সঙ্কটে আশার আলো
প্রকাশের সময় : 2022-09-15 12:17:10 | প্রকাশক : Administration
রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৩৪ হাজার ৪শ’জনের যে নাগরিক তালিকা দেয়া হয়েছে সেটি যাচাই-বাছাই করে এ তালিকা থেকেই প্রত্যাবাসন শুরু করবে মিয়ানমার। আর আগামী মাসেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এ কথা জানান।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার করেছে ঢাকার ১৪ দূতাবাস ও হাইকমিশন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে এ দেশে আসা রোহিঙ্গা সঙ্কটের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো এ অঙ্গীকার করে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, ব্রিটিশ হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, ডেনমার্কের দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল, ফ্রান্সের দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস, ইতালির দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, নরওয়ের দূতাবাস, স্পেনের দূতাবাস, সুইডেনের দূতাবাস, সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।
দেশটির রাখাইন রাজ্যে নির্মম-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। ওই সময় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়। অবশ্য এর আগে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এত সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে মিয়ানমার সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বারবার তাগিদ দিয়ে এলেও আশ্বাস ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মূলত নেপিডোর টালবাহানার কারণেই থমকে আছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।
এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, গুতেরেস রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত নিয়ে অস্পষ্ট আকাঙ্খা উল্লেখ করেছেন। তারা বেশিরভাগ নাগরিকত্বসহ অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত। গুতেরেসের মুখপাত্র আরও বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত সব ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যদিও সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মিয়ানমারের মানবিক, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্টিফেন দুজারিখ।
এ ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং রাখাইনে প্রত্যাবাসন সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘ, আসিয়ান ও মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তবে, এক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকাই মুখ্য বলে তিনি স্বীকার করেন।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের শরণার্থী বিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয়ক ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও মিয়ানমারে। রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন ও নৃশংসতা হয়েছে, তার স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, জাপান রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাপান সমর্থন করে। - সূত্র: অনলাইন