করোনা দিনের ডায়েরি...
প্রকাশের সময় : 2022-05-28 09:28:49 | প্রকাশক : Administration
৪৩ তম পর্ব
সরদার মোঃ শাহীন
ক’দিন ধরে ভাবছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু লিখবো। সাধারণত রাজনীতি নিয়ে লিখতাম না আমি। সমাজনীতি তথা সমাজ সংসারের নানা অসঙ্গতিই ছিল আমার লেখার মূল প্রতিপাদ্য। কিন্তু এই সমাজের বর্তমান সামাজিকতা এতটাই ধর্ম আর রাজনীতির সাথে মাখামাখি হয়ে আছে যে, চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মোটামুটি ভাবে ধর্ম এড়িয়ে গেলেও রাজনীতি এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। তাই ধর্ম নিয়ে না লিখলেও রাজনীতি নিয়ে লিখি। মন থেকে লিখতে না চাইলেও লিখি। কেমন করে যেন মনের উপর চাপ এসে পড়ে। তাই মাঝেমধ্যে লিখি।
তবে বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনীতি বলতে তেমন কিছু নেই। এখনও প্রচন্ড জনপ্রিয় যেই দলটির রাজনীতি করার কথা, সেই বিএনপিকে দেখলে মনে হয় সদ্য স্বাধীন বাংলার মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগ নামে কোন এক সময়ের বিশাল শক্তিধর একটি দল নামকাওয়াস্তে এখনো বাংলাদেশে আছে এটা দেশের ৯৫% লোকই জানে বলে মনে হয় না। মানলাম মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা ছিল না, তাই হারিয়ে গেছে। কিন্তু বিএনপির তো জনপ্রিয়তা আছে।
তবে, বিএনপি নেতাদের দেখলে মনে হয় না, তারা এটা বিশ্বাস করেন। তারা মনে করেন, শেষ; সব শেষ। এক সময়ের বিশাল শক্তিধর বিএনপি নেতাদের এখন শক্তিহীন সর্বহারা বাম নেতাদের মত লাগে। স্বাধীনতা উত্তর বাম নেতারা এখনো বাংলাদেশে টিকে আছেন কখনো সামরিক শাসক, কখনো আওয়ামী লীগ, আবার কখনো বিএনপির লেজুরবৃত্তি করে। বিএনপিও অনেকটা একই পথ ধরেছে। বিএনপিও মাঠে ময়দানে টিকে থাকতে চাইছে কখনো নূরা পাগলা, কখনো জাফরউল্লাহ কিংবা মামুনউল্লাহর উপর ভর করে।
ঠিক এ কারণেই বর্তমান বাংলার রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে তর্ক, ভারতের বিরোধীতা আর করোনা মহামারী ছাড়া কোন বিষয় নেই। যে যাই বলুক, বাংলাদেশের রাজনীতি বেশ অনেকদিন ধরেই এই তিনটি বিষয়ের মধ্যেই আটকে আছে। এতে কোনপক্ষ কতটা জয়ী হয়েছে তা বলার সময় এখনো না আসলেও নিশ্চিত করেই বলা যায়, প্রথম দুটো বিষয় সরকারকে ততটা কাবু করতে পারেনি; যতটা পেরেছে করোনা। করোনা শুধু সরকারকে নয়, পুরো দেশকেই কাবু করে দিয়েছে। বিশেষ করে গেল প্রায় দেড় বছরে করোনা নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে দেশীয় রাজনীতি।
মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশও আস্তে আস্তে করোনা শূন্য হতে চলেছিল। ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির। টানা দুই মাস করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাস অব্যাহত ছিল। শনাক্তের হার হ্রাস পেতে পেতে ২২ শতাংশ থেকে ২ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছিল। দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচী চালু থাকলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে বলেই মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল।
আমরাও আশা করেছিলাম শীঘ্রই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিপদসীমার অনেক নীচে চলে আসবে। আসেনি। বরং উল্টো হয়েছে। সবাইকে আবার চিন্তায় ফেলে হু হু করে বেড়েছে করোনা। বিষয়টি ভাবনায় ফেলেছিল সবাইকে। যদিও প্রত্যেকের মনের গহীনে একটা শক্ত বিশ্বাস পোক্ত হয়ে ছিল যে, আবার কমতে শুরু করবে। আবার নামতে শুরু করবে আক্রমণের হার। আর যাই হোক, গতবারের মত সারাদেশ থামিয়ে দেবে না।
থামিয়ে দিলে যে কি হবে কে জানে! টেনশান করতে করতে হয়ত মরেই যাবো। এই টেনশান আর ভাল্লাগে না। গত দেড়বছর তো টেনশান করতে করতেই পার করলাম। আজো স্বস্তি পেলাম না। পাবার নামও নেই। অবশ্য এত্ত টেনশানের মাঝেও স্বস্তির খবর আছে। ইতিমধ্যেই মাত্র কয়েক সপ্তাহের লক ডাউনে করোনা যথেষ্ঠ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে লকডাউন নিয়ে আমার বিশ্বাসটা একটু ভিন্ন।
