সন্দেহ, সংশয়; সংকট, সমাধান!!

প্রকাশের সময় : 2022-06-08 16:25:15 | প্রকাশক : Administration
সন্দেহ, সংশয়; সংকট, সমাধান!!

সরদার মোঃ শাহীন

 

 

সময়টা খুবই খারাপ যাচ্ছে। চারিদিকে শুধুই অস্থিরতা। অস্থিরতা কোথায় নেই! সবখানে বিদ্যমান। যেমনি সবখানে, তেমনি সব জায়গায়। সারা বিশ্বে, বিশ্বের সব প্রান্তে। এমনকি বাংলাদেশেও। তবে বাংলাদেশে অস্থিরতার চেয়ে আনন্দ বেশি। সারাবিশ্বের জটিল পরিস্থিতিতে দেশীয় একটা শ্রেণী এই প্রত্যাশায় আনন্দিত যে, যেন সংকট আরো ঘনীভূত হয়; যেন দেশটি আবার মাইনকা চিপায় পড়ে।

তারা বলা শুরু করে দিয়েছে, দেশটি অলরেডী মাইনকা চিপায় পড়ে গেছে। সমসাময়িক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে যারাই মাইনকা চিপায় পড়ছেন কিংবা যা কিছু পরিবর্তন হচ্ছে সবই বিশেষ পরাশক্তিধর একটি দেশের কুনজরে, কুটচালে। এটা বোঝার জন্যে খুব বড় পন্ডিত হওয়া লাগে না। অথচ এটা জেনেও দেশের রাজনীতিতে সদ্য আবির্ভূত একজন বিশেষ পন্ডিত বলে বেড়াচ্ছেন, শ্রীলঙ্কা হতে মাত্র ছয় বছর বাকী।

মুলত তিনিও সেই দেশেরই লালিত পালিত তথাকথিত বাঙালি পন্ডিত। বাংলাদেশে তারাই তাকে পাঠিয়েছে। বিশেষ এজেন্ডা দিয়েই পাঠিয়েছে। ভাল করে বাংলায় তেমন কথাবার্তা বলতে পারেন না। তবে ইংরেজিতে পাকনা। বেশ পটর পটর করতে পারেন। দারুণ ইংরেজি বলা মানুষ তিনি। বাঙালি সমাবেশেও তাই অবলীলায় ইংরেজিতে বক্তৃতা করেন। বাঙালি তার কথা তেমন না বুঝলেও যারা তাকে দেশে পাঠিয়েছে তার বেশ বোঝেন।

তাদের বোঝার জন্যই তিনি বলেন। বলেন, দেশে মোটেই সুশাসন নেই। গণতন্ত্র নেই। আছে লুটপাট। তিনি আরো অনেক কিছুই বলেন। তবে যত কথাই বলেন, সেসবে সত্যতা কম থাকলেও তার এই কথাগুলো সত্যি, দেশে সত্যি সত্যি সুশাসন নেই। নেই আইনের প্রকৃত শাসন। তিনি ঠিক বলেছেন। তবে গণতন্ত্র নেই কথাটি পুরোটা ঠিক বলেননি। গনতন্ত্র আছে। কিন্তু সেটা বড়ই দুর্বল গণতন্ত্র। শক্তিশালী গণতন্ত্র নেই এদেশে।

তবে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, গত তেরটি বছর ধরে দেশে এসবের অভাব কেবল। এর আগে সবই ঠিকঠাক ছিল। আমার আপত্তিটা ঠিক এই জায়গায়। শুধুমাত্র এই তেরটি বছর নয়, স্বাধীনতার ৫০টি বছরে দেশে কখনোই সুশাসন ছিল না। ছিল না শক্তিশালী গণতন্ত্রও। বরং তিনি যে দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন এদেশে, সে দেশের কুনজরে এদেশের সুশাসনের যাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যখনই এদেশে গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরী হয়েছে, তখনই সেসব বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এবং ৭১ এ প্রকাশ্যে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এদেশের স্বাধীনতা অর্জন। আর এবার মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পন্ডিত মহোদয়কে পাঠানো হয়েছে। মাহাতির মোহাম্মদকেও ঠিক এভাবেই বাঁধা দেয়া হয়েছিল। সেই চিহ্নিত পরাশক্তিই বাঁধা দিয়েছিল। এবং বাঁধা দিতে নেয়া হয়েছিল নানাবিধ কৌশল। কাজে লাগেনি। বাংলাদেশেও কৌশল নেয়া হয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সেসব কৌশল কাজে লাগবে কি না এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা এবং সহিংসতা ছড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছে অশুভ চক্রটি। এই চক্র ক্রমাগতভাবে গুজব ছড়িয়ে দেশে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। একহাজার টাকার নোট বন্ধের মিথ্যে গুজব তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। তবে এই ধরনের তথ্য গুজব বলে খুব দ্রুততার সঙ্গে গুজবটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে অরাজকতা ও অস্থিরতার হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে সরকার।

