বিশাল অর্থনীতির সফল কারিগর মুহিত
প্রকাশের সময় : 2022-05-11 15:12:09 | প্রকাশক : Administration
টানা ১০ বার! আর মোট ১২ বার!! একটি দেশের বাজেট প্রণেতা হিসেবে এমন সম্মানের অধিকারী বিশ্বে বিরল। আর এই সম্মানের অধিকারী সদ্য প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সরলতা, সততা ও সত্যকথনে এক কিংবদন্তির নাম আবুল মাল আবদুল মুহিত। দীর্ঘ ৮৮ বছরের কর্মময় জীবনের যবনিকা টেনে চিরবিদায় নিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক।
সিলেটে জন্ম নেয়া বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সফল এই অর্থনীতিবিদ পাকিস্তান সরকার থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলায় সামরিক সরকারের অধীনে কাজ করেও হয়েছেন সর্বজন সমাদৃত। আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিসের দ্বিতীয় ছেলে ছিলেন তিনি। তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীও সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই।
বারে বারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করলেও পড়ালেখার শুরুটা ছিল তাঁর ইংরেজী সাহিত্যে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুহিত ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন। জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। আর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করে এমপিএ ডিগ্রী।
১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচএম এরশাদ সরকারের সময় তিনি প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন। দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমলাখ্যাত এই অর্থনীতিবিদই সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়ে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। সিলেটের জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হওয়া এই সংসদ সদস্যকে যথাযোগ্য সম্মান দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
২০০৯ সালের জাতীয় সংসদে তাকে দেয়া হয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দফতর অর্থ মন্ত্রণালয়ের। ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের টানা দ্বিতীয় মেয়াদেও। তাঁর কাঁধেই আবারও আস্থা রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে সব মিলিয়ে মোট ১২ বার এবং টানা ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার রেকর্ড গড়েন আবুল মাল আবদুল মুহিত। - সূত্র: অনলাইন