নয়নাভিরাম নরওয়ে

প্রকাশের সময় : 2022-04-20 11:24:57 | প্রকাশক : Administration
নয়নাভিরাম নরওয়ে

জেসিউর রহমান শামীম: নিশীথ সূর্যের দেশ হিসেবে পরিচিত নরওয়ে। ২০১৭ সালে জতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুখি দেশ। উত্তর ইউরোপের পশ্চিম দিকে চমৎকার এই উপক‚লীয় দেশটির অবস্থান। রাজতন্ত্রে পরিচালিত এই দেশটির আয়তন ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৫২ বর্গ কিলোমিটার এবং যার জনসংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন। স্ক্যান্ডিনেভিয় দেশগুলোর মধ্যে নরওয়েকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নরওয়ের রাজধানির ‘অসলো’ জনসংখ্যার দিকে থেকে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। জীবন যাত্রার মানের দিক থেকে অসলোকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল এবং সমৃদ্ধ শহর।

সংস্কৃতির দিক থেকেও নরওয়ে অনেক সমৃদ্ধ একটি দেশ। প্রাচীনকালে নরওয়েজিয়ান ভাইকিংসরা আসে পাশের এলাকার সমুদ্র শাসন করে বেড়াতেন। ভাইকিংসদের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। ভাইকিংসদের সাহসিকতাপূর্ণ ইতিহাস নিয়ে আছে অনেক গল্প, নাটক ও সিনেমা। এছাড়া যারা মেটাল ও ব্ল্যাক মেটাল গান শুনে থাকেন তাদের কাছে নরওয়ের বিশেষ কদর আছে। বুরজুম, মেয়হিম, দিমূ বরগির ও অ্যাবাথ এর মত ব্ল্যাক মেটাল  ব্যান্ডগুলো সারা পৃথিবী জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়।

ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের জন্যে চমৎকার একটি গন্তব্য হলো নরওয়ে। উত্তর ইউরোপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই-ই হলো নরওয়ে ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। এসময় তাপমাত্রা বেশ সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এই সময়ে নরওয়েতে বসন্তকাল বিরাজ করে। এজন্যে নতুন কচি পাতা এবং ফুল সমৃদ্ধ প্রকৃতি এবং পরিস্কার নীল আকাশ উপভোগ করা যায়। আবার নভেম্বর থেকে শুরু হয় শীতকাল। আর এ সময় প্রায়ই আকাশ মেঘলা থাকে।

নরওয়ে অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি দেশ। এখানে সমুদ্র সৈকত, উপত্যাকা, পাহাড়, দ্বীপপুঞ্জ সহ বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেগুলো আসলে কম সময়ে দেখে শেষ করা সম্ভব না। কেউ হয়ত সাগর, সৈকত ইত্যাদি ভালোবাসেন। আবার কেউ বা পাহাড় পর্বত পছন্দ করেন। এরকম সবার চাহিদা মেটানোর মত যথেষ্ট বৈচিত্র্য নরওয়েতে আছে, একথা বলাই যায়। নরওয়ের সামুদ্রিক খাড়িগুলো অন্যতম আকর্ষণীয়। প্রায় পুরো দেশ জুড়েই এগুলোর অবস্থান। পশ্চিম নরওয়ের সামুদ্রিক খাড়ি গুলো একটু বেশিই নয়নাভিরাম। এখানকার পাহাড় ও পর্বতগুলো বেশি উঁচু আর খাড়ীগুলো এ কারণে বেশ গভীর। খারিগুলোর চুড়ায় দাঁড়ালে যে অনুভূতি স্পর্শ করে তা অনেকটাই অপার্থিব!

