সমুদ্র বাণিজ্যে নতুন মোড়

প্রকাশের সময় : 2022-06-08 16:22:33 | প্রকাশক : Administration
সমুদ্র বাণিজ্যে নতুন মোড়

মোয়াজ্জেমুল হক: দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য মূলত সমুদ্র পথ দিয়েই সম্পন্ন হয়ে থাকে। এসব বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে ৯২ শতাংশই সম্পন্ন হয় দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানির বৃহৎ অংশটি সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এতে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়তি হয়, তেমনি সময়ক্ষেপণ হয়ে থাকে।

এমনিতর পরিস্থিতিতে দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একের পর এক নতুন রুট তৈরি হচ্ছে। এতে করে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সঙ্কুচিত হওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে নতুন দুয়ার খুলে দিচ্ছে। অপার সম্ভাবনার এই বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে যাবে অবিশ্বাস্য গতিতে।

অতিমারী করোনাকাল অতিক্রম করার পর দেশীয় আমদানি ও রফতানিকারক এবং বিভিন্ন শিপিং সংস্থার উদ্যোগে ইউরোপ, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এমনকি আমেরিকার সঙ্গে জাহাজযোগে সরাসরি আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করার তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের সঙ্গে নতুন রুট খুলে গেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য সরাসরি ইতালিতে প্রেরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ইতালির আমদানিকারকগণ এরই মাঝে দু’দফায় তাদের প্রেরিত জাহাজযোগে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে গেছে। চীনের সঙ্গে সরাসরি রুট রয়েছে। তবে তা বড় আকৃতির নয়। যার ফলে এরই মধ্যে আরও চারটি জাহাজ সরাসরি চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি-রফতানি পণ্য আনা নেয়ার অনুমতি পেয়েছে। এমনিভাবে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরের হয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য আনা নেয়ার প্রক্রিয়াটি বাদ দিয়ে সরাসরি করার জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।

ইউরোপ আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্য সিঙ্গাপুর, কলম্বো হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছতে সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত সময় নেয়। সরাসরি রুট চালুর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে তা ১৫ দিনে নেমে আসবে। যা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে জাহাজ চালু হওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে। দেশের অর্থনীতির গতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে বন্দরকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে নিশ্চিতভাবে।

আগামী দিনগুলোতে মংলা, পায়রা বন্দর দিয়ে কন্টেনার হ্যান্ডলিং বর্তমান সময়ের চাইতে অধিকহারে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া পতেঙ্গা টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরের ফাস্ট ফেজ এবং সীতাকুন্ডে বন্দরের নিয়ন্ত্রণে জেটি নির্মাণের ফাস্ট ফেজের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি বেপজার উদ্যোগে মীরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী কেন্দ্রিক একটি জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে সরকারী পরিকল্পনায় পতেঙ্গার লালদিয়ায় বাল্ক টার্মিনাল ও আউটার রিংরোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাতারবাড়ি টার্মিনালের ফাস্ট ফেজের নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল আগামী ২০২৫ এবং বে-টার্মিনাল ২০২৬ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের টার্গেট রয়েছে।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০৪১ সালের পূর্বেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশকে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা অর্জন করবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে এখন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে এই বন্দর দিয়ে সরাসরি বিভিন্ন দেশে কন্টেনার পরিবহনের ঘটনায়।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালির পথ ইউরোপের দেশ স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেও সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি কোম্পানি তিনটি জাহাজ দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করবে। বার্সিলোনা বন্দর এবং নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর রুট হয়ে যাতায়াত করবে। মূলত ইতালির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচল সরাসরি শুরু হওয়ার পর তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের রুট খুলতে অন্যরা এগিয়ে এসেছে।

সরাসরি রুট হলে বার্সিলোনাতে ২০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো যাবে। যা বর্তমানে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো হয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ওই দেশে পৌঁছতে সময় নেয় ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ, চীন, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের সরাসরি রুট খোলার ব্যাপারে পোশাক তৈরির সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর আগ্রহের কমতি নেই। কারণ রফতানি পণ্যের মধ্যে পোশাকই সবচেয়ে বেশি।

যা ইউরোপ, আমেরিকা, চীনসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এই যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ব্যয় এবং সময় বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আর এতে করে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। কারণ এতে করে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতে পারবে।

বর্তমানে সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও পোর্ট কেলাংয়ের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অধিকাংশ পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। অথচ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানির পরিবহন অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এতে করে বিদেশী ক্রেতাদের অর্ডার আরও বেশি পরিমাণে বেড়ে যাবে।

প্রথম সাফল্য এসেছে চট্টগ্রাম ইতালি রুট। আগামীতে স্পেন, চীন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং এমনকি আমেরিকার সঙ্গেও সরাসরি জাহাজ চলাচল রুট শুরু হওয়ার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এসব রুট খুলে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। - সংকলিত

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com