আরব্য উপন্যাসের দেশ ইরাক

প্রকাশের সময় : 2022-08-03 16:24:30 | প্রকাশক : Administration
আরব্য উপন্যাসের দেশ ইরাক

জেসিউর রহমান শামীম: আরব্য উপন্যাসে বাগদাদের কাহিনী প্রায় সবার কাছেই কম বেশি জানা। আরব্য উপন্যাস আলিবাবা চল্লিশ চোরের কাহিনী লেখা হয় পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরাকে। যার পুরো নাম ইরাক প্রজাতন্ত্র। এর উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরান, দক্ষিণ-পূর্বে কুয়েত, দক্ষিণে সৌদি আরব, দক্ষিণ-পশ্চিমে জর্দান এবং পশ্চিম সীমান্তে সিরিয়া অবস্থিত। পারস্য উপসাগরে ইরাকের প্রায় ৫৯ কিলোমিটার উপকূল রয়েছে। দেশটির প্রধান দুটি নদী হলো দজলা ও ফোরাত।

দজলা এবং ফোরাত নদীর পানির উৎস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী এলাকা। দজলার তীর খাড়া হওয়ায় প্রধানত ফোরাতের তীর ধরেই পানি প্রবহমান।  দক্ষিণ সীমান্তে এসে দজলা ও ফোরাত একত্রে মিলে পারস্য উপসাগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। উঁচু পাহাড়ের ঝর্ণা ও বরফ গলা পানিই সেচের প্রধান উৎস। খাল কেটে সমতলে পানি এনে কৃষিকাজ পরিচালনার সাফল্য নির্ভর করে সম্ভাব্য শ্রমশক্তির প্রাপ্তির ওপর। প্রাচীন কাল থেকে এমন ধারাই চলে এসেছে। এই নদী দুটির কারণে ইরাকের জমি অত্যন্ত উর্বর। দুই নদীর মধ্যবর্তী এলাকা মেসোপটেমিয়া নামে পরিচিত। সভ্যতার লালনভূমি বলা হয় এই অঞ্চলটিকে। মানুষের লিখতে-পড়তে শেখা, আইন তৈরি, সুসংগঠিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে শহর প্রতিষ্ঠা ও বসবাস এই এলাকা থেকেই শুরু হয়। মিডিলিষ্টের সব দেশেই গরম কালে প্রচুর গরম ও শীতকালে তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। ইরাকেও এর ব্যতিক্রম নয়।

এ অঞ্চলটি একসময় ‘উরুক’ নামে পরিচিত ছিল। ইরাক শব্দটি আসে উরুক থেকেই। এ এলাকায় সভ্যতার জন্ম হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ সহশ্রাব্দ থেকে। ১৯২০ সালে তৎকালীন লিগ অব নেশনসের (বর্তমান জাতিসংঘ) মাধ্যমে ইরাকের নতুন সীমান্ত নির্ধারণ হয় । ওসমানিয়া সাম্রাজ্য দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর ওই সময় ইরাকের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ব্রিটেনের হাতে। মধ্যেপ্রাচ্যর এই দেশটি ব্রিটেন থেকে দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৩২ সালে। তখনো ইরাকে রাজতন্ত্র ছিল। ১৯৫৮ সালে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে, প্রতিষ্ঠা হয় ইরাকি প্রজাতন্ত্র।

ইরাকের আয়তন ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩১৭ বর্গ কি,মি,। আয়তনের দিক থেকে ৫৯ তম দেশ ইরাক। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার। ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। বাগদাদ একটি ঐতিহাসিক শহর। এক সময় ইরাক সারা বিশ্বে চর্চার বিষয় ছিলো।

মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় চাকার আবিষ্কারসহ বেশ কিছু নতুন ধারার শুরুটা হয়েছিল সেখানেই। দানাশস্য উৎপাদনের জন্য কৃষিযুগের প্রবর্তনসহ জোড়া বা টানা হাতের লেখা, গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে মেসোপটেমিয়া আজও বিশ্বসভ্যতার ধারক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

