রেকর্ড অর্ডার গার্মেন্টসে!
প্রকাশের সময় : 2022-05-28 09:07:17 | প্রকাশক : Administration
রহিম শেখ: বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখনও দূরের স্বপ্ন। তবে মাঠে না থাকলেও ভিন্নভাবে থাকবে বাংলাদেশের নাম। মেড ইন বাংলাদেশ লেখা ফিফার টি-শার্ট পড়ে অফিসিয়াল কর্মীরা ঘুরবেন সব ভেন্যুতে। পরবেন ফুটবল অনুরাগীরাও। ফিফার ৬ লাখ অফিসিয়াল টি-শার্ট তৈরির অর্ডার পেয়েছে চট্রগ্রাম নগরীর সনেট টেক্সটাইল।
রাতদিন ব্যস্ততায় তা এখন তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলে গেছে একটি চালান। ঠিক একইভাবে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাহ এ্যাপারেলস সম্প্রতি স্পেনের একটি বাস্কেটবল দলের অফিসিয়াল ফ্যান জার্সির ক্রয়াদেশ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের স্থানীয় কারখানায় উৎপাদিত জার্সির কাপড়ও পছন্দ করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। এ ধরনের ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আগে খুব বেশি আসেনি।
যেগুলো এসেছে, সেগুলোর কাপড় আমদানি করতে হতো চীন থেকে। সম্প্রতি চীনে নতুন করে লকডাউনের কারণে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। শুধু চীন নয়, ক্রয়াদেশ সরে আসছে এমন দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করছেন বেশি।
এছাড়া প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং তীব্র জ্বালানি সংকটের কারণে পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশে ভিড় করছেন। সাম্প্রতিক সময়ের রফতানি পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে নিট। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে এ খাত থেকে এসেছে ১৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী মুদ্রা।
গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ওভেন পোশাক রফতানি করে গত ৯ মাসে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা। একক মাস হিসেবে গত মার্চে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশী মুদ্রা এনেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অথচ মার্চজুড়েই ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে। যুদ্ধের দামামায় অন্যান্য সূচকে টান পড়লেও রফতানি আয় ছিল উর্ধ্বমুখী। শুধু মার্চ মাসেই নয়, গত জানুয়ারি ও ফেব্র“য়ারি মাসেও পোশাক রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল। মূলত প্রতিযোগী দেশ মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গত বছর ভারত ও ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ আসতে সহায়ক হয়েছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনা সহনীয় হয়ে এলেও ক্রয়াদেশ বাড়ার প্রবাহ কমেনি, বরং প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি আরেক প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হওয়া এবং সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় বিদেশী ক্রেতারা ওই দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর পরিবর্তে তাঁরা নিরাপদ উৎস হিসেবে বাংলাদেশ কিংবা অন্য প্রতিযোগী দেশের দিকে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পোশাকের ক্রেতারা বাংলাদেশমুখী হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকেই। এর আগে মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকটের কারণে অনেক ক্রেতা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তার সুফল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভোগ করছে।
রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার উদ্যোক্তারা বলেছেন, এখন এত ক্রয়াদেশ আসছে যে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। সময়মতো পণ্য রফতানি করতে অনেক মালিক সাব-কন্ট্রাক্টেও কাজ করাচ্ছেন। আবার দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় অনেক কারখানা দুই শিফটে চলছে। প্রতিটি কারখানায়ই কমবেশি ১৫-২০ শতাংশ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
সারা বিশ্বের করোনার সূচক যখন কার্যত তলানিতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নতুনভাবে চেনা জীবনের ছন্দ ফিরছে, তখন একেবারে উল্টো চিত্র চীনে। অনেক জায়গায় এখন লকডাউন চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা সে দেশে গেলে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হয়। সে কারণে ক্রেতারা ওই দেশে যেতে পারছেন না। পোশাক রফতানির বৃহৎ দেশ চীন। তাই চীনের অনেক অর্ডারও বাংলাদেশে আসছে।
চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসার গতি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। শুধু চীন নয়, ক্রয়াদেশ সরে আসছে এমন দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করছে বেশি। দেশটির বড় পোশাক ক্রেতাদের মধ্যে আছে ওয়ালমার্ট, ভিএফ (কন্তুর), গ্যাপ, জেসিপেনি, ক্যালভিন ক্লেইন, টমি হিলফিগার। তাদের প্রায় সবাই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।
পাশাপাশি ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হচ্ছে ওভেন ও নিট পোশাক দুই ক্ষেত্রেই। চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যে ক্রয়াদেশগুলো যেত, সেগুলো এখন পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে আসছে।
বাংলাদেশের কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। ইউরোপের ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ সরিয়ে নিচ্ছেন, তবে তা বড় আকারে এখনও বাংলাদেশে আসতে শুরু করেনি।
স্থানান্তরের যে গতি সেটা মে মাস পর্যন্ত গড়াবে। আমাদের এখানে বিপুল অর্ডার আসছে। শ্রীলঙ্কা থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। পোশাক রফতানিতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার যে অবস্থা, সেখানকার অর্ডার বাংলাদেশে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর আগে মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকটের কারণে অনেক ক্রেতা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তার সুফল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভোগ করছে। তবে যে কোন মূল্যে এই সুফল ধরে রাখতে হবে আমাদের। - সংগৃহিত