দ্রুতগতির ট্রেন যাচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজার
প্রকাশের সময় : 2022-05-28 09:08:07 | প্রকাশক : Administration
পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করতে দ্রুতগতির ট্রেন চালুর কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী বছরের জুনে প্রথমবারের মতো ঢাকা-কক্সবাজার পথে এই রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই পথে রেললাইন চালুর প্রাথমিক লক্ষ্য পর্যটক। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্টেশনটি হচ্ছে ‘ঝিনুকের’আকৃতিতে। পর্যটকেরা চাইলে নিজেদের লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সমুদ্রস্নানে চলে যেতে পারবেন। এতে হোটেল ভাড়া না করে রাতের ট্রেনে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ ৩২০ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই পথে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলতে পারবে। দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্তও মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। অর্থাৎ এই পথে রেললাইন বসানো শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
ঢাকা-কক্সবাজার পথে দ্রুতগতির ট্রেন পরিচালনার জন্য নতুন ইঞ্জিন-কোচ কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়। নতুন লাইন নির্মাণের পর এসব ইঞ্জিন-কোচ দিয়ে চাইলে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। বর্তমানে দেশে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো হয় না। মূলত লাইনের দুর্বলতা ও পুরোনো ইঞ্জিনকোচের কারণে বেশি গতিতে ট্রেন চালানো হয় না। এই রেলপথ পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ, লবণ, রবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। আগের চেয়ে কম খরচে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন মৎস্যজীবী ও কৃষকেরা।
বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প অঞ্চলসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানা প্রকল্পের কাজ চলছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চলছে টানেলের নির্মাণকাজ। এর পাশাপাশি রেললাইন স্থাপিত হলে কক্সবাজারে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করছে সরকার।
দুই ভাগে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ভাগ দোহাজারি থেকে চকরিয়া পর্যন্ত। দ্বিতীয় ভাগ চকরিয়া থেকে কক্সবাজার। চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৭টির কাজ শেষ হয়েছে। কালভার্টের কাজ প্রায় শেষ। সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথে রেললাইনও বসানো হয়েছে। তবে দোহাজারি-চকরিয়া অংশে কাজ কিছুটা পিছিয়ে আছে। এই অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে ৩টির কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হয়েছে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলমান আছে। বেশির ভাগ কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে।
কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনসহ সব মিলিয়ে ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে এই রেলপথে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের পথে আইকনিক স্টেশনের পরের স্টেশনটি রামু। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী রেলস্টেশন। রেলপথ বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই অংশে রেললাইন বসেছে ১৪ কিলোমিটার পথে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শত বছরের পুরোনো। ৯০ বছর আগে রেললাইন নির্মাণ করা হলেও তা দোহাজারীতে গিয়ে থেমে যায়। বর্তমান দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা।
এই রেললাইন কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম যাওয়ার পর মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং পর্যন্ত চলে যাওয়ার কথা। এখন আপাতত কক্সবাজার পর্যন্ত হবে। শুধু কক্সবাজারের জন্য চিন্তা করলে এই রেললাইন খুব একটা খারাপ হবে না। ওই অংশে রেল যোগাযোগ ছিল না। এখন তা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করলে বাংলাদেশের জন্যও ভালো হবে। - সূত্র: অনলাইন