বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ নেই

প্রকাশের সময় : 2022-09-15 12:16:12 | প্রকাশক : Administration
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ নেই

খালিদ আহমেদ: যেসব দেশে মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে, সে বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান মিশেল ব্যাশেলের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সদ্য বাংলাদেশ সফর করা  মিশেলের ওই প্রতিবেদনে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশিত হয়নি। আগামী ৩১ আগস্ট মিশেলের জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে গুম-খুনের মতো বিশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেসব দেশে বিরাজমান, সে বিষয়টিও উল্লেখিত হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আসেনি।

মিশেলের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে প্রকান্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব ক্ষেত্রে নানা যুগান্তকারী অর্জনকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার টিমের বাংলাদেশ সফরকালে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানবাধিকার বিষয়ে যে সকল তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলো তারা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই প্রতিবেদনে সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে। 

মিশেলের এ প্রতিবেদনে মূলত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে গেল চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন ফুঁটে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশসহ যেসব দেশে মিশেল সফর করেছেন তার একটা তালিকা উল্লেখ করেছেন। দেশগুলো হল- বুরকিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে মিশেল উল্লেখ করেন, তার এ মেয়াদকালে পৃথিবীর মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। বৈশ্বিক কোভিড মহামারির অপরিসীম নেতিবাচক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট এ তিনটিই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিন ইস্যু।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড প্রথা বাতিল করার ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ, অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতার তথ্য উঠে আসে প্রতিবেদনে। কোন কোন দেশে কি কি অগ্রগতি হয়েছে, সেকথাও এসেছে এখানে।

নিজের দেশে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময়ই নানা দাবী, সঙ্কট ও সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সব সঙ্কটই অতিক্রম করা যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার সম্পর্কিত এডভোকেসি অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল আনে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলোম্বিয়ায় একটি মানবাধিকার কেন্দ্রিক ড্রাগ পলিসি কীভাবে সেখানকার চলমান সামাজিক-রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে পারে, সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

মিশেল তার চার বছরের মেয়াদকালে যেসব দেশে গিয়েছেন, যেসব মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছেন সে বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মীদের সাহসের প্রশংসা করা হয়। মেক্সিকোর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মায়েদের শক্ত মনোবলের কথা বলা হয়। রিপাবলিক  অফ কঙ্গোর যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিং এর কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলা হয়। আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে আভ্যন্তরীণ বসতিহারা (ইন্টারনালী ডিসপ্লেসড) মানুষদের কথা উল্লেখ করা হয়। নাইজারের গ্রামাঞ্চলে মানবাধিকার রক্ষায় কমিউনিটি লিডারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়। ভেনিজুয়েলায় ২০১৭ সালে প্রতিবাদ সমাবেশে এক তরুণের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনার গ্রেব্রেনিসসা শহরে ২৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক ছেলের কথা উঠে আসে এই রিপোর্টে।

প্রতিবেদনে উত্তর ইউথোপিয়ায় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ ইয়েমেন, সিরিয়া, আফ্রিকার সাহেল এলাকা এবং হাইতিতে মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কথা বিশদভাবে উঠে আসে প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তার স্বপ্ন ভঙ্গের কথা। রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে তাকে নিজের দেশ ছাড়তে হলো।

মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। রিপোর্টে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দায়ী করা হয়। রিপোর্টে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে মানবতা বিরোধী অপরাধ বন্ধের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানানো হয়।

প্রতিবেদনে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে সেটি উল্লেখ করা হয়। ইউক্রেনের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ করা হয়। - সংগৃহিত

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৮৯৬০৫৭৯৯৯
Email: simecnews@gmail.com