মেসোপটেমিয়ার সমগ্র অঞ্চলজুড়ে কৃষিকাজ এবং তাঁবু খাটিয়ে বাস করা যাযাবর রাখালদের বিচরণ ছিল। তারা গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীসংলগ্ন আদ্র তৃণভূমিতে ভেড়া, ছাগল চরিয়ে বেড়াত। পরবর্তীতে তারা উট পালনও শুরু করে। এলাকাটিতে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাথর, মূল্যবান ধাতু, কাঠের অভাবজনিত কারণে কৃষিসম্পদ বিপণনের বিনিময়ে বাহির থেকে ওইসব দ্রব্য আনা হতো। এই অঞ্চলের দক্ষিণের জলাভূমির জলপ্রবাহের সঙ্গে মাছ শিকারের সংস্কৃতি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে চলে আসছে। ইরাকিরা বাড়িতে মৌমাছি পালন করে থাকেন, এটাকে তাদের আয়ের প্রধান উৎস বলে মনে করেন। প্রচুর পরিমাণে খেজুর উৎপাদন হয়ে থাকে ইরাকে।

প্রাচীন প্রস্তরযুগীয় সময়ে চিত্র গ্রহণের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হত। মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন রাজবংশীয় রাজাদের ইতিহাস লেখা শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব মধ্য-তৃতীয় সহশ্রাব্দে কীলকাকার বর্ণমালা দিয়ে। মুসলিম বিজয় ও খলিফা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে এই রীতির সমাপ্তি ঘটে। তখন থেকে এই অঞ্চলটি ইরাক নামে পরিচিতি লাভ করে। এই সময়ের মধ্যে মেসোপটেমিয়া বিশ্বের প্রাচীনতম অতি উন্নত এবং সামাজিক রাষ্ট্রে রূপ নেয়। নদী এবং জলপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল সুমেরীয়রা সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাসযোগ্য জমিতে প্রথম শহরগুলো তৈরি করেছিল। বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই কঠিন ও বিপজ্জনক। ফলে সুমেরীয় শহরগুলো আলাদাভাবে স্বাধীন সিটি-স্টেট হিসেবে গড়ে ওঠে। প্রাচীন কালে ব্যবিলন, সুমেরীয় ও মেসোপটোমিয়ার মতো প্রচীন সভ্যতা গুলো এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিলো।

ইরাকের সরকারি ভাষা আরবি। এছাড়াও এখানে কুর্দিস, তার্কিস, আর্মেনিয়ান ভাষা প্রচলিত। তবে ইরান সিমান্তে এখনও বড় একটা অংশ আছে যারা পার্সিয়ান ভাষা ব্যবহার করে। ইরাকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিক্ষার হার কম। এদেশের শিক্ষার হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৩ শতাংশ হারে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইরাক শিক্ষা-দীক্ষায় খুব সচেতন তাই এই অল্প জনসংখার দেশে ৬৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

অভ্যন্তরীণ সমস্যা গুলো না থাকলে ইরাক ধনী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হতো, কেননা ইরাকে তেলের খোঁজ ১৯২৭ সালেই হয়েছিল। বর্তমানে ইরাক বিশ্বের পঞ্চম খনিজ তেল উৎপাদনকারি দেশ। তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। অন্যান্য আরব দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে ইরাক। এসবের মূল কারণ হিসাবে ইরাকের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ি করা হয়।

ইরাকের সাধারন মানুষ খুব মিশুক। অনান্য আরব দেশের তুলনায় ইরাকি মেয়েরা বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন। নাচ গান ইরাক সাংস্কৃতিক অংশ হিসাবে ধরা হয়। আরবাইন উৎযাপনের জন্য ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শিয়া মতাদর্শিরা একত্রিত হয় ইমাম হোসেন (রাঃ) এর মাজার প্রাঙ্গনে। পূর্বে পরিবারের সম্মান রক্ষায় কোন নারীকে হত্যা করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হতো না। বিবাহ করতে হলে বিশাল অংকের টাকা দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় বর পক্ষকে।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com