এরা ক্রমাগতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। যাতে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, অবিশ্বাস তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। গুজবের ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাসিরনগর, কুমিল্লা, রামু, রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। এমনকি চাঁদে একজনকে দেখা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

তবে ফাইনালী একবারও সুবিধে করতে পারেনি। পেরেছে সরকার তথা জনগণকে ফাঁপর দিতে। আর পেরেছে কয়টা দিন সাময়িক উল্লাস করতে। এবারও তারা উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। একটা কিছু ক্যাচাল বাঁধাতে পারলেই তারা উল্লাস শুরু করে। পাকিস্তানে যখন ইমরান সরকারের পতন হলো, ওদের সে কী উল্লাস! আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় আসলো। তখনো ওরা উল্লাস করে ফাটিয়ে ফেললো। শ্রীলংকায় সরকার পতনেও যারপরনাই উল্লাস করলো। তারা ভাবা শুরু করলো বাংলাদেশ শীঘ্রই শ্রীলংকার মতো হবে।

কেমনে হবে? শ্রীলংকার তো অর্থনীতিতে বেহাল অবস্থা। রিজার্ভ প্রায় শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত পর্যটন বন্ধ হয়ে আছে দু’বছর করোনার কারণে। দেশীয় জিডিপি কখনোই ভাল ছিল না। অন্যদিকে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের উপরে। রফতানী এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবৃত্তি এখনো উর্ধ্বমুখী। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আবারো ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়া করোনার চরম দুর্দিনেও গেল এক বছরের ব্যবধানে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২১ হাজার ৭৩২ টাকা। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করে মাথাপিছু আয় বছর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে, যা টাকার হিসাবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭০ টাকা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই বড় প্রমাণ।

এটা বড় বড় বিশ্লেষকদের বিশ্বাস। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, অবস্থা যতই খারাপ হোক, শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি দূর্বল হবে না। কেননা এই দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রীলংকার মতো সাম্প্রদায়িকতা চাষ করা হচ্ছে না। সরকারের অর্থনৈতিক পলিসিও স্ট্রং। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের দুটি খাত- গার্মেন্টস রফতানি এবং প্রবাসী রেমিটেন্স দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কাকে দেখে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।

আশঙ্কা যাতে না হয়, সেজন্যে নাগরিক হিসেবে আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে। বিশ্ব ক্রাইসিসের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা যদি তেলের মত ঘাটতি দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে দেই, কিংবা তেল ছাড়া রান্নার পাশাপাশি ভোজ্যতেলের বিকল্প উৎসগুলোর সন্ধান করি, তাহলে সংকট যতো প্রলম্বিতই হোক, ইনশাল্লাহ আমরা বিপদে পড়বো না। সরিষা, বাদাম, সূর্যমুখীর মত তেল উৎপন্নকারী ফসলের চাষ বাড়ালে আমদানি নির্ভরতা কমবে। কমতে বাধ্য। তেল সংকটের স্থায়ী সমাধান তো সেখানেই।

শুধু তেলই নয়। যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। নানা সামগ্রীর ঘাটতি পড়বে। গমের মত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ঘাটতি পড়বে। কেননা বিশ্বে গমের মূল উৎস রাশিয়া এবং ইউক্রেন। তবে ভাবসাবে মনে হয় না, যুদ্ধ এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ইউরোপ ছাড়িয়ে এই যুদ্ধ ৩য় বিশ্বযুদ্ধে মোড় নেয় কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। এসব নিয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে।

শুধু সরকারের নয়, আমাদেরও। সম্ভাব্য এই সংকটের দায় শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের ওপর দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। পণ্য ব্যবহারে জনগণকেই সংযমী হতে হবে। আর ছাড়তে হবে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার নগ্ন এবং ন্যাক্কারজনক প্রবণতা। তবে নিঃসন্দেহে সরকারের দায় সবচেয়ে বেশি। কেউ যেন সুযোগ বুঝে স্টক করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ম নজরদারী বাড়াতে হবে সরকারকে। কঠোর ভাবে বাড়াতে হবে। আর দেশে দিতে হবে প্রকৃত সুশাসন।

তবে ষড়যন্ত্রকারী যারা সুশাসনের কথা বলছে তারা জাষ্ট ভন্ডামী করছে। দু’নম্বরী করছে। দেশে সুশাসন নেই, শক্তিশালী গণতন্ত্র নেই; এটা মোটেই মিথ্যে নয়। আবার দেশের রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় এবং সংকট আছে; এটাও ধ্রুবতারার মত সত্যি। তারচেয়েও বড় সত্যি হলো এসব সমস্যার সমাধানও আছে। এখন কাজ হলো সেই সমাধান খোঁজা। কিন্তু দু’নম্বরী করা না। মানলাম যারা শক্তিশালী গণতন্ত্র দিচ্ছে না, তারা দু’নম্বরী করছে। কিন্তু একটা দু’নম্বরী থেকে বের হবার জন্যে কেউ দশটা দু’নম্বরী করবেন, এটা তো হতে পারে না। হতে দেয়াও যায় না।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com