মরিয়ম মান্নান কেন মানুষকে ইমোশনালী দুর্বল করেছিলেন?

প্রকাশের সময় : 2022-10-13 15:50:04 | প্রকাশক : Administration
মরিয়ম মান্নান কেন মানুষকে ইমোশনালী দুর্বল করেছিলেন?

গোলাম সারোয়ার: অনেকের অনেক উস্কানির পরেও আমি মরিয়ম মান্নান নামের মেয়েটির মায়ের কথিত নিখোঁজ হওয়া নিয়ে লিখিনি। অনেকে বলেছেন, তার মাকে সরকার মেরে ফেলছে, অনেকে বলেছেন পুলিশ গুম করে ফেলছে। আমি ঝিম মেরে ছিলাম। কারণ আমি জানি কে কে হিটখোর। বিশেষ করে মরিয়মদের মতোদের কথা বিশ্বাস করতে ক্রশচেক করতে হয়। স্যরি টু সে। তাই আমি সময় নিচ্ছিলাম। তাছাড়া আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে যারা আমাকে কিছু ইঙ্গিতও দেয়। আমাদের পুলিশের ইন্টিলেকচুয়াল ক্ষমতা যে কতো বেশি তা অনেকে জানেন না। আমার ধারণা বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে এফবিআই থেকে ভালো করার ক্ষমতা রাখে নিগূঢ় সত্য বের করার ব্যাপারে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির দেশে এতো কম সুযোগ-সুবিধা, টেকনোলজি আর জনবল নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশের পুলিশের এতো ক্ষমতা নেই, এতো ভালো করার। আমরা সাধারণত পুলিশকে ক্রেডিট দিতে চাই না। কিন্তু ক্রেডিট দেওয়ার মতো বহু কাজ এদেশে পুলিশই করেছে। পুলিশের যা কিছু বদনাম তার কারণ আমরা সিভিলিয়ানরা। মানে রাজনীতিই অনেক সময় তাঁদের বিচ্যুতির কারণ হয়। যাই হোক, পুলিশের বন্দনাগীতি এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে জানলাম, মরিয়ম মান্নান নামের ওই মেয়েটির মাকে জীবিত সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ উনাকে সম্ভবত পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত কোনো কারণে লুকিয়ে রেখেছিলো স্বজনরা। কিন্তু স্মরণ রাখুন, এই মেয়েটিই খুব নিশ্চিত করে তার মায়ের ওই কথিত লাশের শনাক্ত করেছিলো। সামাজিক মাধ্যমে বারবার তিনি নিশ্চিত করেছিলেন, ওইটিই তার মা। সে ইমোশনালী মানুষকে দুর্বল করেছিলো এই বলে যে, সন্তান কখনো মাকে চিনতে ভুল করে না।

এবার আসি নিজের কথাতে। নিজের সোসাইটির কথাতে। দেশে কোনো একটি ঘটনা ঘটলেই কেউ ঘটনাটির সঠিক তদন্তের জন্যে এক মিনিটও সময় দিতে চায় না। সাথে সাথে প্রতিবাদ চায়। শুধু তাই নয়, পরিচিত সবারে দিয়ে প্রতিবাদ করাতেই হবে, এমন অবস্থা। প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেটাতো হতে হবে যৌক্তিক সময় নিয়ে। মাথা খাটিয়ে। কিন্তু না সেটারও ফুরসত নেই। এই ঘটনার পর আমাকে অনেকে ইনসিস্ট করতে ছিলো আমি যেন এ ব্যাপারে লিখি। আমি সময় নিচ্ছিলাম আগেই বলেছি। যেটা বলা হয়নি সেটা হলো, কেন লিখিনি তা নিয়ে অনেকে আমাকে অনেক খোটা দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, আমি নাকি সরকারের দালাল। আমি বুঝলাম না একটি মেয়ের মাকে গুম করে সরকারের লাভ কী?

