পর্বতময় দেশ: ইরান

প্রকাশের সময় : 2022-06-25 10:04:02 | প্রকাশক : Administration
পর্বতময় দেশ: ইরান

জেসিউর রহমান শামীম: দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র ইরান। যার রাষ্ট্রীয় নাম জমহুরি-ই-ইসলামী-ই-ইরান বা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। ইরান বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলির একটি। এখানে হিমালয়ের পরেই এশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ দামভান্দ অবস্থিত। সৌদি আরবের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। এর উত্তরে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান,  কাস্পিয়ান সাগর ও তুর্কমেনিস্তান; পূর্বে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান; দক্ষিণে ওমান উপসাগর,  হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগর, এবং পশ্চিমে ইরাক ও তুরষ্ক। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বর্তমান ইরান ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য ও পারস্যের কেন্দ্র। প্রায় ২০০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে “ইরন”নামে ডাকত। কিন্তু গ্রিকরা এই অঞ্চলকে “পার্সিস”(বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ) বলে ডাকত, এবং সেখান থেকে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম হয় পার্সিয়া বা পের্সিয়া। ১৯৩৫ সালে ইরানের শাসক দেশটিকে কেবল "ইরান" বলে ডাকার অনুরোধ জানানোর পর থেকে এই নামেই সারা বিশ্বে দেশটি পরিচিত। ইরান নামটি এই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী আর্য গোত্রের নাম থেকে নেয়া হয়েছিল এবং সেখান থেকে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম পার্সিয়া হয়, যা বাংলায় লিপ্যন্তর করলে হয় পারস্য।

১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী ইরান শাহ কিংবা রাজারা শাসন করতেন। ১৯৭৯ সালে ইরানী বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং ইরানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলটি ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র।

তেহরান ইরানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী; শহরটি ইরানের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত। ইরান একটি বহু-সাংস্কৃতিক দেশ যেখানে অনেক উপজাতীয় এবং ভাষাগত দল রয়েছে। ইরানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার আছে। বিংশ শতকের শুরু থেকে পারস্য উপসাগরের অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ দেশের মতো ১৭ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইরানেরও তেল রপ্তানি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

ইরান হচ্ছে এমন একটি দেশ যা মানব জাতির সুপ্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার অধিকারী এবং অপর কতক সুপ্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার মাঝখানে অবস্থিত। ইরানের এক দিকে অদূরেই চীন ও সিন্ধু সভ্যতার অবস্থান, অন্য দিকে বাইনান্নাহরাইন (দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ মেসোপটেমিয়া বা ইরাক) এবং নীল নদ কেন্দ্রিক (মিশরীয়) সভ্যতার অবস্থান। একারণে মানব সভ্যতা গঠন ও বিকাশ বিস্তারের ইতিহাসে ইরান সব সময়ই একটি উন্নততর ও সুবিধাজনক অবস্থানের অধিকারী ছিল। তেমনি পূর্বের দুই সভ্যতা ও পশ্চিমের দুই সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পারিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার কাজটিও সব সময়ই ইরানের মধ্য দিয়েই হয়েছে যা ইরানের ভূমিকা, মর্যাদা ও অবস্থানের গুরুত্ব অধিকতর বৃদ্ধি করেছে। তৈল আবিষ্কার ও উত্তোলন শুরু হবার পর থেকে ইরানের সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে নতুন অর্থনৈতিক অবস্থানও যুক্ত হয়েছে, যা ইরানের গুরুত্বকে আরো বৃদ্ধি করেছে এবং ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের তুলনায় অধিকতর গুরুত্বের অধিকারী করেছে।

ইরানে মূলত তিনটি ভাষা পরিবারের ভাষা প্রচলিত: ইরানীয় ভাষাসমূহ, তুর্কীয় ভাষাসমূহ এবং সেমিটীয় ভাষাসমূহ। সবচেয়ে বেশি ভাষাভাষী বিশিষ্ট ও ভৌগোলিকভাবে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হল ইরানীয় ভাষা পরিবারের সদস্য ভাষাগুলি। এদের মধ্যে ফার্সি ভাষা প্রধানতম ভাষা। ফার্সি ইরানের জাতীয় ভাষা।

