৭১ র সংগ্রামের পর জীবন সংগ্রামেও সফল
প্রকাশের সময় : 2022-05-11 15:26:32 | প্রকাশক : Administration
মহিদুল ইসলাম: জীবন সংগ্রামে একজন সফল মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম খোকন (৬৪)। নিজের উদ্যোগে এলাকায় গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সামাজিকসহ বহু প্রতিষ্ঠান। একজন সফল উদ্যোক্তা ও খামারি তিনি। ১৯৮৭ সালে বিআরডিবি অফিস থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজের ৫০ শতকের একটি পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ।
এর পর থেকেই তাঁর সামনে এগিয়ে চলা শুরু। এতে তিনি সফল হওয়ায় পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে ৩ একর ৬৬ শতক জমিতে বিশাল মাছের খামার গড়ে তোলেন। প্রতিবছর তিনি এই মাছের খামার থেকে সব খরচ বাদে আয় করেন সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা। এই মাছের খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার আট জন দরিদ্র মানুষের।
এছাড়া তাঁর দেখা দেখি এলাকার বহু বেকার যুবক মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে হয়েছেন সাবলম্বী। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক হাওলাদার ও কোহিনূর বেগমের ছেলে সাইফুল ইসলাম খোকন। লেখাপড়া করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়শোনা শেষে রায়েন্দা পাইলট হাই স্কুলে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন তিনি।
কিন্তু স্বাধীনচেতা এই মানুষটির চাকরিতে মন বসেনি। ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ পদ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন টানা ২৪ বছর। ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়রাম্যানও। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন এখনও। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে গড়ে তুলেছেন মা-বাবার নামে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সমাজের সকল ক্ষেত্রে সফল এই সাইফুল ইসলাম খোকন বিআরডিবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজের জমিতে একাধিক খামার গড়ে তোলেন। মাছ চাষ, গবাদি পশু, মুরগির খামারে পাশপাশি সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবসা, ফ্লাওয়ার মিল ও কয়েকটি স’মিল (করাত কল) রয়েছে তাঁর। তাঁর গড়ে তোলা এসব খামার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত শত শিক্ষিত বেকার যুবক ও দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সফল চাষি ও একজন সফল উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম খোকন মাছ চাষে লাভবান হওয়ার পর থেকে আরো ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করেন।
২০০৭ সালে পাঁচটি গাভী নিয়ে একটি খামার গড়ে তোলেন। দেড় লাখ টাকা দিয়ে শুরু করা সেই খামারে এখন উন্নতজাতের ১২টি দুগ্ধজাত গাভী রয়েছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ১০০ কেজি দুধ বিক্রি হয়। এই খামারে চার জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে নিবন্ধিত এই খামার থেকে এখন বছরে আয় আসে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।
২০১১ সালে নিজ উদ্যোগে যুব উন্নয়ন অফিসের সহযোগিতায় খোন্তাকাটায় হাওলাদার স’ রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলস এবং দুটি করাত কল স্থাপন করেন তিনি। এতে এলাকার সাতটি দরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে সমুদ্রগামী দুটি ফিশিং ট্রলার তৈরি করেন। তাঁর এই ট্রলার দুটি সাগরে নিয়মিত ইলিশ আহরণ করছে। এতে ৩৬ জন জেলে শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
২০১৮ সালে দেড় লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে একটি মুরগির খামার করেন তিনি। বর্তমানে খামারে ১২শ মুরগি রয়েছে। এখানেও চার জন দরিদ্র মানুষ কাজ করেন। এই খামারের মুরগি ও ডিম বিক্রি করে সব খরচ মিটিয়ে বছরে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় হয় তাঁর। তাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, মায়ের নামে কোহিনূর হক মহিলা কারিগরি অ্যান্ড বিএম কলেজ, আল কারিম হাফিজিয়া কওমি মাদরাসা, দারুল কোরআন মুন্সী আব্দুল কাসেম (রাঃ) মাদরাসা, তালতলি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং তালতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
এসব প্রতিষ্ঠানে বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের চাকরি হয়েছে। পাশাপাশি যুগোপযোগী শিক্ষা ও চিৎিসাসেবা পাচ্ছেন এলাকার সাধারণ পরিবারের মানুষ। সাইফুল ইসলাম খোকন রাজনীতি ও ব্যবাসায়িক জীবনে সফলতার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সফলভাবে পরিচালনা করছেন।
সাংস্কৃতিক মনা এবং সর্বদা হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসেন সাইফুল ইসলাম খোকন। হজ্ব করেছেন কয়েকবার। বিশ্বাস করেন না সাম্প্রদায়িক ও বর্ণ বৈষম্যে। দাড়ি রাখেন যৌবন বয়সেই। মাথায় টুপি আর লম্বা জুব্বার কারণে সবার কাছে খোকন হুজুর নামেই বেশি পরিচিত তিনি। এই বয়সে এসেও এখনও সময় পেলে বসে যান গানের আসরে। একজন তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে বেশ নামডাকও রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমাজের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান সংগ্রামী সাইফুল ইসলাম।