মানুষের কল্যাণে দিন কাটে তাদের

প্রকাশের সময় : 2018-08-29 21:24:04 | প্রকাশক : Admin
মানুষের কল্যাণে দিন কাটে তাদের

সিমেক ডেস্কঃ পাঁচ সন্তান প্রবাসে গড়েছেন স্বপ্নের ঠিকানা। কিন্তু দেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধা সেখ বনি আমীন ও আখতার বানু। এই চিকিৎসক দম্পতি বার্ধক্যের ঝক্কি সামলে দেশ ও মানবতার সেবায় নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের শেষ সময়টুকু প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সেবায় কাটাতে চান একাত্তরের রণাঙ্গনে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী এই দম্পতি।

দেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায়ও তাদের অবদান কম নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একাত্তরের ঐতিহাসিক ১০টি সনদ জমা দিয়ে বনি আমীন ও আখতার বানু গৌরবের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ নিয়ে রাজধানীর মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসের বাসভবনে কথা হয় তাদের সঙ্গে। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বনি আমীন কথায় কথায় মেলে ধরেন যুদ্ধদিনের স্মৃতির ঝাঁপি। দেখালেন সেই সময়ের ঐতিহাসিক কয়েকটি ছবিও। গল্পে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা আখতার বানুও। শোনালেন শরণার্থী শিবিরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলার কাহিনী।

বনি আমীনের জন্ম বাগেরহাটে। পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬২ সালে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আখতার বানুর সঙ্গে বিয়ে হয় বনির। একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে কর্মসূত্রে কুষ্টিয়ায় ছিল এই দম্পতি। ২৮ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে সেখান থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে চলে যান ডাঃ বনি। তার সন্তানরা তখন নিতান্তই শিশু। ১৪ এপ্রিল বালুবাহী নৌকা ভাড়া করে গড়াই ও পদ্মা পাড়ি দিয়ে সীমান্তের ওপারে সাদীখানদেয়াড়ে যান পুরো পরিবার নিয়ে।

আখতার বানুর জন্ম এবং শৈশব কেটেছে মুর্শিদাবাদে। সীমান্তের ওপারে গিয়ে দেখলেন যুদ্ধ থেকে বাঁচতে শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়ে আসা অসহায় মানুষ কলেরায় কুপোকাত হচ্ছে। আখতার বানু সেই দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, কলেরা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। দিনে দুই-তিন হাজার মানুষও মারা গেছে। শরণার্থী শিবির এবং রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন বনি ও আখতার। পরিস্থিতি সামাল দিতে রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় দুই টিমে বিভক্ত হয়ে স্বামী-স্ত্রী শরণার্থী শিবিরে সেবা দিতে থাকেন।

এ খবর প্রচার হওয়ার পর এই চিকিৎসক দম্পতিকে কলকাতায় ডেকে নেয় প্রবাসী সরকার। ১৯৭১ সালের ৬ মে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বনি ও আখতারকে নিয়োগ দিয়ে পাঠায় মুর্শিদাবাদের সাদীখানদেয়াড় হাসপাতালে। সেখানে শরণার্থী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন তারা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কুষ্টিয়ায় ফিরে ডাঃ বনি আমীন ও ডাঃ আখতার বানু দেখলেন তাদের ঘরবাড়ির চিহ্নও নেই। কিছুদিন পর বাগেরহাটের সাতশৈয়ারে স্থানীয়দের সহায়তায় পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে কিছু জমি পান বনি। তার বাবা হাজী আবদুল হামিদ ছেলেবেলায় তাকে শোনাতেন একটি স্কুল নির্মাণের স্বপ্নকথা। বাবার সেই স্বপ্ন নিজের বুকেও গেঁথে রেখেছিলেন বনি। ১৯৭৩ সালে স্বপ্ন পূরণের উদ্যোগ নেন। প্রতিষ্ঠা করেন ‘হাজী আবদুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। বর্তমানে ফকিরহাট এলাকার শীর্ষস্থানীয় স্কুল এটি। আটশ’ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে এখানে।   

২০০৩ সালে ৪১ বছরের চিকিৎসা পেশা থেকে অবসর নেন বনি আমীন ও আখতার বানু। এরপর দেশের বাইরে গিয়েছেন ছেলেমেয়েদের কাছে বেড়াতে। এই দম্পতির বড় মেয়ে ডাঃ জুড়ী সাইদা থাকেন নিউজার্সিতে। মেজ মেয়ে তাহীরা আমিন নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছোট মেয়ে ডাঃ নাজমা আক্তার ও ছোট ছেলে ডাঃ সেখ টনি আমীন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। বড় ছেলে সেখ সানী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছেন। পেশাজীবনের সমাপ্তি টেনে চাইলে বিদেশ-বিভূঁইয়ে থিতু হতে পারতেন বনি ও আখতার। কিন্তু মানবতার টানে ফিরেছেন দেশের মাটিতে।

নিজ গ্রামে বনি আমীন গড়ে তুলেছেন ‘ডাঃ আখতার বানু মাতৃসদন’। আর আখতার বানু ২০০৮ সালে সাতশৈয়ার পাগলা শাহপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ডাঃ সেখ বনি আমীন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। এই স্কুলে বর্তমানে ছাত্রী আছে দেড়শ’ জন। প্রতি বছর সবাইকে নিজ উদ্যোগে স্কুলড্রেসও বানিয়ে দেন আখতার বানু। ২০১০ সালে রত্নগর্ভা মা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

সন্তান ও স্বজনরা বিদেশে থাকায় দেশে নিজগৃহে নিভৃতে দিনযাপন করছে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা এই চিকিৎসক দম্পতি। তাদের সঙ্গী হিসেবে আছেন একজন গৃহকর্মী এবং ২৫ বছর ধরে গাড়িচালকের দায়িত্ব পালনকারী কুষ্টিয়ার কামাল। বনি আমীন ও আখতার বানুর মানবসেবামূলক সব কাজের সাক্ষী তিনি। সূত্র : সমকাল

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com