নরওয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং দেশের অন্যতম প্রধান সমুদ্র বন্দর বারগেন। ১৫শ শতক থেকে শুরু করে এটি দেশের অন্যতম বানিজ্যকেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্র। এখানে প্রাচীন ঐতিহ্য, অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বানিজ্যিক বন্দরের জাঁকজমকের অপূর্ব সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য শহরের মত এখানেও পুরাতন সব ভবন আছে, যেগুলো অতীত নরওয়েজিয়ান কৃষ্টি বহন করে চলেছে।

প্রকৃতি ও সৈকত প্রেমীদের জন্যে লোফোতেন দ্বীপপুঞ্জ সেরা। নরওয়ের উত্তরাঞ্চলে একগুচ্ছ দ্বীপের সমন্বয়ে এই এলাকাটি পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এই দীপপুঞ্জকে নরওয়ের সবচাইতে সুন্দর স্থানও বলা হয়ে থাকে। এখানকার সচ্ছ পানি ও উষ্ণ আবহাওয়া পর্যটকদের জন্য দারুণ আকর্ষণীয়। নরওয়ের দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় অবস্থিত স্টাভাঙ্গার। পৃথিবীর বেশ চমৎকার কিছু সমুদ্র সৈকত রয়েছে এখানে। এখানকার তাপমাত্রাও অনেকটা উষ্ণ। এজন্য শীত প্রধান দেশ থেকে সান বাথ বা সূর্য স্নান করতে আসা পর্যটকদের কাছে স্টাভাঙ্গারের সৈকতগুলো অনেক প্রিয়। শুধু সৈকত না, স্টাভাঙ্গার শহরটাও দেখতে বেশ চমৎকার। এখানে অনেকগুলো নতুন এবং পুরোতন গির্জা আছে। মধ্যযুগীয় এই সব গির্জার মধ্যে স্টাভাঙ্গার গির্জাটি পুরো দেশের মধ্যে সেরা বলে বিবেচিত। গির্জাটির আয়তন এবং দারুন শিল্পকর্ম সবাইকে মুগ্ধ করে।

রাজধানী হওয়ার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই অসলো নরওয়ের সবচাইতে সমৃদ্ধ এবং জনবহুল শহর। এটি বর্তমানে পৃথিবীর পঞ্চম ব্যয়বহুল শহর হিসাবে বিবেচিত। বেশ কয়েক বছর আগেও এর অবস্থান প্রথমে ছিল যা এখন সিঙ্গাপুর এর দখলে। প্রধান শহরে যা যা থাকা দরকার তার সব কিছুই আছে এই শহরে। অসলোতে দালান কোঠা আছে যথেষ্ট পরিমানে। তারপরও এই শহরের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে আছে বনভূমি ও পার্ক। তাই রাজধানী শহরের ব্যাস্ততার পাশাপাশি দম নেয়ার মত অনেক বন, পার্ক ইত্যাদিও   আছে। এছাড়া এখানাকার যাদুঘরগুলো খুব বিখ্যাত। আরও আছে নোবেল পিস সেন্টার।

“জতুন হেইমেন” শব্দের অর্থ হল দানবদের বাড়ি। এটা হল নরওয়ের প্রধান জাতীয় পার্ক। পার্কটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। পার্কটি চারদিক থেকে উঁচু সব পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এখানেই নরওয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলো অবস্থিত। এখানে আরও আছে ভেতিসফসন, যেটা নরওয়ের সব চাইতে উঁচু জল প্রপাত (২৭৫ মিটার)।

উত্তর নরওয়ের সবচাইতে প্রধান আকর্ষণ হল এখানে অনেক বাড়ি আছে যেগুলো অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরি এবং সেগুলো পুরোপুরি কাঠের তৈরি। শহরের বেশিরভাগ অংশ ট্রোমসয়া দ্বীপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানেও বেশ চমৎকার কিছু মিউজিয়াম আছে। স্টোরস্টেইনেন পর্বতের কাছে ক্যাবল কারের ব্যাবস্থা আছে যা সত্যি অভাবনীয় কিছু অভজ্ঞতা দেয়।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com