গোলাপ ও আঙ্গুর-লতার দেশ ইরানের স্থাপত্য-শৈলী মনোমুগ্ধকর ও অনুপম শিল্প-রসে সিক্ত কবিতার মতই অনন্য। যুগে যুগে এখানকার নারাঙ্গী বন, সুদৃশ্য ঝাউ গাছ, দ্রাক্ষাকুঞ্জ, চেনার ও দেবদারুসহ দৃষ্টিনন্দন নানা বৃক্ষ শোভিত সবুজ প্রান্তর, উচ্ছ্ল পাহাড়ি ঝর্ণা আর প্রাকৃতিক বীথিকার সমারোহ ইরানীদেরকে করেছে শিল্প ও সৌন্দর্যপ্রেমী। তাই ইরানী স্থাপত্যশিল্পীরাও সৃষ্টিশীল এই প্রেরণা নিয়ে নগর-সভ্যতাকেও মন-ভোলানো নানা অলংকার দিয়ে সাজিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন। প্রকৃতির রূপ-মাধুরির মত ইরানের স্থাপত্য-শৈলী দেখে যে কারো মনে হবে, সুন্দর তুমি কত রূপে কতভাবে প্রকাশিছ আপনারে।

নাসিক-ই-জাহান মসজিদ ইরানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মসজিদ। ইরানের ইস্পাহান প্রদেশে এর অবস্থান। এছাড়াও ব্রিজ অফ ইস্পাহান ইরানে ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। চীনের প্রাচীরের মত ইরানে রয়েছে রুধখান ক্যাসেল। ইরানের গিলান অঞ্চলের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এই জায়গাটি। এছাড়াও দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে- কাতালেখোর কেভ, হরমুজ আইল্যান্ড, লুত মরুভূমি ইত্যাদি। আর রোমাঞ্চকর শহর গুলোর মধ্যে রয়েছে- তেহরান, তাবরিজ, ইস্পাহান, সিরাজ, মাশহাদ, আভাজ এর মত শহরগুলো।

সাধারণত ইরানের প্রধান খাবারের মধ্যে আছে চাল, মাংস (যেমন ভেড়ার, মুরগি বা মাছ), সবজির (যেমন পেঁয়াজ এবং বিভিন্ন শাক) সাথে বাদামের মিশ্রণ এবং বাদাম। তাল, ডালিম, কুইন, প্রুনি0স, খুরফু, এবং রেসিনসের মতো ফলের সাথে প্রায়শই সবুজ গুল্ম ব্যবহার করা হয়। ইরানীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মশলার মধ্যে আছে জাফরান, শুকনো লেবু, দারুচিনি এবং পেসলে যা বিশেষ খাবারের সাথে ব্যবহৃত হয়।

৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ইরানিরা একটি বিশেষ মজার খাবার তৈরি করেছিল যা গোলাপের পানি ও সেমাই দিয়ে তৈরি করা হতো। যা গ্রীষ্মকালে রাজপ্রাসাদে পরিবেশন করা হতো। বরফকে জাফরান এবং ফল ও অন্যান্য স্বাদের সঙ্গে মিশ্রিত করা হতো। আজকের দিনে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানী মিষ্টি জাতীয় খাবার হচ্ছে আধা জমায়িত নুডলস দিয়ে তৈরী ফালুদা যার শিকড় সাবেক রাজধানী শিরাজ শহরে। বাস্তানি ই জামেরানী ফার্সি শব্দের অর্থ জাফরান আইসক্রিম একটি ঐতিহ্যবাহী ইরানী আইসক্রিম যা সাধারণত "ঐতিহ্যবাহী আইসক্রিম" নামে পরিচিত। অন্যান্য প্রকারের ইরানী ডেজার্টগুলি বিভিন্ন ধরনের চাল, গম ও দুগ্ধবৈচিত্র্যে তৈরি হয়।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com