একজন তো বলেই বসলেন, দেশে এত বড় একটি ঘটনা ঘটলো আপনার খবর নেই। আপনি আছেন রাশিয়া-ইউক্রেন আর ইরানের বিপ্লব নিয়ে। তিনি একজন ভার্সিটির শিক্ষক। উনাকে তো আর উপেক্ষা করা যায় না। আমি বললাম; দেখেন, আমি যে সংবাদ সংস্থার সাথে কাজ করি তারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক খবরগুলো নিয়ে যেন কাজ করি। সেগুলো রিসার্চ করে আমি যা পাই তার উপর নির্ভর করে আমি রিপোর্ট জমা দিই । এটাই আমার কাজ। সে কাজ করতে গিয়ে যে জিস্টটা আমার ভিতরে আসে তার অতি সূক্ষ্ম কোনো জিস্ট আমি আমার মতো করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করি। সেগুলো আমি এমন ভাবে করি না যা আমার প্রফেশনাল কাজের শপথ ভঙ্গ করে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমি সংবাদ উপস্থাপন করি মজা করে। কিছু কিছু সিরিয়াস লিখা আমি শিখি নিজের মতামত দিয়ে। সেখানে সংবাদ সংস্থার কোনো স্বার্থকে হানি না করে। তিনি আমার এতবড় ব্যাখ্যাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন। আমি নিজেকে সংযত করলাম। এরকম আরো অনেকে অনেক ইনসিস্ট করলো। আরেকজনের কথা বলার উৎসাহ বোধ করছি। এই লোক আমার নিজের জেলার। থাকেন ব্রিটেনে। কোনো একটি ঘটনা ঘটলেই আমাকে অনেক নরমভাবে সে ব্যাপারে লিখতে বলেন। শুধু বলেন না, তিনি আমার পিছনে লেগেই থাকেন। এই ঘটনার পরে থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে লেগেই রইলেন। অতি নরমভাবে আবদার রাখবেন, ভাই এখনো লিখলেন না। একটি মেয়ের মায়ের লাশ পাওয়া গেছে। আপনার এখনো মন কাঁদেনি। তিনি এমনভাবে ইনসিস্ট করতে থাকেন যেন আমি লিখলেই ওই লাশ উঠে দাঁড়িয়ে যাবেন। আমি বললাম, আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ। আমি লিখলে পৃথিবীর কী এমন উপকার হবে? কি এমন পরিবর্তন হবে? আমার মতো এরকম এক লাখ লোক লিখলেই কি অঘটন কিছু একটা ঘটে যাবে?

তিনি তবুও থামেন না। আমি জানি তিনি কে? আমি বহু আগে থেকে জানি তারা কারা? আমি জানি তারা কি চান? কেন তারা শুধু একধরনের ব্যাপারে লিখতে জোরাজুরি করেন? কেন সরকারের কোনো প্রশংসা শুনলে আমাদের দালাল মনে হয়। কেন দেশের ভালো দেখলে তারা অন্য একটি ঘটনা সামনে নিয়ে আসে যেন প্রশংসা বেশিদিন করা না যায়। এসব জেনেও তাদের আমাদের সহ্য করতে হয়। যেহেতু আমাদের সমাজে বসবাস করতে হয়। তবে ওই লন্ডনী ভাইটিকে আমি সহ্য করতে না পেরে সেদিন ব্লক মারলাম। তিনি এরপর আমাকে মোবাইলে ফোন দিতে শুরু করলেন। বললেন, আপনি আমাকে কেন ব্লক দিলেন? আমি আপনার সাথে কি এমন করেছি? আমি এড়িয়ে গিয়েও যেতে পারি না।

আচ্ছা উনারা কেন এত সিরিয়াস? ফেজবুকে    কারো সাথে থাকা কি পাবলিক সার্ভিস কমিশনে একটি চাকরি পাওয়ার মতো ঘটনা? না তা নয়। তবুও তারা কেন এমন করেন? করেন, কারণ আছে। তাদের কাজ বন্টন আছে। তাদের এক একজনকে একেকজনের পিছনে নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা ছায়ার মতো আপনাকে অনুসরণ করবেন। এরা স্বউদ্যোগেই এটা করে। কারণ তারা দেশপ্রেমের ঊর্ধ্বে ইজমের দাসত্ব করে। তারা অবিরাম কাজ করে যায় যুগের পর যুগ। কারণ তাদের একটি মহাপরিকল্পনা আছে। যে পরিকল্পনার পিছনে তারা জানমাল, মেধা, প্রজ্ঞা সবই বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ। সে তুলনায় সরকারগুলো এজেন্টদের তেমন গুরুত্ব দেয় না। তবুও মানুষ সরকারগুলোর পক্ষেই থাকে, মানে দেশের পক্ষেই থাকে। কেন থাকে? মানুষের ভিতরে এক বিস্ময়কর সর্বগ্রাসী দেশপ্রেম থাকে। সে দেশপ্রেমই তাকে লসের ব্যবসাতে স্থির রাখে বহু লাভের লোভের প্রলোভনের ব্যবসার হাতছানি থেকে। - লেখক ও সাংবাদিক

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: সরদার মোঃ শাহীন
উপদেষ্টা সম্পাদক: রফিকুল ইসলাম সুজন
বার্তা সম্পাদক: ফোয়ারা ইয়াছমিন
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আবু মুসা
সহ: সম্পাদক: মোঃ শামছুজ্জামান

প্রকাশক কর্তৃক সিমেক ফাউন্ডেশন এর পক্ষে
বিএস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড,
ওয়ারী, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০ হতে প্রকাশিত।

বানিজ্যিক অফিস: ৫৫, শোনিম টাওয়ার,
শাহ মখ্দুম এ্যাভিনিউ, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
বার্তা বিভাগ: বাড়ি # ৩৩, রোড # ১৫, সেক্টর # ১২, উত্তরা, ঢাকা।
ফোন: ০১৯১২৫২২০১৭, ৮৮০-২-৭৯১২৯২১
Email: simecnews@gmail.com