান্সের গোলায়। ‘স্বাধীনতা’ লাভের পরও নানা চুক্তির আওতায় মোট জাতীয় সম্পদের ৮৫ ভাগ যায় প্যারিসে। আর ১৫ ভাগ থাকে মালির জনগণের জন্য। যদি কেউ বিদ্রোহ করে- তবে ফ্রান্সের সেনাবাহিনী চলে আসে ‘সন্ত্রাসবাদ দমন’ করতে। এই হলো রাজনীতি আর উপনিবেশবাদের ফলাফল। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দরুণ মালি সরকার ফ্রান্স সেনাবাহিনীর সাহায্য চায়, জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে। বাংলাদেশ থেকেও ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে মালিতে প্রথম শান্তিরক্ষী পাঠানো হয়।

মালির রাজধানীর নাম বামাকো। ১২ লাখ ৪০ হাজার ১৯২ বর্গকিলোমিটার দেশের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। মালির সর্বাধিক জনবহুল জাতিগত গোষ্ঠী হচ্ছে বম্বারা, যারা জনসংখ্যার প্রায় ৩৪.১% অংশ ।

মালিতে উর্বর জমির অভাব থাকলেও অন্যান্য অতি মূল্যবান সম্পদ সে অভাব পূরণ করে দিয়েছে। স্বর্ণ ও লবণের খনি শত শত বছর ধরে মালির অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু । মালির উত্তরাঞ্চল থেকে বাণিজ্যপথ বর্ধিত হয়ে উত্তর আফ্রিকার উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, সেখানকার ধনী ব্যবসায়ীগণ ইউরোপ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানোর জন্য চড়া মূল্যে স্বর্ণ ও লবণ কিনতে আগ্রহী ছিল। এই বাণিজ্য পথ গুলো মাদিনকা নামক পশ্চিম আফ্রিকার স্থানীয় গোত্রটিকে অবিশ্বাস্য রকম সম্পদশালী গোত্রে পরিণত করেছিল।

বার্ষিক বর্ষার সময় জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর ফেব্রুয়ারী মাস আর নভেম্বর মাস সাধারণত শীতল এবং শুষ্ক হয়, তবে তাপমাত্রা মার্চ ও মে মাসে বেড়ে যায়।

মালির দাপ্তরিক ভাষা ফরাসি, তবে বাম্বাড়া দেশের আঞ্চলিক ভাষা হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও ১৪টি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে দেশটিতে এবং ৪০ টিরও বেশি আদিবাসী ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে।

মালি মুসলিম ঐতিহ্যের দেশ হওয়ায় এর প্রতিটি শহরেই রয়েছে নান্দনিক মসজিদ। সব মসজিদেরই রয়েছে ঐতিহাসিক গৌরবময় ইতিহাস। যেমন মালির ডিজেনি শহরে ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছিল বড় মসজিদ নামে পরিচিত মাটির মসজিদ। এটি আফ্রিকার অন্যতম নিদর্শন এবং সুডানো সাহেলিয়ান স্থাপত্যকর্মের অন্যতম উদাহরণ। ‘দ্য গ্রেট মস্ক অফ ডেন্নি’, মসজিদটি ১০০ বছরের পুরনো এবং এটি ইট-কাদার তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদ।

বর্তমানে মালিতে প্রতি চার জনের তিন জন বাস করেন দারিদ্র্য সীমার নিচে। গড়ে প্রতি চার জনের তিন জন অশিক্ষিত। আয়তনে বাংলাদেশের আটগুণ হলেও মালিতে বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র একটি। কয়েকশ বছর আগে মুসলিম শাসনের সময় ছিল কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

মালির গাও'তে অবস্থিত সব থেকে জনপ্রিয় সম্রাট ১ম আসকিয়া মোহাম্মাদের মাজার বলে বিশ্বাস করা হয়। এটা ১৫ শতকের শেষভাগে নির্মিত। চত্বরের মধ্যে পিরামিডিয় সমাধি, দুটি মসজিদ, একটি কবরস্থান এবং জমায়েতের স্থান আছে। ১৭ মিটারের উচ্চতার সমাধি অত্র অঞ্চলের সব থেকে বড় প্রাক কলোনিয়াল স্থাপত্য সৌধ। আসকিয়া নিয়মিতভাবে মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এটা গাও শহরের জন্য সরকারি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

ইসলাম হচ্ছে মালির প্রধানতম ধর্ম, দেশের ৯৪% জনসংখ্যা মুসলিম। আফ্রিকায় ইসলামের প্রচার- প্রসারে মালির গুরুত্ব ও অবদান অপরিসীম। অবশিষ্ট সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসি। মালি এর মুদ্রা পশ্চিম আফ্রিকান ঈঋঅ ফ্রাঙ্ক নামে পরিচিত।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com