বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি
প্রকাশের সময় : 2022-08-17 16:26:27 | প্রকাশক : Administration
দীপক চৌধুরী: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বিপদগামী একদল সেনাকর্মকর্তার নির্মম বুলেটে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাহাদাতবরণ করেন তিনি।
পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার জনগণকে পাকিস্তানি শাসন- শোষণ, অবজ্ঞা-অবহেলা, বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ১৩ বছর জেলে কাটিয়েছেন। জীবনের হুমকি নিয়ে লড়াই করেছেন। বারবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেল থেকে মুক্ত হয়ে আবারো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছেন। জনসভা করেছেন, দাবি আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। এরপর আমরা তাঁর ডাকে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতির পুত্র শেখ কামালকে ঘাতকরা হত্যা করলো। সেই কালরাতে প্রথম হত্যার শিকার হন শেখ কামাল। পৃথিবীর ইতিহাসে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এক নজিরবিহীন ঘটনা। অথচ সেই কুখ্যাত ঘাতকদের রক্ষা করেছেন জিয়াউর রহমান। খুনিদের বিরুদ্ধে যাতে বিচার করা না যায় এজন্যে ‘ইনডেমনিটি’আইন পাস করেছেন জিয়া। ছিঃ এমন জঘন্য ঘটনা আর কোথায় আছে?
এটা আজ পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি একাধারে দেশের সেরা ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়াবিদ ছিলেন, তেমনি ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি মনেপ্রাণে দেশীয় সংস্কৃতি লালন এবং চর্চা করতেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশ স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই তিনি আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের অধীন তিনি হকি, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস দলও গঠন করেন। তিনি খেলোয়াড়দেরকে আধুনিক পোশাক এবং ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহ করতেন। খেলাধুলায় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তিনি স্বাধীন দেশে প্রথম ব্রিটিশ কোচ নিয়োগ করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি খেলোয়াড়দের স্বাবলম্বী করার নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তাঁদের অবসর ভাতা প্রদানেরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়াড় কল্যাণ তহবিল’গঠন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা, সংগীত, অভিনয়, বির্তক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি সংস্কৃতি জগতে অমর হয়ে আছেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, নির্লোভ, নিরহংকারী ও সদালাপী। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন অতি সাধারণ হয়ে। তিনি যেকোনো মানুষের প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট এক ঘোর অমানিশায় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের দল জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই কালরাতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে খুনিরা প্রথমেই হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে। কাপুরুষ হন্তারকদের দল শারীরিকভাবে শেখ কামালকে হত্যা করলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অভিযাত্রায় তাঁর প্রদর্শিত পথ, আদর্শ এবং দিক-নির্দেশনা আজও এক অনুকরণীয় মডেল। ‘তিনি আমাদের মাঝে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে সদাজাগ্রত আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি এ অনার্স পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের শুধু প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে সুপরিচিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তাঁর। কমিশনন্ড লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণের সময় তিনি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন। পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, এখন যারা গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি করেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যেসব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটিয়েছেন এতে ইতিহাসে তারা স্বৈরাচার হয়েই থাকবেন। ১৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনার পর ‘বেনিফিসিয়ারীরা’আজ রাজনীতি করছেন, উচ্চঃস্বরে বক্তৃতা দিচ্ছেন। অথচ তাদের দলের জন্মদাতা জিয়াউর রহমান এই নিমর্মহত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করেছিলেন আইন করে। ছিঃ এতোবড় নিষ্ঠুরতা?
জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া মানুষের জন্য একটিও গণমুখী কাজ করেননি। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দিয়ে রাজনৈতিক দল কুখ্যাত ‘ফ্রিডম পার্টি’গঠন করান। আর খালেদা জিয়া স্বামী জিয়াউর রহমানের পথ ধরে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়েছেন। - (সংকলিত) লেখক: উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি ও সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক