যারা বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানাতে চান

প্রকাশের সময় : 2022-08-03 16:18:03 | প্রকাশক : Administration
যারা বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানাতে চান

প্রভাষ আমিন: ২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আছে। এমনিতে বাংলাদেশে এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেই একটি দলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে যায়। সেখানে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগেরও নিশ্চয়ই জনপ্রিয়তা আগের জায়গায় নেই। দেশকে একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করালেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগও কম নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিস্তর অভিযোগ। দুর্নীতি, অর্থপাচার, স্বজনপ্রীতির অভিযোগও কম নয়।

একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোয় একটি দলকে ক্ষমতা থেকে হটানোর দুটি উপায়। আওয়ামী লীগকে হটানোর দুটি রাস্তা। এক হলো, নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায় নিয়ে সরকার হটানো। কিন্তু বিরোধীদের ধারণা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে হটানো যাবে না। আর দ্বিতীয় উপায় হলো, মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার মতো তীব্র গণ-আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। কিন্তু আমাদের বর্তমান বিরোধী শক্তি তার কোনোটাই করতে পারছে না। তাই তারা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছে, কখন কোনও দৈবশক্তি বাংলাদেশে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেবে।

ভারতে কংগ্রেস সরকারের অবসানেও এই মহলটি উৎফুল্ল− হন, ভাবেন বিজেপি সরকার আওয়ামী লীগকে হটিয়ে দেবে। তালেবানরা আফগানিস্তান দখলের পর সে দেশের বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে চাওয়া মানুষের ঢল নেমেছিল। তখন বাংলাদেশের অনেকে বলেছিলেন, একদিন বাংলাদেশের বিমানবন্দরেও এ ধরনের পরিস্থিতি গৃষ্টি হবে। পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের পরও অনেকে উৎফুল্ল হয়েছিলেন, এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশেও ক্যু করার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অনেকে বলেছিলেন, এরপর সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। এখন তো শ্রীলঙ্কার অভ্যুত্থান দেখে উল্লাসের বান ডাকে তাদের মধ্যে। তারা অঙ্ক করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশও শিগগিরই দেউলিয়া হয়ে যাবে, বাংলাদেশেও অভ্যুত্থান হবে। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটা বুঝি আনন্দের ব্যাপার। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু দেশকে দেউলিয়া বানিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর ভাবনা দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। যারা আওয়ামী লীগের পতন চাইতে বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানাতে দ্বিধা করেন না, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

আওয়ামী লীগ অনেক খারাপ কাজ যেমন করেছে, অনেক অনেক ভালো কাজও করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই লড়াইকে কঠিনতর করে তুলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটা কঠিন সময় পার করছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে, দুই বছর পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিয়েও সরকার প্রবল চাপে আছে। অনেকেই ভাবছেন, এই সংকট বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার সংকট আর বাংলাদেশের সংকট এক নয়। শ্রীলঙ্কার সংকট শুরু হয়েছে যুদ্ধের আগেই। আর যুদ্ধের কারণে এখনকার যে সংকট সেটা শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের। এখনকার সংকটটা আসলে আমদানি করা। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথেই সংকট ওঠানামা করবে। সংকট মোকাবিলায় সাশ্রয়ের নীতি নিয়েছে সরকার। এছাড়া আসলে আর কোনও উপায় নেই। আমদানি কমানো, রফতানি বাড়ানোর মাধ্যমে রিজার্ভের অবনতি ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। যতদিন যুদ্ধের প্রভাব থাকবে, ততদিন সামগ্রিকভাবে আমাদের মিতব্যয়ী থাকতে হবে, রাশ টানতে হবে চাহিদার। যুদ্ধ আসলে একটা ঝড়ের মতো। যার ঝাপটা সবার ঘরেই লাগবে। আপনার ঘর যদি মজবুত হয়, তাহলে আপনার গায়ে ঝড়ের ঝাপটা কম লাগবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত এখন অনেকটাই মজবুত, তাই যুদ্ধের ঝড় আমাদের হয়তো উড়িয়ে নিতে পারবে না, তবে ঝাপটা তো কম বেশি লাগবেই। বিপদে-আপদে আমরা নিজেদের পারিবারিক ব্যয় যেমন কাটছাঁট করি, রাষ্ট্রেরও তেমন কাটছাঁট করতে হয়।

শ্রীলঙ্কা সামর্থ্যরে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছিল, সেই ঋণে তারা বিনিময় আসবে না জেনেও দেখনদারি প্রকল্প বানিয়েছে। ভুল নীতিতে ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের সংকট নেই। বাংলাদেশ কেন শ্রীলঙ্কা হবে না, তা অর্থনীতিবিদরা নানা পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আগেই। সাধারণ চোখেও আমরা বুঝি, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা নয়, কখনও হবেও না। দেশকে যদি ভালোবাসেন, তাহলে আমাদের সবার দায়িত্ব হলো, নিজ নিজ জায়গা থেকে সংকট উত্তরণে কাজ করা। বাংলাদেশ আর আওয়ামী লীগ এক নয়। আওয়ামী লীগের পতন দেখতে যারা বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানাতে চান, তারা আর যাই হোক দেশপ্রেমিক নন। শকুনের মতো অপেক্ষা করা কোনও কাজের কথা নয়। - লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com