রেলকে লাইনে তুলতে কী করতে পারি আমরা?

প্রকাশের সময় : 2022-08-17 16:18:03 | প্রকাশক : Administration
রেলকে লাইনে তুলতে কী করতে পারি আমরা?

প্রভাষ আমিন: দিনের পর দিন রেলওয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা ভেবেছি, এটাই বুঝি রেলওয়ের নিয়ম। দেওয়ালে ঠেকানোর মতো পিঠও আর বাকি নেই। কিন্তু সবাই তো আমাদের মতো মুখ বুজে সয়ে যাওয়া ধরনের নাও হতে পারেন। যেমন নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। গত ঈদের আগে অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে তিনি রীতিমতো প্রতারণার শিকার হন। তার টাকা কেটে নিলেও টিকিট পাননি। এই অনিয়ম তাকে ক্ষুব্ধ করে। নানা অনিয়ম প্রতিদিন আমাদেরও ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু আমরা সেই ক্ষোভ গিলে ফেলি। কিন্তু মহিউদ্দিন রনি আমাদের মতো নন। বুকভরা ক্ষোভের বারুদ নিয়ে তিনি রেলের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একাই আন্দোলনে নামেন। ৭ জুলাই থেকে তিনি ৬ দফা দাবি নিয়ে কমলাপুরে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। তার আন্দোলন একার এবং শান্তিপূর্ণ। এমনকি ঈদের দিনও তিনি কমলাপুরে কাটান।

শুনে একজন বললো, এই ছেলে পাগল নাকি। হয়তো পাগল। কিন্তু রনির মতো পাগলরা এখনও আছেন বলেই দেশটা এখনও ধ্বংস হয়ে যায়নি। রনির অবস্থানে রেলওয়ের টনক নড়েনি, তবে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে হাইকোর্টের। তারাও জানতে চেয়েছেন, রেলওয়ের অনিয়ম নিয়ে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানেও সত্যতা মিলেছে রনির অভিযোগের।

এরই মধ্যে রেলওয়ের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সহজডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও যথারীতি কমিটি গঠন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে ধরনের দায়সারা বক্তব্যে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমাধান ছাড়া মাঠ ছাড়তে রাজি নন মহিউদ্দিন রনি। এরই মধ্যে তার প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে গেছে সবখানে। অনেকেই রনির দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।

তার আগে দেখে নেয়া যাক, রনির ৬ দফা দাবিগুলো।

১. টিকিট ব্যবস্থাপনায় হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, হয়রানির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে;

২. যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে;

৩. অনলাইন কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। অনলাইন বা অফলাইনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে;

৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রেলের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে;

৫. রেলের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ দায়িত্বশীলদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে আনতে হবে এবং রেলের সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে;

৬. রেলে ন্যায্যমূল্যে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মহিউদ্দিন রনির দাবির সাথে একমত হবেন না, এমন লোক একজনও নেই। আমার ধারণা রেলমন্ত্রী নিজেও রনির সাথে একমতই হবেন। সবাই জানি সমস্যা, রেলের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও হচ্ছে; কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। সহজডটকমকে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়ে টিকিট প্রাপ্তিকে আরও কঠিন করে তোলা হয়েছে। রনি একা হলেও রেলেওয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তাকে শত্রু মনে না করে, তার এই দাবিগুলোকে সামনে রেলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া। বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে রেলকেও আধুনিক, সেবামুখী ও লাভজনক করতে হবে।

মাঝে মধ্যেই আমরা খবর পাই, ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু বাংলাদেশের গোটা রেল ব্যবস্থাপনাই অনেক আগে লাইনচ্যুত হয়ে আছে। আমাদের সবার উচিত লাইনচ্যুত রেলকে লাইনে তুলতে মহিউদ্দিন রনির একার সংগ্রামে সঙ্গ দেওয়া। তাতে সবার লাভ, রেলওয়ের লাভ, দেশের লাভ, দশের লাভ। - লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com