আমি বিশ্বাস করি, লকডাউন না দিয়েও করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। কেননা করোনা নিয়ন্ত্রণের কিছু সহজ পদ্ধতি আছে। সেই সহজ পদ্বতিগুলি সামনে স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও সরকার সেই পথে পুরোপুরি হাঁটেনি। আংশিক হেঁটেছে। যুগ যুগ ধরে মহামারী নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পড়া একটি পরীক্ষিত কার্যকরী ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় জীবন ও জীবিকা একই সাথে চালাতে চাইলে মাস্ক পড়ার কোন বিকল্প নাই। মাস্কের দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
তাই মাস্ক পড়তে জনগণকে বাধ্য করার জন্য প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নিলেই হতো। মাস্ক না পড়লে বড় অংকের অর্থদন্ড ও জেলের ব্যবস্থা করলেই চলতো। পাশাপাশি দরকার ছিল করোনা নিয়ে আবেগময় গান সারাদেশে প্রচার করা। করোনায় আবেগময় গানের মত গান তৈরি করে সারাদেশে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে প্রচারের ব্যবস্থা করা খুব দরকার ছিল।
এসব না করে লকডাউনে চলে যাওয়াটা দেশের অর্থনীতির জন্যে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। যার মোকাবেলা এখন সরকারকেই করতে হবে। তবে এটাও বিশ্বাস করি, সরকার মোকাবেলাটা ভালভাবেই করতে পারবে। কেননা, করোনা কালেও দেশের রিজার্ভের ভান্ডার বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। পুরো করোনায় একমাত্র এটাই ছিল অবিশ্বাস্য রকমের স্বস্তিদায়ক মহা ভাল খবর। সাধারণত মিডিয়া ভাল খবর বড় করে ছাপায় না। এই করোনাতেও ছাপায়নি। এখনও ছাপাচ্ছে না।
বড় করে ছাপায় কাদের মির্জার খবর। কাদের মির্জা কোথায় ধপাস করে বসে পড়লেন, কোথায় বড় মিয়ার বিরুদ্ধে কি বললেন, কোথায় চা খেলেন, সেই চায়ে চিনি ছিল কি না ইত্যাদি। কিন্তু গেল চৌদ্দ মাসে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতি মাসে বাড়তে বাড়তে মোট তেরো কোটি বিলিয়ন বা ১৩০০ কোটি ডলার বেড়ে গেছে এটার প্রতি তাদের খেয়াল নেই। থাকলে এত বিশাল খবর প্রতিবার বিশাল বিশাল হরফে ছাপাতো।
১৩ বছর আগে হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার। এটা ২০০৮ এর কথা। মানে, দেশের স্বাধীনতার ৩৭ বছর পরেও রিজার্ভ ছিল মাত্র ৬ বিলিয়ন। আর ৫০ বছরে এসে দাঁড়ালো ৪৫ বিলিয়ন! মাত্র ১৩ বছরে ৭ গুণেরও বেশি বাড়লো। হাসিনার এই আমলে বছরে দুই বিলিয়ন করে রিজার্ভ বেড়েছে। অথচ গেল একবছরে বেড়েছে ১৩ বিলিয়ন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটি আগে কখনো হয়নি। করোনার শুরুতে ৩২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ঠিক একবছরে এখন ৪৫ বিলিয়নেরও উপরে। এটাই আমাদের করোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশি হয়েও বাংলাদেশকে যার যত ছোটই লাগুক, বা যার যতই খারাপ লাগুক; বিদেশের কাছে বাংলাদেশ এখন সাফল্যের সবচেয়ে বড় একটা উদাহরণের নাম।
উদাহরণ আরো আছে। একটি নয়। অনেক আছে। অন্যগুলো না হয় অন্যদিন দেব। আজ কেবল একটিই দেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন উড়োজাহাজটি গেল ৪ মার্চ বহরে যুক্ত হওয়ার পর উড়োজাহাজের সংখ্যা হলো ২১টি। তন্মধ্যে ১৬টি নিজস্ব এবং ৫টি লিজ। এই ১৬টির মাঝে ১৪টি ব্রান্ড নিউ। মানে চকচকা নতুন। কিনেছেন শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগী হয়ে গেল ১০ বছরে। এটা কেবল শেখ হাসিনাই পারেন।
আর তাঁর বিরোধীপক্ষরা পারে সত্যগুলোকে অস্বীকার করে কিংবা চেপে যেয়ে কেবলই মিথ্যের বেসাতি করতে। আর পারে ঢকমত গালি দিতে। আজকেও নিশ্চিত দেবে। আজ সরকারকে নয়, আজ দেবে আমাকে। আমার আজকের লেখাটি পড়ে তারা আমাকে মন ভরে কষে গালি দেবে। কাঁচা গালি, পাকা গালি। ভেজা গালি, শুকনো গালি! মোটামুটি শুকনো ধরনের সাদামাটা গালিটি হবে এরকম, “সাক্ষাৎ হাসিনার দালাল!! দালালের দালাল!!!” চলবে...