সেদিন কোথায় ছিলেন মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা?
প্রকাশের সময় : 2022-09-15 11:59:39 | প্রকাশক : Administration
বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শব্দ। মানবাধিকারের ব্যবসাও এখন জমজমাট। মানবাধিকার নিয়ে নানা রকম দোকানপাট খোলা হচ্ছে। মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও বেড়েছে। যার ফলে মানবাধিকার পণ্যের প্রসার এখন জমজমাট। আর বাংলাদেশে কিছু মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকারের হতশ্রী অবস্থা প্রচারণা করছেন। আর এই প্রচারণার কারণে ডলার সংকটের এই দেশে বেশকিছু ডলার আসছে । তবে তারা সেই ডলার দেশে রাখছেন না বিদেশে রাখছেন, সেটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন। তবে তাদের যে পকেট স্ফীত হচ্ছে এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা প্রতিদিন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আর্তনাদ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। শোকের মাস আগস্টে জাতীয় শোক দিবসেই এই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে মিশেল বৈঠক করেন পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সেই বৈঠকে মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পসার সাজিয়ে বসেন মিশেলের সামনে এবং বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কথা বলেছিলেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতির বিবেকেরা কথা বলবেন, এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যদি শুধুমাত্র একটি সরকার ক্ষমতায় এলেই মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হোন, অন্য সময় যদি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম একটি বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছিলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ১৫ আগস্টের ঘটনা আর একুশে আগস্টের ঘটনা ভয়াবহতার দিক থেকে একই রকম। একুশে আগস্টের ঘটনা ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রীয় মদদে এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে। সেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর কোথায় ছিল আমাদের সুশীল সমাজ? কোথায় ছিলেন মানবাধিকার এই ফেরিওয়ালারা? জাতীয় শোক দিবসের দিন ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কান্নাকাটি করেছেন। কিন্তু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার একটি বিবৃতিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ওই দিন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘকে। কিন্তু ২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটলো তখন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে কোনো উৎকণ্ঠিত হতে দেখা যায়নি, এমনকি তাকে এই নিয়ে নিন্দা জানাতে শোনা যায়নি। কোনো কোনো সাংবাদিক যখন তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলো তখন তিনি বলেছিলেন, আমি ভাই পরিবেশ নিয়ে কাজ করি। এটি আমার দেখার বিষয় নয়। সেই পরিবেশ নিয়ে কাজ করা রিজওয়ানা হাসান জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করলেন। তার মানে কি তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
শাহিন আনাম মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নিয়ে নানা রকম অভিযোগ শোনা যায় এবং বিশেষ করে এনজিওদের অর্থ বরাদ্দে নয়-ছয় নিয়ে বহু কেলেঙ্কারি এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় করেছে। কিন্তু যেহেতু শাহিন আনামের স্বামী ক্ষমতাবান, ডেইলি স্টার সম্পাদক, কাজেই তারা আইনের ঊর্ধ্বে। তাদেরকে কেউ কোনো প্রশ্নও করতে পারবে না। সেই শাহিন আনাম ইন্টারকন্টিনেন্টাল বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা বলেছেন। কিন্তু ২১আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর শাহিন আনাম কোথায় ছিলেন? তিনি তো একটি বিবৃতিও পর্যন্ত দেননি।
নিজেকে একজন অর্থনীতিবিদ দাবি করেন, কিন্তু তার লেখালেখির চর্চা খুব একটা দেখা যায় না। খুব বড় গবেষণা করেছেন অর্থনীতি বিষয়ে এমন কথাও আমরা শুনেনি। কিন্তু তিনি একজন কথক অর্থনীতিবিদ হিসেবে বরং পরিচিত। যেকোনো বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলাই তার প্রধান আনন্দ এবং প্রধান পেশা। ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের কথা বলছি। তিনি এখন মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা হয়ে গেছেন। এতদিন ছিলেন অর্থনীতিবিদ কিন্তু যেহেতু সরকারকে চাপে ফেলার জন্য মানবাধিকার ইস্যুটা এখন জমজমাট, সেজন্য তিনি মানবাধিকার নিয়েও ইদানীং কথাবার্তা বলেন এবং ইন্টারকন্টিনেন্টালের ওই বৈঠকে তিনি হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু এই দেবপ্রিয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর কোথায় ছিলেন? তাকেও আমরা কোনো বিবৃতি দিতে দেখিনি।
তাহলে কি আমাদের মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা পক্ষপাতদুষ্ট? তারা শুধু আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাটাই দেখেন? তারা বিএনপি-জামাতের আমলে যে ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটেছিলো সে ব্যাপারে তাদের কোনো রকম উদ্বেগ নেই, উৎকণ্ঠা নেই? এই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পর নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন। - সূত্র: অনলআইন