স্বাধীনতার ৫১ বছর; আমার দেশ হোক সব মানুষের
প্রকাশের সময় : 2022-03-23 09:54:53 | প্রকাশক : Administration
সঞ্জীব রায়: গত বছর স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি আমরা। জাতীয়ভাবে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হয়েছে সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। তবে, প্রত্যাশামাফিক সর্বস্তরের মানুষের মাঝে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের উপলব্ধি ও উদ্দীপনার কোন বিশেষ নজির চোখে পড়েনি। অবশ্য সেদিকে আমাদের নজরটাও খুব কম থাকে। আমরা রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির দিকে তাকিয়ে জাতীয় দিবসের মাহাত্ম আর গুরুত্ব বিবেচনা করি। কিন্তু সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে তেমন ভাবনা নেই। সাধারণ মানুষ কি এই উদযাপন তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে করেছে? সেই প্রশ্নটি তেমন গুরুত্ব পায় না। বিয়ে, জন্মবার্ষিকী, আকিকা, সুন্নতে খাতনা বা প্রিয়জনের কোন সুখবরেও বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ আয়োজন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের কতোটি পরিবার রাতের খাবারে বিশেষ আয়োজন করেছে তা বলা মুশকিল। বলছি না পোলাও-মুরগী বা কাচ্চি বিরিয়ানী খেয়ে প্রতি ঘরে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন করতে হবে। বলতে চাইছি, মানুষের একান্ত জীবনে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা, প্রিয় স্বাধীনতার পঞ্চাশ তম বার্ষিকীটি ঘরে ঘরে আনন্দের সাথে উদযাপনের কথা।
বাংলাদেশ পা দিয়েছে ৫১ বছরে। বীরত্ব আর সাহসের সাথে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা রক্ষায় উন্নয়নের বারতা ছড়িয়ে সাফল্যের মহাসড়কে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। শান্তি সূচক আর বিশ্ব ক্ষুধা সুচকে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে অনেক। রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বেড়েছে দ্রুতগতিতে, বিশ্বের মধ্যে সেরা দশে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে সুশাসন, মানবাধিকার আর ন্যায়বিচার নিয়ে। অনেকেই গণতন্ত্রের নাজুক অবস্থাকে এই সবকিছুর জন্য দায় দিতে চান। তবে, গণতন্ত্রের সাথে ন্যায্যতা আর সুশাসনের একমাত্রিক সম্পর্ক স্থাপন খুব একটা কার্যকরী কি না সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তর্ক-বিতর্ক চলবে, চলুক। তবে একান্নতে পা দেয়া এই দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সুষম ধারা নিশ্চিত করা, নিরাপদে, ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নিয়ে কোন বিভাজন থাকা উচিৎ নয়। দল-মত, আদর্শ-রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, স্বাধীনতার সুফলগুলো সবার ঘরে পৌঁছে দেয়ার মানসিকতা অর্জন না করলে এই স্বাধীনতার উপলব্ধি শুধু কতিপয় গোষ্ঠী, রাজনীতি-রাষ্ট্রের ইতিহাস আর অগ্রসরমান অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন অর্থনৈতিক মুক্তির কথা। আজকের দিনে রাজনীতির ভাষায় অনেকেই “কাঙ্খিত মুক্তি”র কথা বলেন। কিন্তু সেই কাঙ্খিত মুক্তি যেনো রাজনীতির দুরূহ কোন পরিভাষা না হয়। বরং সেই কাঙ্খিত মুক্তি যেনো বোঝায় দিনশেষে প্রতিটি নাগরিকের শান্তির ঘুম আর বেঁচে থাকার স্বস্তির নিঃশ্বাসকে। এর মানে যেনো হয়, পথ চলতে অজানা ঘাতকের হাতে প্রাণ হারানোর ভয় থেকে মুক্তি। সন্তান-পরিবারের সুরক্ষাসহ জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি। অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে বিদেশে পাড়ি জমানো, উন্নত জীবনের খোঁজে ভিনদেশী হওয়া অথবা জীবন বাঁচাতে প্রিয় দেশ ছেড়ে পালানো-কোনটিই কাঙ্খিত নয়। আমরা যেনো কাঙ্খিত মুক্তি বলতে বুঝি আমার বোনের নিরাপদে চলাফেরার স্বাধীনতা, আমার কৃষক বাবার ঠকে না যাবার নিশ্চয়তা, আমার মমতাময়ী মায়ের সন্তানকে ভেজালমুক্ত খাবার মুখে তুলে খাওয়ানোর পরম প্রশান্তি, শিক্ষা শেষে আমার ভাইয়ের কর্মসংস্থানের দুশ্চিন্তাহীন চিত্ত আর ব্যবসায় শঠ-তঞ্চকের হাতে নিঃশেষ না হবার প্রতিশ্রুতি।
একনদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার যে স্বাধীনতা পেয়েছি তার অবমাননা তো এই দেশের কিছু পশুরূপীদের দ্বারাই ঘটছে। যে বছর আমরা স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি শুধু সেই বছরেই এদেশে অন্তত ১৪০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে যার বেশিরভাগই শিশু। যতোবার এদেশের একজন নারী বা শিশু ধর্ষিত হয়, ততোবার ধর্ষিত হয় বাংলাদেশ, অপমান হয় প্রিয় স্বাধীনতার। এই বোধ ও বুদ্ধির উদয় না ঘটলে বৃথা হবে স্বাধীনতা, ব্যর্থ আমাদের রাজনীতি আর উন্নয়ন। উন্নয়ন যেমন হতে হবে সবার, তেমনি চেতনাও হতে হবে সার্বজনীন। মানবিক চেতনা, সহিষ্ণুতার মনোভাব, ইতিবাচক মানুষ ও সমাজ গড়ার চেষ্টা এবং সর্বোপরি একটি সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদয় ঘটানো- যেখানে সবাই বাঁচে সমানভাবে, সবাই থাকে সুন্দরের সাথে।
সম্মিলিত ত্যাগের যে স্বাধীনতা, কিছু লোক যেনো তা নষ্ট না করতে পারে সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ আবার কিছু হাতেগোনা লোক যেনো সুবিধাভোগী না হয় সেদিকেও মনযোগ দিতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার যে বিকাশ, সাফল্য ও উন্নয়ন, তার কিছু সংখ্যক বিরোধীতাকারীদের যেমন বোঝাতে হবে আবার কতিপয় গোষ্ঠী যেনো উন্নয়নের বেশিরভাগ সুফল নিজেদের হাতে জিম্মী না করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশটি হোক সবার। বিভক্তিহীন সেই বাংলাদেশে নিশ্চিত হোক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার। আসুন না স্বাধীনতার ৫১ বছরে শপথ নিই এই দেশটি হোক সব মানুষের।